বরিশাল থেকে: মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে ফল-মূল, শাক-সবজি নিয়ে মানুষ যখন আতঙ্কে, ঠিক তখনই কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন শ্যামল ব্যানার্জি ও আবু বকর নামে দুই শৌখিন তরুণ চাষি।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের শ্যামল ব্যানার্জি ও গৌরনদী উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের আবু বকর এবার আশাব্যঞ্জক ফলনও পেয়েছেন।
তাদের বাগানের মিষ্টি ও সুস্বাদু বিভিন্ন প্রজাতির রসালো আম ক্রয় করতে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ভিড় করছেন। বেশিরভাগ আমই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বাগান থেকে।
জানা গেছে, শিকারপুর গ্রামের মৃত দীপক কুমার ব্যানার্জির ছেলে গুরুদাস ওরফে শ্যামল ব্যানার্জি এসএসসি পাস করে সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন ব্যবসায় নেমেছিলেন। প্রতিবারই তাকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। শেষে ২০০৪ সালে সামান্য পুঁজি নিয়ে বাবার এক একর জমিতে তিনি মাছের ঘের তৈরি করেন। ঘেরের চারপাশে ৫৫টি বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা রোপণ করেন। ঘেরের পানি শুকিয়ে গেলে ধান চাষ এবং গাছের ফাঁকে শাক ও সবজির চাষ করেন। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার এবং রোগ-বালাই দমনের জন্য ফেরমেন ফাঁদ ব্যবহার করেন। বর্তমানে উৎপাদিত ফসল তার পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে নিকটস্থল বাজারে বিক্রি করে খরচের চেয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করছেন।
শ্যামল ব্যানার্জি বলেন, কৃষি কাজ তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কৃষি কাজ করে এখন তিনি পুরোপুরি সাবলম্বী। জমিতে তিনি কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেও তিনি অন্যান্য চাষিদের চেয়ে বেশি ফলন পাচ্ছেন। ২০০৯ সাল থেকে তার বাগানে আমের ফলন শুরু হয়। তার বাগানের আম মিষ্টি, সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক কদর রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তার বাগানে বারী আম-৫, বারী আম-৪, হারিভাঙা, গোপালভোগ, ফজলি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কিউজাই ও বারমাস প্রজাতির আম রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, আমিও তার বাগান থেকে কয়েকবার আম কিনেছি। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার কারণে তার গাছের আম খেলে স্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই।
জেলার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের এইচএসসি পাস করা যুবক আবু বকর কয়েক বছর আগেও চাকরির পেছনে হন্য হয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। বাবা আলী মোহাম্মদ হাওলাদারের পরামর্শে পাঁচ বছর আগে নিজেদের এক একর জমিতে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির আম গাছ রোপণ করেন।
আবু বকর বলেন, প্রথমে জমিতে বেড করে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে উন্নত জাতের ২৪টি আম গাছ সংগ্রহ করে রোপণ করা হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১২৫টি আম গাছ রোপণ করা হয়েছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তিনি তার বাগান থেকে ফলন পেতে শুরু করেছেন। এবছর তার বাগানে আম্রপালি, মল্লিকা, হিমসাগর, ডগমাই, পালমার, কিউজাই, খিরসাপাতি, সুরমা ফজলি প্রজাতির ৯২টি আম গাছে বাম্পার ফলন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গতবছর তার বাগানের ৫০টি আম গাছ থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে তা কয়েকগুণ বাড়বে। রাসায়নিক ও ফরমালিন মুক্ত আম ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা আবু বকরের বাগানে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন। সূত্র: বিএন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন