বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চারা উৎপাদনের জন্য নিন্মলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবেঃ
১) স্থান নির্বাচন
এমন জায়গায় নার্সারী স্থাপন করতে হবে যেখানে সর্বদিক বিবেচনা করলে স্থানটি নার্সারীর জন্য আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং যেখানে নার্সারী স্থাপন করে অর্থনৈতিকভাবে প্রচুর লাভবান হওয়া যাবে। তাই নার্সারীর জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে নিন্ম লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবেঃ
ক) অবস্থান (Location)
নার্সারীর অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নার্সারীটি যেন সহজেই সকলের দৃষ্টিগোচর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। তাই এটি অবশ্যই কোন মহাসড়ক, শহর বা বাজারের পাশে অবস্থিত হতে হবে যেন নার্সারীটি খুজে বের করতে ক্রেতাদের কোন অসুবিধা না হয়। শুধু তাই নয়, সহজে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে এমন স্থানেই নার্সারী প্রতিষ্ঠা করা উচিত। নার্সারীর অবস্থান যেন কোন ঘোপের মধ্যে না হয় যেখানে সব সময় অতিরিক্ত আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া বিরাজমান।
খ) যোগাযোগ ব্যবস্থা
যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বা রাস্তাঘাট ভাল নয় সেখানে নার্সারী স্থাপন করা উচিত নয়। নার্সারীর সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
গ) মাটি
নার্সারীর মাটি অত্যান্ত উর্বর হওয়া বাঞ্ছনীয়। নার্সারী অবশ্যই উঁচু জায়গায় হতে হবে যেন বন্যার পানি নার্সারীতে কখনই প্রবেশ করতে না পারে। নার্সারীর মাটি সুনিষ্কাশিত হওয়া প্রয়োজন যাতে অতিবৃষ্টিতে বীজতলা বা নার্সারী বেডে পানি জমে না থাকে।
ঘ) জমির মূল্য ও সহজলভ্যতা
যেখানে উঁচু জমি সহজে পাওয়া যায় এবং জমির দামও তুলনামূলকভাবে কম অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এমন স্থানে বাণিজ্যিক নার্সারী স্থাপন করলে লাভবান হওয়ার নিশ্চয়তা বেশি থাকে। অনেক জায়গায় বেশি দামেও সুবিধামত বা উপযুক্ত জমি পাওয়া যায় না। তাই নার্সারী স্থাপনের জন্য নির্বাচিত এলাকায় জমির সহজলভ্যতা এমনকি জমির দামও বিবেচনায় আনতে হবে।
ঙ) পানির সহজলভ্যতা
নার্সারীতে সব সময় পানির প্রয়োজন বিধায় পানির উৎস থেকে নার্সারীর দূরত্ব বা সেচ-সুবিধা আছে কিনা তা বিবেচনায় আনতে হবে। পানি সেচ ও নিকাশের উন্নত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
চ) অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সুবিধা, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সুবিধা, দক্ষ শ্রমিকের সহজলভ্যতা, সমভাবাপন্ন আবহাওয়া ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনাপূর্বক নার্সারীর জন্য স্থান নির্বাচন করা উচিত।
২) নার্সারীর জায়গার পরিমান নির্ধারন নির্ণয়
৩) সীমানা নির্ধারণ ও দেয়াল নির্মাণ
প্রয়োজনমত জমি ক্রয় করে বা লীজ নিয়ে প্রথমে সীমানা নির্ধারণ ও নার্সারীর চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে। এতে নার্সারীর চারপাশে জমির মালিকগনের সাথে জমি সংক্রান্ত বিবাদ যেমন এড়ানো সহজ হবে তেমনি ত্রয়কৃত জমিতে ত্রুয়কৃত জমিতে দখলসত্বও নিশ্চিত হবে। এছাড়া বিভিন্ন পশুর উপদ্রব থেকে চারা ও কলমকে রক্ষা করার জন্য নার্সারীর চতুর্দিকে বেড়া দেওয়া প্রয়োজন। এই বেড়া বিভিন্ন রকম হতে পারে। ইট-বালু-সিমেন্টের দেওয়াল, লোহার জালের বেড়া, জীবন্ত গাছের বেড়া, কাঁটাতারের বেড়া, বাঁশের বেড়া ইত্যাদি।
৪) নার্সারীর নামকরণ ও সাইনবোর্ড লাগানো
নার্সারীর একটি সুন্দর নামকরণ করতে হবে এবং সামনে সুবিধামত স্থানে আকর্ষনীয় একটি সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।
৫) লে-আউট বা নক্শা প্রণয়ন
সুপরিকল্পিতভাবে নার্সারী স্থাপনের জন্য কাগজে নার্সারীর লে-আউট বা নক্শা প্রণয়ণ অত্যাবশ্যক। নকশায় নার্সারীর বিভিন্ন অংশের অবস্থান নির্দেশিত থাকবে। লে-আউট অনুযায়ী নার্সারী ধীরে ধীরে পূণাঙ্গ রূপ লাভ করবে।
৬) ভূমি উন্নয়ন
জমির আগা্ছা ও অবাঞ্ছিত গাছপালা কেটে পরিষ্কার করে এবং জৈব পদার্থ ও কম্পোষ্ট সার প্রয়োগ করে নার্সারীর মাটি উর্বর করতে হবে এবং মাটি সমান করে নিতে হবে।
৭) নার্সারীতে বিভিন্ন অংশ চিহ্নিতকরণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ
লে-আউট অনুযায়ী নার্সারীতে অফিস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঘরবাড়ী যেমন- শো-রুম, সেলস্ কাউন্টার, স্টোর রুম, ওয়াকিং শেড, নেট হাউস, কম্পোষ্ট শেড, পলিটানেল ও অন্য অংশ যেমন- নার্সরীকে ব্লকে বিভক্ত করণ, সীডবেড, পট ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, পার্কিং প্লেস, সেচ ও নিকাশ নালা, গভীর ও অগভীর নলকূপ, পরিদর্শন রাস্তা, চৌবাচ্চা, মাড়াই চত্বর ইত্যাদির অবস্থান চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে এগুলো যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে।
৮) যন্ত্রাদি ও অন্যান্য দ্রব্যাদি সংগ্রহকরণ
নার্সারীর কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রাদি যেমন- কোদাল, ট্রাওয়েল, গার্ডেন ফর্ক, বাডিং নাইফ, সিকেচার, প্রুনিং শীয়ার, করাত, ব্যালেন্স, ডিবলার, হেজ কাটার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।
৯) জনবল নিয়োগকরণ
ম্যানেজার, দক্ষ মালী ও শ্রমিক, পাহাদার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করতে হবে।
১০) আধুনিক সুবিধাদির ব্যবস্থাকরণ
নার্সারীতে টেলিফোন ও বিদ্যুতের সংযোগ দিতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, গ্রীনহাউস, ল্যাথ হাউজ, নেট হাউজ, মিষ্ট প্রপাগেটিং ইউনিট ইত্যাদি আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
১১) জার্মপ্লাজম ও অন্যান্য রোপণ দ্রব্য সংগ্রহকরণ
বিভিন্ন ফসলের নামকরা জাতের জার্মপ্লাজম ও অন্যান্য রোপণ দ্রব্য সংগ্রহ করতে হবে এবং অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে সেগুলোকে যথাযথ স্থানে রোপণ করতে হবে। তারপর নার্সারীর কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
১২) নার্সারীর কার্যক্রম চালুকরণ
পরিকল্পিতভাবে নার্সারীর বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৬সেপ্টেম্বর২০