ভোলা : জেলায় মৎস্য চাষের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কাঁকড়ার চাষ। সাদা সোনা গলদা চিংড়ির বাজার দখল করতে চরফ্যাশন উপজেলায় চলছে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ। কাঁকড়া চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন এখানকার অনেক চাষি।
কাঁকড়া চাষ, শিকার ও বিক্রির করে জীবিকা নির্বাহ করছে অন্তত কয়েক হাজার মানুষ। এসব কাঁকড়া দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। শুধুমাত্র কাঁকড়া চাষ ও আহরণে বহু পরিবার তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।
জেলার দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গোপসাগরের মোহনায় চরফ্যাশন উপজেলার চরকচ্ছপিয়া, চরমন্তাজ, চরপাতিলা, চরদাঁতভাঙ্গা, কালকিনি, চরমানিকা, চরনিজাম, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচরসহ মনপুরা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান রয়েছে। এসকল এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে কয়েক শত ছোট-বড় খাল। সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় লবণাক্ত পানির সুবাদে এ সমস্ত এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া। বড় আকারের কাঁকড়া খাল থেকে ধরে বিক্রি করা হলেও ছোট কাঁকড়াগুলো পুকুর বা হ্যাচারিতে চাষ করছেন অনেক চাষি।
সরেজমিনে কাঁকড়া চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায় পুকুরে জাল দিয়ে হ্যাচারি তৈরি করে কাঁকড়া চাষ করা হয়। লবণাক্ত পানির কারণে কাঁকড়া চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া রোগ বালাইও কম হয়। কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় চাষিরাও সারাদিন কাঁকড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন পুকুর ও হ্যাচারিতে।
চর কুকরি এলাকার কাঁকড়া চাষি ফিরোজ মেম্বার জানান, তিনি ২০১৩ সালে এফডিবি সংস্থার সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে পুকুরে নেটজাল দিয়ে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন। মাত্র কয়েক মাস পর তিনি কাঁকড়া বিক্রি করে পুঁজির চেয়ে কয়েকগুণ টাকা আয় করেন। তখন থেকে তিনি কাঁকড়া চাষকে প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ফিরোজ মেম্বারের মতো একই এলাকার সবুজ, সাত্তার, বাবুল মুন্সি, সিরাজ হালাদারসহ শতাধিক চাষি কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের দেখাদেখি অনেকে এখন এ পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। কাঁকড়া শিকার করে অনেক বেকার যুবক অর্থ উপার্জন শুরু করেছে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক পরিবার।
কাঁকড়া শিকারী ইয়াছিন জানান, আষাঢ়, শ্রবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এ চার মাস অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি কাঁকড়া পাওয়া যায়। তখন দামও একটু কম থাকে। বর্তমানে কাঁকড়া কম পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি। শিকারির সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। প্রতিদিন যে কাঁকড়া পান তা বিক্রি করে তার সংসার খুব ভালো চলে।
স্থানীয় কাঁকড়া ব্যাবসায়ীরা জানান, ১০০ গ্রাম ওজনের নিচে প্রতিটি কাঁকড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা হারে প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। গ্রেড সাইজ ২০০ গ্রামের ওপরে কাঁকড়া কেজি ৫৫০ টাকা, ৩০০ গ্রাম ওজনের কেজি ৭৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি কাঁকড়া ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়। এসকল কাঁকড়া প্রতিদিন ঢাকার মোকামে পাঠানো হয়।
চর কচ্ছপিয়া ঘাটের কাঁকড়া ব্যবসায়ী সিরাজ জানান, তার আড়তের অধীনে প্রায় শতাধিক কাঁকড়া শিকারী রয়েছে। চাষি ও শিকারিরা কাঁকড়া এনে তার আড়তে বিক্রি করেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকার মোকামের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাঁকড়া কেনেন। এসকল কাঁকড়া প্রতিদিন লঞ্চযোগে ঢাকা পাঠান। সেখান থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ১৮ দেশে এ কাঁকড়া রফতানি করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এসব চাষির উন্নত কারিগরি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা করা হলে কাঁকড়া চাষে মানুষ আরও আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এতে একদিকে যেমন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে অন্যদিকে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো, আহসান হাসিব খান বলেন, “চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কাঁকড়া চাষ করে অনেক চাষি সফল হয়েছেন। কাঁকড়া চাষের উপর সরকারিভাবে প্রকল্প করা হচ্ছে।”
এ প্রকল্পে চাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি জানান। বিএসএস।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন