কলা আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। বর্তমানে এই রমজানে এর দামও অনেক। আমাদের দেশে সারাবছরই কলা পাওয়া যায়। খাবার জন্য কাঁচা কলা এবং পাকা কলা খুবই উপকারি। কলার চারা একবার রোপণ করলে ২/৩ মৌসুম চলে যায়। তাছাড়া পুষ্টিকর ফল হিসাবে আমাদের দেশে কলার চাহিদাও অনেক বেশি।
কলার পুষ্টিগুণ:
কাঁচা ও পাকা কলায় আমিষ, শর্করা, চর্বি, খণিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ভিটামিন সি রয়েছে।
ভেষজ গুণ:
পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং কলার থোড় বা মোচা ডায়াবেটিস, আমাশয়, আলসার নিরাময়ে উপকারি।
উপযুক্ত মাটি:
প্রায় সব ধরনের জমি বা মাটিতে কলার চাষ করা যায়। তবে উর্বর দোআঁশ মাটি ও পানি জমে না এমন উঁচু জমি কলা চাষের জন্য উত্তম।
জাত পরিচিতি:
আমাদের দেশে অনেক প্রকার কলার জাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-অমৃত সাগর, সবরী, চাঁপা, মেহের সাগর, বিচিকলা, কাঁচকলা বা আনাজি কলা ইত্যাদি।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ:
পর্যাপ্ত রস থাকলে প্রায় সব ধরনের জমিতে কলার চাষ করা যায়। কলা চাষের জন্য জমি ভালভাবে গভীর করে ৩/৫ বার চাষ দিতে হবে। দুই মিটার দূরে দূরে ২ ফুট গভীর করে গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।
রোপণের সময়:
কলার চারা বছরে তিন মৌসুমে রোপণ করা যায়-আশ্বিন-কার্তিক, মাঘ-ফাল্গুন এবং চৈত্র-বৈশাখ।
চারা নির্বাচন:
কলার চারা বা সাকার দু´রকমের। অসি চারা ও পানি চারা। অসি চারার পাতা চিকন, গোড়ার দিক মোটা ও সবল। পানি চারার পাতা চওড়া, কাণ্ড চিকন ও দুর্বল। তবে এ চারার মধ্যে অসি চারা রোপণ করাই উত্তম।
সার ব্যবস্থাপনা:
প্রতি গর্তে গোবর ২০ কেজি, টিএসপি সার ৪০০ গ্রাম, ৩০০ গ্রাম এমওপি সার এবং ইউরিয়া সার ৬৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। সারের ৫০ ভাগ গোবর জমি তৈরির সময় এবং বাকি ৫০ভাগ গর্তে দিতে হবে। এ সময় অর্ধেক টিএসপি গর্তে প্রয়োগ করা দরকার। রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ২৫ ভাগ ইউরিয়া, ৫০ ভাগ এমওপি এবং বাকি টিএসপি জমিতে ছিটিয়ে ভালভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই থেকে আড়াই মাস পর গাছপ্রতি বাকি ৫০ ভাগ ইউরিয়া ও ৫০ ভাগ এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ফুল আসার সময় অবশিষ্ট ২৫ ভাগ ইউরিয়া জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:
চারা রোপণের পর মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে এবং শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর সেচ দিতে হবে। তাছাড়া গাছের গোড়া ও নালার আগাছা সব সময় পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। মোচা আসার আগ পর্যন্ত গাছের গোড়ায় কোন তেউড় রাখা উচিত নয়।
সাথী ফসল:
চারা রোপণের প্রথম ৪/৫ মাস বলতে গেলে জমি ফাঁকাই থাকে। যদি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চারা রোপণ করা হয়, তবে কলাবাগানের মধ্যে আন্তঃফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া, শসা ও বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করা যায়।
কলার রোগ ও প্রতিরোধ:
সাধারণত কলাতে বিটল পোকা, পানামা রোগ, বানচিটপ ভাইরাস ও সিগাটোকা রোগ আক্রমণ করে থাকে। বিটল পোকায় আক্রান্ত হলে কলা সাধারণত কালো কালো দাগযুক্ত হয়। প্রতিরোধের জন্য ম্যালথিয়ন অথবা লিবাসিস ৫০ ইসিসহ সেভিন ৮৫ ডব্লিউপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। পানামা রোগে সাধারণত কলাগাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাছ লম্বালম্বি ফেটে যায়। এ রোগের প্রতিরোধে গাছ উপড়ে ফেলা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বাঞ্চিটপ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কলার পাতা আকারে ছোট ও অপ্রশস্ত হয়। এটি দমনের জন্য সুমিথিয়ন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সিগাটোগায় আক্রান্ত হলে পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। এক সময় এ দাগগুলো বড় ও বাদামি রং ধারণ করে। এ অবস্থা দেখা দিলে আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়ে ফেলতে হবে এবং টিল্ট-২৫০ ইসি অথবা ব্যাভিস্টিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তাছাড়া কলার ব্যাগিং করলে বিভিন্ন ধরনের পোকা ও রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪মে২০