যে সব প্রজাতির মাছ রাক্ষুসে স্বভাবের নয়, খাদ্য নিয়ে প্রতিযোগীতা করেনা, জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরে বাস করে এবং বিভিন্ন স্তরের খাবার গ্রহণ করে এসব গুণাবলীর কয়েক প্রজাতির রুইজাতীয় মাছ একই পুকুরে একত্রে চাষ করাই হল মিশ্রচাষ।আসুন জেনে নিই কার্প জাতীয় মাছ চাষের আধুনিক কৌশল ও পুকুর ব্যবস্থাপনা।
কার্প জাতীয় মাছ
কার্প জাতীয় মাছ বলতে দেশী ও বিদেশী রুই জাতীয় মাছকেই বুঝায়। আমাদের দেশে, দেশী কার্পের মধ্যে কাতলা, রুই, মৃগেল, কালিবাউশ ইত্যাদি এবং বিদেশী কার্পের মধ্যে সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, বিগহেড কার্প, ব্লাক কার্প, কমন কার্প ইত্যাদি অন্যতম।
উপরের স্তরের মাছ
কাতলা, সিলভার কার্প এবং বিগহেড জলাশয়ের উপরের স্তরের খাবার খায়। উপরের স্তরে এসব মাছ সবুজ উদ্ভিদকণা (ফাইটোপ্ল্যাংকটন) এবং প্রাণীকণা (য্যুপ্ল্যাংকটন) খেয়ে থাকে।
মধ্য স্তরের মাছ
রুই মাছ এ স্তরে থাকে এবং ক্ষুদ্র প্রাণীকণা, ক্ষুদ্র কীট, শেঁওলা প্রভৃতি খাবার খায়।
নিম্ন স্তরের মাছ
মৃগেল, কালিবাউশ, মিরর কার্প বা কার্পি্ও, ব্ল্যাক কার্প অধিকাংশ সময়েই জলাশয়ের নিম্নস্তরে বিচরন করে। তলদেশের ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গ, শেঁওলা, শামুক, ঝিনুক, ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণা এদের প্রধান খাবার।
সকল স্তরের মাছ
গ্রাস কার্প ও সরপুঁটি সকল স্তরেই অবস্থান করে। জলজ উদ্ভিদ, নরম ঘাস, শেঁওলা, ক্ষুদি পানা, টোপা পানা, হেলেঞ্চা, ঝাঁঝি ইত্যাদি গ্রাস কার্পের প্রধান খাবার। ক্ষুদি পানা ও টোপা পানা সরপুটির প্রধান খাবার। তাই কোন জলাশয়ের তলদেশে অধিক পরিমাণ আগাছা, ঘাস, হেলেঞ্চা প্রভৃতি জন্মালে গ্রাস কার্প ছেড়ে তা নিয়ন্ত্রন করা যায়।
কার্প জাতীয় মাছ চাষের সুবিধা
১. জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরের খাবার খায়।
২. খাদ্য ও জায়গায় জন্য একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয় না।
৩. এরা রাক্ষুসে স্বভাবের নয়।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
৫. খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে বা দ্রুত বর্ধনশীল।
৬. সহজে পোনা পাওয়া যায়।
৭. স্বল্প মূল্যের সম্পূরক খাদ্য খায়।
৮. খেতে সুস্বাদু এবং বাজারে চাহিদা আছে।
৯. অর্থনৈতিক মূল্য আছে।
১০. কৃত্রিম প্রজনন দ্বারা পোনা উৎপাদন করা যায়।
চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশে ও উপকরণের প্রাপ্যতা, চাষীর আর্থিক অবস্থা এবং চাষীর জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এক এক রকম পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। যেমনঃ
ক. সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ।
খ. আধা-নিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ।
গ. নিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ।
সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ
অল্প ব্যায়ে জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভর যে পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয় তাকে সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ বলে। এ পদ্ধতিতে কম অথবা বেশি ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। পুকুরের রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূর করা হয় না। পুকুরে বাহির থেকে কোনো খাবার ও সার দেয়া হয় না। এ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ও অনেক কম হয়।
আধা-নিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ
বৈজ্ঞানিক নিয়মে পুকুর প্রস্তুত করে, নিয়মিত সার এবং সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে, মধ্যম ঘনত্বে পোনা মজুদ করে মাছ চাষ পদ্ধতির নাম আধা-নিবিড় পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবার যাতে বেশি উৎপাদন হয় তার জন্য সার ব্যবহার করা হয়। পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপন্ন খাবার যাতে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তার জন্য খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে প্রজাতি নির্বাচন করে পুকরে নির্দিষ্ট ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। এসব মাছের প্রাকৃতিক খবারের চাহিদা পূরন না হলে বাহির থেকে চাহিদা মাফিক খাবার দেয়া হয়। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়।
নিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ
এই পদ্ধতিতে অল্প জায়গায়, অল্প সময়ে, অধিক উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সার ব্যবহার করে প্রাকৃতিক খদ্য বৃদ্ধি ও বাহির থেকে উন্নতমানের পরিপূর্ণ সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করে উচ্চতর ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রযুক্তির সর্বাধিক সুযোগ ব্যাবহার করা হয়। তাই অন্য দু’পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি ঘনত্বে পোনা মজুদ ছাড়া ও নিয়মিত পানি বদল ও বায়ু সঞ্চালনের আধুরিক ব্যবস্থা করা হয়।
পুকুরের স্থান নির্বাচন
মাছ চাষের জন্য প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হলো পুকুর। ঠিকমত পুকুর নির্বাচন করা না হলে মাছ চাষে সমস্যা হয়, মাছ ঠিকমত বাড়েনা, মাছ চুরি হতে পারে, পোনা পরিবহনে অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে। লাভজনক চাষ করতে হলে নিচের বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবেঃ
১. পুকুরের মালিকানা নিজস্ব এবং একক হলে ভাল হয়। তবে লীজ পুকুর হলে তার মেয়াদ ৫ বছরের বেশী বা দীর্ঘ মেয়াদী হলে ভাল হয়।
২. পুকুরটি অবশ্যই বন্যামুক্ত হতে হবে।
৩. পুকুরের পানির গভীরতা ২-৩ মিটার হতে হবে।
৪. দো-আঁশ মাটি পুকুরের জন্য সবচেয়ে ভাল।
৫. পুকুরের তলার কাদার পরিমান কম হলে সবচেয়ে ভাল। তবে কোন মতেই ১০-১৫ সেঃমিঃ এর বেশি হবে না।
৬. পুকুরের পারে যেন কোন বড় গাছপালা না থাকে।
৭. পুকুরটি যেন খোলামেলা হয়। পুকুরে যেন প্রচুর আলো-বাতাস লাগে। অর্থাৎ দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা সূর্যালোক যেন পুকুরে পড়ে।
৮. পুকুর ২০-৫০ শতাংশের মধ্যে হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়।
৯. পুকুরের পাড়ের ঢাল ১.৫:২.০ হলে ভাল হয়।
১০. স্থান নির্বাচনের খেয়াল রাখতে হবে খুব সহজেই যেন পোনা পাওয়া যায়।
১১. পুকুর বসত বাড়ির কাছাকাছি হলে ভাল হয়। এতে পুকুরের ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার সুবিধা হয়। মাছ চুরির ভয় থাকে না।
১২. ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিকটে হাট-বাজার থাকলে ভাল হয়।
পুকুর খনন
নতুন পুকুর খনন করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়াদি বিবেচনায় রাখতে হবেঃ
পুকুর খননের সময় পুকুরটি যেন আয়তাকার হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আয়তন ০.৩৩-০.৫০ একর হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা। পুকুরের গভীরতা এমন ভাবে করা দরকার যাতে শুকনা সময়ে ১.৫-২ মিটার পানি থাকে। আমরা আগেই জেনেছি আলো-বাতাস মাছ চাষের জন্য দরকার, কারন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ কণা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে পুকুরের মাছের প্রকৃতিক খাদ্য তৈরি করে। পুকুরে বাতাস চলাচল করলে পানির উপরের স্তরে ঢেউয়ের মাধ্যমে পানিতে অক্সিজেন দ্রবীভূত হয়। তাই পুকুর খননের সময় আলোবাতাসের দিকটা খেয়াল রাখতে হয়। অনেকে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন করেন। এতে পুকুরের পাড় ভেঙে অল্প দিনে পুকুর ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই পুকুর খননের পুর্বে ডিজাইন ও প্ল্যান তৈরি করা দরকার। পুকুর খননের সময় পাড়ের ঢাল ১.৫২ রাখা ভাল। তবে বালি মাটি হলে বা মাটিতে বালির ভাগ বেশি হলে ঢাল ১:৩ করা নিরাপদ হবে। বালি মাটির পুকুরে যদি উপরের মাটি ভাল হয় তাহলে তা সরিয়ে নিয়ে জমা করে নিচের বালু মাটির উপরে তা প্রতিস্থাপন করতে হবে।
পুকুর প্রস্তুত করণ
পুরাতন পুকুর হলে প্রথমে রাক্ষুসে মাছ নিধন করতে হবে। দু’টি পদ্ধতির মাধ্যমে এ কাজটি করা যায়।
মৎস্য নিধন ঔষধ প্রয়োগ অথবা পানি নিষ্কাশন
পুকুর সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত মাছ ধরে ফেলা উত্তম। চাষযোগ্য মাছ থাকলে তা অন্য পুকুরে সরিয়ে ফেলতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পুকুরের তলায় পানি জমে না থাকে। পুকুরের তলায় সামান্য পানিও জমে থাকলে তাতেও অনেক প্রকার রাক্ষুসে মাছ লুকিয়ে থাকতে পারে।
কিন্তু নানাবিধ কারনে পুকুরের পানি নিষ্কাশন সম্ভব না্ও হতে পারে। পুকুর থেকে পানি নিষ্কাশন করা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুনরায় পারি সরবরাহ করার মত পানির উৎস ও ব্যবস্থা থাকে না। তাছাড়া, পুনরায় পানি সরবরাহ করা ব্যয় সাপেক্ষ। তাই পুকুরে ঔষধ প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা ভাল। রোটেনন, চা বীজের খৈল, তামাকের গুড়া ইত্যাদি নানাবিধ ঔষধ দিয়ে পুকুরের রাক্ষুসে মাছ দূর করা যায়।
রোটেনন
প্রখর সূর্যের তাপে রোটেননের কার্যকারিতা বেশী। রোটেননের মাছের উপর বিষ ক্রিয়ার মেয়াদকাল প্রায় ৭ দিন। তবে রোটেনন দিয়ে মারা মাছ খাওয়া যায়।
তামাকের গুড়া
ইহা প্রয়োগে মাছ, শামুক ও ঝিনুক মারা যায় কিন্তু চিংড়ি মরে না। এটি পরে সার হিসেবে কাজ করে। একটি পাত্রে পানির মধ্যে এক রাত (১২-১৫ ঘন্টা) ভিজিয়ে রাখার পর সূর্যালোকিত দিনে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। মাছের উপর বিষ ক্রিয়ার মেয়াদ ৭-১০ দিন।
জাল টানা
পুকুরের পানি নিষ্কাশন এবং ঔষধ প্রয়োগ ব্যয়বহুল। তাই অনেক সময় মৎস চাষীর পক্ষে পানি নিষ্কাশন ও ঔষধ প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। এরূপ ক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে যখন পুকুরে পানি কম থাকে তখন ঘন ঘন জাল টেনে রাক্ষসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা যায়। তবে এতে অনেক সময় কাদার মধ্যে রাক্ষুসে মাছ লুকিয়ে থাকতে পারে।
আগাছা দমন
ভাসমান ও শিঁকড়যুক্ত পানির উপরে ভাসমান জলজ আগাছা পুকুরে সরবরাহকৃত সার গ্রহন করে। ফলে ফাহটোপ্ল্যাঙ্কটন প্রয়োজনীয় সার গ্রহন করার সুযোগ পায় না। এ কারনে আগাছাপূর্ণ পুকুরে ফাইটোপ্লাঙ্কটন তৈরির জন্য বেশী সার প্রয়োজন হয়। এ জন্য পুকুর থেকে আগাছা সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা দরকার। আগাছা পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
পুকুর পাড় ও তলদেশ উন্নয়ন
পুকুরের তলদেশে অত্যধিক কাদা, আবর্জনা, পঁচা জৈব পদার্থ থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। পুকুরের তলদেশ অসমান, পাড় ভাঙ্গা কিংবা ছিদ্রযুক্ত থাকলে তা মেরামত করে নিতে হবে। পুকুর পাড়ে বড় গাছ পালা থাকলে তার জন্য আলো-বাতাস অপরিহার্য।
পুকুরের তলদেশে বিভিন্ন রোগ জীবানু, বিষাক্ত গ্যাস থাকতে পারে। চুন প্রয়োগের মাধ্যমে এ সব দূর করা যায়। তাছাড়া চুন প্রয়োগে পুকুরের পানির পি এইচ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়। এ সব কারনে পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হয়। পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি কলিচুন প্রয়োগ করতে হয়। কলিচুন প্রথমে পানির সঙ্গে মিশিয়ে অতঃপর ঠান্ডা করে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে জাল টেনে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। যদি পুকুরে পানি না থাকে তা হলে পুকুরের তলদেশে চুন পাউডার করে তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
চুনের ব্যবহার মাত্রা
পুকুরের তলদেশের মাটির প্রকারভেদ, পুকুরের বয়স ও পানির পি এইচ এর উপর চুনের মাত্রা নির্ভর করে। এটেল মাটি, কাদা মাটি ও লাল মাটির পুকুরে চুন একটু বেশি দরকার হয়।
সার প্রয়োগ
পুকুরের পানিতে সূর্য্যের আলোর সহায়তায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে এক ধরণের উদ্ভিদকণা প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয়। এ সব উদ্ভিদ কনা প্রাথমিক উৎপাদক হিসেবে পরিচিত। এগুলো রুই জাতীয় মাছের খাদ্য। প্রাণীকণাও এ মাছের প্রিয় খাদ্য। তাই উদ্ভিদ ও প্রাণীকণা প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরির জন্য সার প্রয়োগ করতে হয়।
সার দু প্রকারঃ
(১) জৈব সার ও (২) অজৈব বা রাসায়নিক সার।
জৈব সার
জীবজন্তুর উৎস হতে সৃষ্ট সারকে জৈব সার বলে। যেমনঃ গোবর, হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা, কম্পোষ্ট ইত্যাদি জৈব সার। গোবর, হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা, গাছের লতাপাতা ও কচুরীপানা একটি গর্তে পঁচিয়ে কম্পেষ্ট তৈরী করা হয়।
অজৈব সার
রাসায়নিক উপাদান দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে তৈরী সারকে অজৈব সার বা রাসায়নিক সার বলে। যেমনঃ ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি উত্যাদি অজৈব সার।
সার প্রয়োগ
পুকুরের শতাংশ প্রতি সার ব্যবহারের মাত্রা
পুকুরে মাটি ও পানির গভীরতা ভেদে সারের মাত্রা কমবেশী হতে পারে। পুরাতন পুকুরের তুলনায় নতুন পুকুরে জৈব সারের পরিমান বেশি লাগে।
সার ব্যবহারের নিয়ম
চুন প্রয়োগের অন্ততঃ ৫-৭ দিন পর রাসায়নিক সার ব্যবহার করা উচিত। চুন প্রয়োগের পরপরই টিএসপি সার ব্যবহার করা যাবে না। কারন চুনের সাথে টিএসপি সারের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে বলে সারের কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়। টিএসপি সহজে পানিতে গলেনা বলে ব্যবহারের ১০-১২ ঘন্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়।
চুন প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হয়। শুকনা পুকুরে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হলে সমগ্র পুকুরে সার ছিটিয়ে লাঙ্গল বা আচড়ার সাহায্যে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। সার দেয়ার পর পরই পুকুরে পানি সরবরাহ দিতে হবে। তা না হলে জৈব সারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নাইট্রোজেনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ফলে সারের ক্রিয়া কমে যাবে। পুকুরে পানি থাকলে জৈব ও অজৈব সার সমগ্র পুকুরে ছিটিয়ে দিয়ে জাল টেনে পানির সাথে সারা পুকুরে ছড়িয়ে নিতে হবে। পুকুরে সার প্রয়োগের পূর্বে সেকি ডিস্কের রিডিং দেখতে হবে। সেকি ডিস্কের রিডিং ৩০ সেঃ মিঃ এর বেশি হলে সার প্রয়োগ করতে হবে।
পানি সংগ্রহ ও সরবরাহ
জৈব সারের মূল উপাদান নাইট্রোজেন ও ফসফরাস। শুকনো পুকুরে ব্যবহারে এসব সারের উপতদান বাতাসে চলে যায়। তাই সার দেয়ার পরপর পুকুরে পানি সরবরাহ করতে হবে। এতে সার গলে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান পানিতে মিশিতে পারবে। তবে পানি প্রবেশের সময় যাতে রাক্ষুসে মাছ কিংবা অবাঞ্চিত মাছ পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খুব সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এ জন্য পানি প্রবেশর পথে ঘণ ফাঁসের জাল দিয়ে আটকে দিতে হবে।
পোনা মজুদ
যে কোন প্রজাতির মাছ দু বা ততোধিক এক সঙ্গে চাষ করলেই তাকে মিশ্রচাষ বলা যাবেনা। একটি পুকুরে এমন প্রজাতির মাছের চাষ করতে হবে যেগুলি একে অপরের সাথে কিংবা পরিবেশ নিয়ে কোন প্রতিযোগিতা করে না। মিশ্র চাষের উদ্দেশ্যই হল পুকুরের সকল স্তরের খাদ্যকে সমান ভাবে ব্যবহার করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। সার দিলে পুকুরের বিভিন্ন স্তরে প্রাকৃতিক খাদ্যের জন্ম হয়। খাদ্যগুলো হল উদ্ভিদকণা, প্রাণীকণা এবং পুকুরের তলদেশে বসবাসকারী প্রাণীসমূহ। এই প্রাকৃতিক খাদ্যমালা পুকুরে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকে।
বিভিন্ন প্রজাতির পোনা নির্বাচন
মিশ্র চাষের আসল উদ্দেশ্যই হল পুকুরের সকল স্তরের খাদ্য ব্যবহার করে অধিক উৎপাদন লাভ করা। তবে পুকুরে একাধিক প্রজাতির মাছ মজুদ করলেই লাভবান হ্ওয়া যাবেনা। খাদ্য ও পরিবেশ নিয়ে প্রতিযোগিতা করে না এমন দু বা ততোধিক প্রজাতির পোনা নির্বাচন করা প্রয়োজন।
পুকুরে পোনা মজুদ করন
পুকুরে পোনা মজুদের আগে নিচের কাজগুলি করতে হবে।
বিষাক্ততা পরীক্ষা
পুকুরে পোনা মজুদের পূর্বে পানিতে ঔষধের বিষক্রিয়া জেনে নেয়া উচিত। বিষক্রিয়া জানার জন্য পুকুরে একটি হাপা টাঙ্গিয়ে তারমধ্যে ১০-১৫ টি পোনা ছেড়ে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত দেখতে হবে। যদি পোনা মারা না যায়, তবেই পুকুরে পোনা মজুদ করা যাবে। বালতি বা ডেকচির মধ্যেও এ কাজটি করা যায়। পোনা মারা গেলে পানি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষন
