কাদাকনাথ মুরগি একটি প্রাচীন ভারতীয় মুরগির জাত। ধারনা করা হয়, ভারতের মধ্যপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় ‘ঝাবুয়া’ এবং ‘ধার’ জেলাতে কাদাকনাথ মুরগির আদি নিবাস। আঞ্চলিক ভাষায় জাতটি ‘কালি-মাসী’ নামে পরিচিত। কাদাকনাথ মুরগি শুধুমাত্র দেখতেই কালো নয়, বরং এদের মাংসও কালো।
পৃথিবিতে মাত্র তিনটি কালো মাংসের জাতের মুরগি পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কাদাকনাথ মুরগি অন্যতম। বাকি জাত দুটি হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ান ‘আয়াম-চেমানি‘বা ‘আয়্যাম কেমানি’ ও ‘সিল্কি‘ জাতের মুরগি।
সাধারনত কাদাকনাথ মুরগীর উৎপাদন ব্যয় কম, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। অন্য জাতের তুলনায় খদ্য খরচ কম হওয়ার কারনে খামারিরা এই জাতের মুরগি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।
কাদাকনাথ মুরগির মাংসে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন এবং খুবই কম মাত্রায় ফ্যাট ও ক্লোস্টেরল বিদ্যমান। যার ফলে মানুষের কাছে কাদাকনাথ মুরগির মাংসের চাহিদা অনেক বেশি। তাছাড়াও উপমহাদেশের অনেক গোত্রের মানুষ একে পবিত্র বলে মনে করে থাকে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে এদের ব্যাবহার লক্ষনীয়।
কালো মাংসের কারনে এদের ওষধি গুণ রয়েছে বলে মানুষের মাঝে প্রচলিত ধারণা আছে। মূলত মেলামিন নামক হরমোনের কারনে এদের মাংসের রঙ কালো হয়ে থাকে।
কাদাকনাথ মুরগির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
কালোমাসি বা কালো মুরগির মাথার ঝুঁটি থেকে পা, অর্থাৎ এর সমস্ত অঙ্গের রং কালো। পালক, চামড়া, ঠোঁট, নখ, ঝুঁটি, জিভ, মাংস এমনকি হাড় পর্যন্ত কালো রঙের।
কাদাকনাথের তিনটি ভ্যারাইটি আছে; জেট কালো, সোনালী এবং পেনসিল্ড। জেট কালো জাতটি সম্পূর্নরুপে কালো হয়ে থাকে। এদের ঝুঁটি, পা ও ঠোটও কালো রঙের।
কাদাকনাথের চামড়ার রঙও কালো। সোনালি ও পেন্সিল্ড জাতের গলা ও পীঠে হালকা সোনালি বা পেন্সিল কালারের পালকের ছিটা থাকে। তবে সব গুলির মাংস ও হাড় কালো।
কাদাকনাথ মোরোগের ওজন প্রায় ১.৮-২ কেজি এবং মুরগির ওজন ১.২-১.৫ কেজি হয়ে থাকে। দেশী মুরগির মত এরা বাদামি ক্রীম কালারের ডিম দেয়।
সাধারনত বছরে ১২০ থেকে ১৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে। এরা খুব কমই ডিমে তা দিয়ে থাকে।
কাদাখনাথ মুরগি
ছবিঃ কাদাখনাথ মুরগি
জাতের আচরণঃ
কাদাকনাথ মুরগি দেখতে খব সুন্দ্র তবে চঞ্চল প্রকৃতির। সাধারনত দেশী মুরগীর মত চড়ে খেতে পছন্দ করে। মোরগগুলি সামান্য আক্রমনাত্নক হতে পারে। দেশী মুরগীর সাথে এদের সহজে পালন করা যায়। অন্য জাতের মুরগির উপর তেমন একটা চড়াও হয়না।
কাদাকনাথ মুরগির পুষ্টিগুণ
খাদ্যগুণের বিচারে কাদাখনাথ মুরগির মাংসে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন রয়েছে। সাধারণ মুরগির তুলনায় এই মুরগির মাংসে কোলেস্টরেলের মাত্রাও অনেক কম।
কোলেস্টরেল কম থাকে বলে এজাতের মুরগি রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
কাদাখনাথের মাংসে ফ্যাটি অ্যাসিড উপাদান অনেক বেশি। প্রোটিনের মাত্রাও অন্য সব মুরগির মাংস থেকে কয়েক গুণ বেশি।
কাদাকনাথ মুরগি | একনজরে জাতের তথ্যঃ
জাতের নাম কাদাকনাথ বা কাদাখনাথ।
অন্য নাম কালোমাসি বা কালিমাসি, কেদারনাথ।
পালনের উদ্দ্যেশ্য মাংস ও ডিম উভয় (দ্বৈত-উদ্দেশ্য)।
জাতের আচরণ শান্ত, হালকা মেজাজ ,সহজে পালন।
আকার মাঝারী। মোরগ ১.৮-২ কেজি এবং মুরগি ১.২-১.৫ কেজি।
তা দেয়ার প্রবণতা তেমন প্রবণতা নেই।
ডিমর রঙ বাদামী ক্রীম।
ডিমের আকার ছোট। ৩০-৩৫ গ্রাম।
ডিম উৎপাদনশীলতা বছরে প্রায় ১৫০ টি। প্রায় ৬০%
বৈচিত্র্য কালো, সোনালী ও পেনসিল্ড।
জলবায়ু সহনশীলতা সব জলবায়ু (শক্তসমর্থ)।
ঝুঁটি কালো-মাঝারী একক ঝুঁটি।
উৎপত্তিস্থল ভারতের মধ্য প্রদেশ।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৫ জানুয়ারি ২০২২