কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদীতে ভেসে উঠছে মাছ

95

কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে সিরাজগঞ্জের ফুলজোড় নদীতে নানা প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভেসে ওঠা মাছ ধরতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ভিড় জমিয়েছেন নদীর দুই পাড়ে। গতকাল শনিবার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ব্রিজ এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলায় পানি দূষিত হয়ে গেছে। এ কারণে ফুলজোড় নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। দুই দিন ধরে এ অবস্থা চলছে।

রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া, মহেশপুর ও চান্দাইকোনা ইউনিয়নের বেড়াবাজুয়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুলজোড় নদীর পানির রং বদলে গেছে। বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে অজস্র মাছ মরে ভেসে উঠছে। এলাকার বিভিন্ন বয়সের শত শত মানুষ এই মাছ ধরছেন।

মাছ ধরতে আসা কৃষি শ্রমিক সোহেল রানা বলেন, বাজারে যাওয়ার সময় দেখি অনেকেই নদীতে ভেসে ওঠা মাছ ধরছে। তাই নেমে পড়লাম।

চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাই গ্রামের সালমান, সেলিম, আল-আমিনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, নদীর পাড়েই বাড়ি আমাদের। নদীতে ভেসে ওঠা মাছ ধরছি। ছোট-বড় নানা ধরনের মাছ ধরতে ভালোই লাগছে। তবে এভাবে কেন মাছ মরে ভেসে উঠছে, তা চিন্তার বিষয়।

স্থানীয় শিক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, নদীর পানি ভালোই ছিল। এই নদীতে নিয়মিত গোসল করত অনেকেই। কিন্তু দুই দিন ধরে দেখছি পানির রং এমনভাবে বদলে গেছে যে এ পানিতে গোসল করতে ভয় লাগে। আজ দেখছি সব ধরনের মাছ মরে ভেসে উঠছে। এভাবে নদীর মাছসহ জলজ প্রাণী ধ্বংস করার নজির আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। দুই দিন ধরে পানি এমনভাবে দূষিত হয়েছে যে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দীপক কুমার কর জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে স্থায়ী প্রতিকারের অনুরোধ জানিয়ে নদীদূষণ, জলজ জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

রায়গঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, উজানের দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্যে নদের মাছসহ জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রায়গঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল পাঠান অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছর ধরে ফুলজোড় নদীর পানি দূষণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যে কারণে কারখানার বর্জ্যে নদীর মাছ মরে যাচ্ছে।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা বলেন, বগুড়া জেলার আওতাধীন হওয়ায় আমরা কারখানাগুলোকে আইনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।