পোনা মজুদের আগেই পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করতে হবে। পুকুরের পানির রং হবে সবুজাভ, লালচে অথবা বাদামী সবুজ। হালকা সবুজ। হালকা সবুজ, ঘন সবুজ, তামাটে লাল বা পরিস্কার রং এর পানি কার্প জাতীয় মাছ চাষের জন্যে ভাল নয়। তাই পানির রং ঠিক আছে কিনা তা নিম্নোক্ত পরীক্ষা দ্বারা দেখতে হবেঃ
সেকি ডিস্ক
সেকি ডিস্ক একটি লোহার থালা। এর ব্যাস ২০ সেঃমিঃ, রং সাদা-কালো। এটি ৩ রং এর প্লাষ্টিকের সুতা দ্বারা ঝুলানো থাকে। গোড়া থেকে প্রথম সুতার রং লাল (২০ সেঃমিঃ), দ্বিতীয় সুতার রং সবুজ (১০ সেঃমিঃ) এবং হাতে ধরার সর্বশেষ সুতার রং সাদা (১০০-১২০ সেঃমিঃ)।
ব্যবহার পদ্ধতি
লাল সুতা
পানিতে লাল সুতা পর্যন্ত ডুবানোর পর থালার সাদা অংশ দেখা না গেলে বুঝতে হবে পুকুরে অতিরিক্ত খাদ্য আছে। তবে পানি ঘোলা থাকলেও এ অবস্থা হতে পারে। এ অবস্থায় রেনু ছাড়া, সার ও সম্পুরক খাদ্য ব্যবহার করা ঠিক নয়।
সাদা সুতা
সাদা সুতা পর্যন্ত নামানোর পরও থালার সাদা অংশটি দেখা গেলে বুঝতে হবে খাদ্য কম আছে। এ অবস্থায় আরো সার দিতে হবে। পুকুরে পোনা থাকলে খাদ্য প্রয়োগ বহাল রাখতে হবে।
সবুজ সুতা
পানিতে সবুজ সুতা পর্যন্ত ডুবানোর পর থালার সাদা অংশটি দেখা না গেলে বুঝতে হবে খাদ্য পরিমিত আছে। এ অবস্থায় রেনু ছাড়াযাবে, সার না দিলেও চলবে।
ব্যবহারের সময়
সেকি ডিস্ক ব্যবহার করতে হবে সূর্য উঠার পর (সকাল ১১-১২ টা)।
মজুদ ঘনত্ব
পুকুরে পোনার মজুদ ঘনত্ব নির্ভর করে চাষ পদ্ধতির উপর। খাদ্য ব্যবহার, পুকুরের পানি পরিবর্তনের সুযোগ এবং পানিতে অক্সিজেনের যোগানের জন্য এজিটেটর ব্যবহারের সুযোগ থাকলে অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করা যেতে পারে। তবে সকল ক্ষেত্রে একই সুযোগ সুবিধা নাও থাকতে পারে। তাই ব্যবস্থাপনার সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে মজুদ, ঘনত্ব ও প্রজাতি নির্বাচন বিভিন্ন রকম হয়।
মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
সম্পূরক খাদ্য সরবরাহঃ পুকুরে পোনা মজুদের পর থেকেই দৈনিক নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। সরিষার খৈল, চাউলের কুঁড়া, গমের ভূষি, ফিস মিল ইত্যাদি মাছের সম্পূরক খাদ্য। মাছের সম্পূরক খাদ্যে শতকরা ২০ ভাগ আমিষ থাকলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ মাত্রা
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা ভেদে সম্পূরক খাদ্যের মাত্রা নির্ভর করে। তবে সাধারনতঃ মজুদ পুকুরে প্রতিদিন মাছের ওজনের ৩-৫ শতাংশ হারে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। শীতকালে মাছের জৈবিক পরিপাক প্রক্রিয়া কমে যায়, ফলে তাদের খাদ্য গ্রহনের মাত্রা কমে যায়। তাই শীতকালে মাছ কম খায়। এজন্য শীতকালে মাছের ওজনের শতকরা ১-২ ভাগ হারে খাবার দিলেই চলে।
গ্রাস কার্পের খাদ্য
গ্রাস কার্প ঘাসখেকো মাছ। তাই গ্রাস কার্পের খাবার সরবরাহের জন্য পুকুরে চার ফুট লম্বা, চার ফুট প্রস্ত বিশিষ্ট আবেষ্টনীতে (ফিডিং রিং) ক্ষুদিপানা/ কলাপাতা/ সবুজ নরম ঘাস প্রত্যহ সরবরাহ করতে হবে। লাঠি পুঁতে ফিডিং রিংটিকে আটকে দিতে হবে যাতে ফিডিং রিংটি একই স্থানে অবস্থান করে। ফিডিং রিংটি সব সময় পরিপূর্ণ রাখতে হবে। কেননা গ্রাস কার্প ও সরপুঁটি ক্ষুদ্রাকৃতির পাকস্থলী বিশিষ্ট। তাই ক্ষুধা পাওয়ার সাথে সাথে যাতে সামনে খাবার পেতে পারে সেজন্যে ফিডিং রিংটি সর্বদা ঘাসে পরিপূর্ণ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পুরাতন বা ভাঙ্গা রিং পরিবর্তনেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি গ্রাস কার্পের বিষ্ঠা ৫টি কার্পের খাবারের যোগান দিতে পারে।
সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি
খাদ্যের সাথে সরিষার খৈল ব্যবহার করা হলে পরিমাণমত উহা একটি পাত্রে সমপরিমান পানির সাথে ১২-১৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। অতঃপর উক্ত পঁচা সরিষার খৈলের সাথে পরিমানমত অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে আধা শক্ত গোলাকার বলের মত তৈরী করতে হবে। এ খাদ্য দিনে দুবার অর্থাৎ সকালে ও বিকেলে পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে সরবরাহ করতে হবে। সম্ভব হলে খাদ্য পাত্রের মধ্যে সরবরাহ করলে ভাল হয়। শুকনো গুঁড়ো খাবার সরাসরি পুকুরের পানিতে ছড়িয়ে দিলে খাদ্যের অপচয় হয়। এতে মাছের ভাল ফলন পা্ওয়া যায়। তাছাড়া, অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ খাদ্যের পঁচন ক্রিয়ায় পুকুরের পরিবেশ দূষিত হবে।
সার প্রয়োগ
মজুদ পুকুরে সার প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই প্রাকৃতিক খাদ্যের বিদ্যমান অবস্থা জেনে নেয়া ভাল। কারন সম্পূরক খাদ্য ব্যবহারের পাশাপাশি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ব্যবহার করলে পানি দূষন হতে পারে। পুকুরের মাছের ভাল ফলন পেতে হলে পানির গুনগত মান ভাল রাখার জন্য সবসময় চেষ্টা করতে হবে। তাই সার প্রয়োগের আগে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের অবস্থা জেনে নিতে হবে। এতে সঠিক মাত্রার সার ব্যবহার করা যাবে এবং পুকুরে পানির পরিবেশও ঠিক রাখা সম্ভব হবে। তিন ভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা যায়।
সেকি ডিস্ক ব্যবহারঃ
সেকি ডিস্ক একটি সাধারনত লোহার থালা। এর ব্যাস ২০ সেঃমিঃ, রং কালো ও সাদা। এটি পানিতে ডুবানোর পর যদি থালাটি ২০ সেঃমিঃ এর পর্ও দেখা যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য কম আছে। সার দেয়া প্রয়োজন।
গ্লাস ব্যবহারঃ
পুকুর থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে সূর্যের বিপরীতে দেখতে হবে ক্ষুদ্র প্রাণীকণা আছে কিনা। একটি সাধারন গ্লাসে ৮-১০টি প্রাণীকণা দেখা গেলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে।
প্ল্যাংকটন নেট ব্যবহারঃ
প্ল্যাংকটন আটকানো যায় এমন নেটে ৪০ লিটার পানি চালনা করে জালে আটকানো প্ল্যাংকটন একটি বীকারে সংগ্রহ করতে হবে। সংগৃহীত প্ল্যাংকটনের পরিমাণ ২ সিসি হলে খাদ্য পর্যাপ্ত আছে বলে বুঝতে হবে।
এভাবে পানি পরীক্ষার পর প্রাকৃতিক খাদ্য কমে গেলে পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। দৈনিক অথবা সাপ্তাহিক কিস্তিতে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সার প্রয়োগ মাত্রা
পুকুরে সার প্রয়োগের মাত্রা অবস্থা ভেদে কম বেশী হবে। এ মাত্রা মৎস বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শক্রমে ঠিক করা ভাল।
ব্যবহার পদ্ধতি
সার একত্রে একটি পাত্রে তিন গুন পানির সাথে মিশিয়ে ১২-১৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ৯-১০ টার মধ্যে সার গুলানো পানি পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
নমুনা সংগ্রহকরণ
