কলা চাষ করে ভাগ্য বদল করছেন জয়পুরহাটের চাষিরা

126

’কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’। খনার ওই বচনটি কাজে লাগিয়ে কলা চাষ করে ভাগ্য বদল করছেন জয়পুরহাটের কলা চাষিরা। রাজধানী ঢাকা , চট্রগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ভৈরব সহ দেশের ৩৫ জেলায় যাচ্ছে জয়পুরহাটের কলা।
কলা চাষিদের পরিবারে কেবল ভাত কাপড়ের ব্যবস্থাই নয়। পরিবারের অন্যান্য ব্যয়ের সংস্থানও হয়েছে এ কলা চাষ করে। আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় জেলায় বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলার চাষ। জয়পুরহাট জেলার প্রধান অর্থকরি ফসল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ কলা। জেলায় বিশেষ করে জামালগঞ্জ ও ভাদসা এলাকার অনেক পরিবার কেবল কলা চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানান যায়, অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে অনেক বেশী লাভ হয় কলা চাষে। বিশেষ করে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জে ও ভাদসা ইউপি ভবনের সামনে দূর্গাদহ বাজার এলাকায় কলার বিস্ময়কর বাজার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এখন কলার চাষও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জয়পুরহাটে। তেমন পরিচর্যা ছাড়ায় ২/৩ ফুট লম্বা কলা গাছের চারা লাগানোর অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। সাধারনত বৈশাখ মাসে কলার চারা রোপণ করলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে কলা পাওয়া শুরু হয়। যেসব জমিতে বর্ষার পানি সাধারণত এক সপ্তাহের বেশি থাকে না সে সকল জমিতে কলার চাষ ভাল হয়। কৃষকরা জানান, একবিঘা জমিতে কলার জাত ভেদে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ কলার চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। যতœ সহকারে কলা চাষ করলে একটি গাছ থেকে ২ থেকে আড়াই মণ কলা পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করতে ১৫/২০ হাজার টাকা খরচ পড়লেও প্রতি বিঘা জমি থেকে কলা বিক্রি হয় দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা। যা অন্য কোন ফসলে সম্ভব নয়। কলার জমিতে তেমন লেবার বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। ফলে উৎপাদন খরচ খুবই কম।
স্থানিয় কৃষি বিভাগ জানায়, জয়পুরহাট জেলায় এবার ৮শ ৫৫ হেক্টর জমিতে এবার কলার চাষ হয়েছে। এতে কলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। জামালগঞ্জ এলাকার মাতাপুর গ্রামের কলা চাষী আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়েছে বলে জানান তিনি। দুর্গাদহ এলাকার কলাচাষি দুদু ময়িা, চিত্ত রঞ্জন বলেন কলা বিক্রিতে কোন ঝামেলা হয় না। পাইকাররা জমি থেকেই কলা কেটে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও জামালগঞ্জে ও ভাদসা ইউপি ভবনের সামনে দূর্গাদহ বাজারে কলার বিশাল হাট বসে প্রত্যেক দিন সকালে ৬০/৬৫ জন আড়ৎদার কলা কিনে ট্রাকে লোড দেন। প্রতি কাইন ( স্থানিয় নাম ঘাউর) বিক্রি হচ্ছে চাপা কলা ৩০০-৩৫০ টাকা, সবরি কলা ৫৫০-৬৫০ টাকা, সাগর ও রঙ্গিন মেহের সাগর কলা প্রতি কাইন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। প্রায় ৫ শতাধিক লোক প্রতিদিন কলা কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত থাকেন। প্রতিদিন কোটি টাকার কলা কেনা বেচা হয়ে থাকে বলে জানান স্থানিয় কলা ব্যবসায়ীরা। জেলা শহরের গুলশান চৌ মোড়ে ছোট আকারে পাইকারী কলার হাট বসে। জয়পুরহাটের কলা উন্নত মানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট ও চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর সহ ৩৫ জেলায় জয়পুরহাটের কলার বড় মার্কেট বলে জানান ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম, বাবু, তাব্বা ও মিজানুর রহমান। বর্তমানে অফ সিজন তার পরেও জয়পুরহাট থেকে প্রতিদিন গড়ে বর্তমানে ৪/৫ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান এস এ ট্রেডার্সের মালিক ও বিশিষ্ট্য কলা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। জয়পুরহাটে উৎপাদিত কলার মধ্যে রয়েছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ওষুধী কলা হিসেবে পরিচিত চাম্পা কলা, সবরি কলা , রঙ্গিন মেহের সাগর ও সাগর কলা। বর্তমানে জয়পুরহাটের হাটবাজারে প্রকার ভেদে বা সাইজ অনুযায়ী সবরি কলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হালি এবং চাম্পা ও সাগর কলা ২০ থেকে ২৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। কলা চাষ বেশ লাভজনক ফসল। জেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার কলা চাষের সঙ্গে জড়িত। কলা চাষ করে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ভাগ্য বদল করছেন জয়পুরহাটের কলা চাষিরা। কলা চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে বলে জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন।