কাপ্তাই হ্রদ থেকে রেকর্ড পরিমাণ শুল্ক আয় করেছে বিএফডিসি রাঙামাটি কেন্দ্র

19

রেকর্ড পরিমাণ শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে ২০২৩-২৪ মৎস্য অবতরণ মৌসুম সমাপ্ত করেছে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্র রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।

গত ২৫ এপ্রিল-২০২৪ মধ্যরাত পর্যন্ত মোট ১৫ কোটি ৫৬ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯১৭ টাকা শুল্ক আদায় করতে সক্ষম হয়েছে বিএফডিসি রাঙামাটি কেন্দ্র। বিগত বছর সমূহের তুলনায় ৪৫ দিন সময় কম পেলেও শুল্ক আদায়ে এ অর্জন অনন্য। কাপ্তাই হ্রদের মাছের অনুকূল প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে মৎস্য অবতরণের সময়সীমা নির্ধারণ, শুল্ক আদায়ের পদ্ধতিতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণসহ নানা ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনয়ন ও সর্বোপরি এই কেন্দ্রের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে অর্জন সম্ভব হয়েছে।

উল্লেখ্য , ২০১৯-২০২০ অবতরণ মৌসুমে ০৯ মাসে বিএফডিসি রাঙামাটি কেন্দ্র এ যাবতকালে সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অবতরণ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের অধীন চারটি উপকেন্দ্রে মৎস্য অবতরণ ও শুল্ক আদায়ের বর্ণনা নিম্নরূপ :

রাঙামাটি সদর কেন্দ্র ৪৪৭৫.৬৮ মোট অবতরণ টন, শুল্ক আদায় ৯০২.৫৮ লক্ষ টাকা, কাপ্তাই উপকেন্দ্র ২৩৭৭.৭৭ মোট অবতরণ টন, ৪৯১.৯২ ৯০২.৫৮ লক্ষ টাকা, মহালছড়ি উপকেন্দ্র ৪৯৫.৪৩ মোট অবতরণ টন, ১০০.৭৮ লক্ষ টাকা, মারিশ্যা উপকেন্দ্র ২৭৮.৮০ মোট অবতরণ টন, ৬১.২৮ লক্ষ টাকা, সর্বমোট অবতরণ ৭৬২৭.৬৯ টন, আয় ১৫৫৬.৫৬ লক্ষ টাকা।

বিভিন্ন উপকেন্দ্রসমূহে ২০২৩-২৪ অবতরণ মৌসুমে অবতরণকৃত মাছের প্রজাতিভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে, কাপ্তাই হ্রদে চাপিলা, কাচঁকি, কাজুরী, মইল্যা, বাতাসি, শোল, কই, বোয়াল মাছ সমূহের অবতরণ উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। । এছাড়াও চিতল, তেলাপিয়া, কালো টেংরা, গুলশা, বড় আইড়, গজার, ছোট আইড় এর অবতরণ এর পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটা, কালিবাউস, পাবদা, বাইম মাছের উৎপাদন কিছুটা কমেছে। এ সকল কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে এবং অনুসন্ধানের ফলাফল অনুযায়ী এদের উৎপাদন বৃদ্ধির যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে হ্যাচারি ও নার্সারি সম্প্রসারণ, অভয়াশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও ডিমওয়ালা ও মা মাছের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে গুইট্টা নিধনরোধে ও জাঁকজাল নির্মূলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এবং বিএফডিসি, রাঙামাটির যৌথ প্রচেষ্টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ অভিযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জাঁকজাল স্থাপনে মদদদাতা/সহায়তাকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করার কার্যক্রম শেষে তাদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। কাপ্তাই লেকের নাব্যতা ও জলায়তন যথাযথভাবে রক্ষার্থে লেকের সীমানায় প্রতিবন্ধকতা ও বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের মৌলিকত্ব রক্ষায় বিভিন্ন ক্রীক/অংশে অবৈধভাবে বাধঁ নির্মাণ ও জালঘেরার মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি জাঁকজালের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ, বাজারে মাইকিং এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে উব্ধুদ্ধ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাঁকজাল স্থাপনের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে ২৬ টি ইঞ্জিন বোট, ২৪ টি কাঠের বোট, ২৬ টি জাঁক জাল, ০২ টি কেচকি জাল ও ০৮ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার জব্দ করা হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে মা মাছসহ অন্যান্য সকল মাছের জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ, সুষ্ঠু প্রজনন, বিস্তার ও যথাযথ বিচরণের স্বার্থে জেলা প্রশাসন ও বিএফডিসি রাঙামাটি কেন্দ্রের সার্বিক যৌথ তৎপরতা আরোও জোরদার করা হবে বলে জানান কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্র রাঙামাটির ম্যানেজার কমান্ডার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম ভূইঁয়া, (এনডি), বিএন ।