পুকুরে মাছের বৃদ্ধি ঘটছে কিনা অথবা রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব পরীক্ষা করা এবং পুকুরে মজুদ মাছের পরিমান নির্ধারন করার জন্য মাসে অন্ততঃ দু বার জাল টেনে কমপক্ষে মজুদ মাছের শতকরা ১০ ভাগ ধরে উহার গড় ওজন বের করতে হবে। এই গড় এজন দ্বারা পুকুরের মুজুদ মাছের সংখ্যার সাথ গুণ করে মোট মজুদ মাছের পরিমাণ নির্ণয় করে পরবতী সম্পূকর কাদ্যের প্রয়োগ মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। একই সময় মাছের দেহের রোগ বালাই আছে কিনা তা পরীকষা কতরতে হবে। এ ছাড়া ও জাল টানা হলে পুকরের তলদেশে জমে থাকা মিথেন, এ্যামনিয়া ইত্যাদি ক্ষতিকর গ্যাস বের হয়ে যাবে। অন্যদিকে জাল টানার ফলে মাছ ছুটাছুটি করেবে। এতে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।
অন্যান্য পরিচর্যা
মাছ চাষের সফলতা অধিকাংশ নির্ভর করে পুকুরে পানির পরিবেশ ঠিক রাখার উপর। কোন রকম পঁচন ক্রিয়া যেন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তাই যে সব পদার্থ পানিতে পঁচন ক্রিয়া ঘটাতে পারে তা যাতে পুকুরে না পড়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরে গাছের পাতা পড়ে অনেক সময় পানির পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। এর প্রতিকারের জন্য পুকুর পাড়ের গাছের ডারপালা কেটে ফেলতে হবে। নালা-নর্দমার বিষাক্ত পানি পুকুরে যাতে কোনক্রমে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য কোন উৎস থেকে আসা পানি, জাল বা অন্য কোন পাত্র পুকুরের পানিতে ধোয়া উচিত নয়। এ সবের মাধ্যমে পুকুরে রোগ-বালাই সংক্রমিত হতে পারে। অনেক সময় বাজার থেকে মাছ এনে রন্ধন কাজের জন্য পুকুরে ধুয়ে পরিস্কার করা হয়, এতে অনেক সময় পুকুরে রোগ সংক্রমণ ঘটতে পারে।
আংশিক আহরণ
মাছ বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পর তাদের দৈহিক বৃদ্ধি দ্রুততর হয় না। ফলে নির্দিষ্ট বয়সের পরে পুকুরে প্রতিপালন করার প্রয়োজন নেই। কাজেই পুকুরে বড় মাছ রাখা হলে অধিক লাভ পাওয়া যায় না। তাই বাজারজাতকরণ উপযোগী মাছ ধরে ফেলতে হয়। ইহা ছাড়া পুকুরে সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার অধিক মাছ মজুদ রাখা হলে ছোট মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। তাই পুকুর থেকে নিয়মিত বড় মাছ ধরে ছোট মাছকে বড় হবার সুযোগ করে দিতে হবে। বড় মাছ ধরে ফেললে পুকুরে বেশি জায়গা হওয়াতে ছোট মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। এ সব সুবিধার কারণে আংশিক মৎস্য আহরণ করা হয়। বিশেজ্ঞদের মতে বিঘা প্রতি কার্প জাতীয় মাছের পুকুরে ধারণ ক্ষমতা ২২৪ কেজি। কাজেই বিঘা প্রতি ২২৪ কেজির বেশি মাছ আহরণ করে বিক্রয় করতে হবে। সাধারণতঃ অতিরিক্ত মাছ আহরেণর সময় পুকুরের বড় মাছ আহরণ করে ছোট মাছগুলো বড় হবার সুযোগ করে দেয়া উত্তম। তবে একমাসে যে কয়টি মাছ আহরণ করা হবে, সমান সংখ্যক ঐ প্রজাতির মাছের পোনা পুকুরে মজুদ করতে হবে। এভাবে আহরণ ও মজুদের মাধ্যমে মৎস্য চাষ করলে অনেক বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়।
সম্পূর্ণ আহরণ
নিয়মিত আংশিক আহরনের মাধ্যমে বড় মাছ ধরার ফলে ছোট মাছ বড় হ্ওয়ার সুযোগ পাবে। মাছকে পুকুরে বেশি দিন না রেখে বৎসর শেষে পুরাপুরি আহরণ করে পরবর্তী বৎসরের জন্য পুকুর তৈরী করা ভাল। বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে পুকুরে যখন পানি কম থাকে তখন মাছ ধরে ফেলতে হবে।
সূত্র- এগ্রিকেয়ার২৪
ফার্মসএন্ডফার্মার/২মার্চ২০২১