৯০ দিনের মধ্যেই বাচ্চা বের হয়ে আসে ডিম ফুটে। ডিম থেকে বেরোতে না বেরোতেই খাবারের সন্ধান শুরু হয়। প্রথম খাবার গরু আর মুরগির মাংশ। দিন যত গড়াতে থাকে খাবারের চাহিদা ততই বেড়ে যায়। বড়দের আচরণটাও আয়ত্ব করে ফেলে দ্রুতই। ছোটবেলা থেকেই ধারালো হয়ে ওঠে ওদের দাঁত।
উখিয়া (কক্সবাজার): ৯০ দিনের মধ্যেই বাচ্চা বের হয়ে আসে ডিম ফুটে। ডিম থেকে বেরোতে না বেরোতেই খাবারের সন্ধান শুরু হয়। প্রথম খাবার গরু আর মুরগির মাংশ।
দিন যত গড়াতে থাকে খাবারের চাহিদা ততই বেড়ে যায়। বড়দের আচরণটাও আয়ত্ব করে ফেলে দ্রুতই। ছোটবেলা থেকেই ধারালো হয়ে ওঠে ওদের দাঁত।
কুমির ছানার বেড়ে ওঠার এই গল্পটা জানা গেল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকার পাহাড়ে অবস্থিত আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড নামে একটি খামারে।
এই খামারটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর কুমিরের খামার। এখানে রয়েছে কুমির ছানা বড় করার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন।
একদিকে ডিম থেকে ফোটানো বাচ্চাগুলো ধাপে ধাপে বড় করে তোলা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক কুমির থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে ডিম।
কুমিরের মাংশ ও চামড়া অত্যন্ত মূল্যবান বলে আন্তর্জাতিক বাজারে কুমিরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উখিয়া সদর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দক্ষিণে বালুখালী। এখানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপকেন্দ্রের সামনের সড়কের ঠিক বিপরীতেই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকায় ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিরের খামারটি।
২৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই খামারে ৪৭টি বড় কুমির ও একশ’ ৭০টি কুমিরের বাচ্চা রয়েছে। প্রজননের সুবিধার্থে সেগুলো ১৫টি খাঁচায় আলাদাভাবে রাখা হয়েছে।
খামারের তত্বাবধায়ক মো. সোলায়মান জানান, কুমির চাষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন ও ব্যয়বহুল। তবে বিদেশের বাজারে কুমিরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মালয়েশিয়ার হোটেল রেস্টুরেন্টে কুমিরের মাংশ চড়া দামে বিক্রি হয়। শুধু তাই নয় এর চামড়ার দাম আরও বেশি। এছাড়া দেশের বাজারে, বিশেষ করে চিড়িয়াখানাগুলোতে কুমিরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেকে আবার কুমিরের বাচ্চাও সংগ্রহ করেন বলে জানান, সোলায়মান।
তিনি জানালেন, চার থেকে সাত বছর বয়সী পুরুষ কুমিরের দাম তিন থেকে চার লাখ টাকা। একই বয়সী নারী কুমিরের দাম দুই থেকে তিন লাখ টাকা।
এছাড়া চার বছর বয়সী পুরুষ কুমিরের দাম পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। অন্যদিকে একই বয়সী নারী কুমিরের দাম এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
তুমব্রু এলাকার এই কুমিরের খামারে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকেই আসেন কুমির কিনতে।
তবে বর্তমানে প্রজননের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় আপাতত খামার থেকে কুমির বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক মো. সোলায়মান।
খামার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কুমির ডিম পাড়ার পর তা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হ্যাচারিতে রাখা হয়। ৯০ দিনের মধ্যেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এ সময় বাচ্চাগুলোর দৈর্ঘ্য থাকে ছয় থেকে সাত ইঞ্চি। এরপর বাচ্চাগুলোকে একটি নির্দিষ্ট খাঁচায় রাখা হয়।
সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য কুমিরের বাচ্চাগুলো চার বছর ধরে হ্যাচারিতে রাখতে হয়। প্রথম বছর ৩০টি কুমিরের বাচ্চা একটি খাঁচায় রাখা হয়। দ্বিতীয় বছর এক খাঁচায় রাখা হয় ১৫টি বাচ্চা। তৃতীয় বছর এক খাঁচায় পাঁচটি, চতুর্থ বছর চারটি এবং পঞ্চম বছর এক খাঁচায় দুইটি করে কুমির রাখা হয়।
খামারে কর্মরতরা জানান, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই গরু আর মুরগির মাংশ খেতে শুরু করে বাচ্চাগুলো। এক বছর এই খাবার চালিয়ে যেতে হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছর মাংশের সঙ্গে যোগ করা হয় মাছ। চতুর্থ বছরে সপ্তাহে চারদিন মাছ আর তিনদিন মাংশ দেওয়া হয়।
খামার সুত্রে জানা যায়, প্রতিটি কুমির বছরে ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দেয়। একটি কুমির অন্তত ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়।
প্রজননের জন্য একটি খাঁচায় একটি পুরুষ ও একটি নারী কুমির রাখা হয়। ডিম দেওয়ার সময় হলে নারী কুমির নিজেই খাঁচার ভেতরের খড়কুটো দিয়ে একটি বাসা তৈরি করে সেখানে ডিম পাড়ে।
তত্বাবধায়ক সোলায়মান জানান, খামার প্রতিষ্ঠার পর থেকে কুমিরের বিশেষ কোন অসুখ দেখা যায়নি। তবে আবাসস্থলের পানি জীবানুমুক্ত রাখাই কুমিরের সুস্থতার পূর্বশর্ত। খামারে কোনো কুমিরের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখলে পানি বদল করে দেওয়া হয়। আবার কখনো কখনো পানিতে পটাশ ছিটিয়ে জীবানুমুক্ত করে দিলে কুমির সুস্থ হয়ে ওঠে।
এক প্রশ্নের জবাবে খামারের তত্বাবধায়ক বলেন, দেশের দু’একটি খামারে কুমিরের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি থাকতে পারে। তবে এত বড় এলাকা নিয়ে এশিয়ার কোথাও কুমিরের খামার নেই বলে তাদের ধারণা। এ কারণেই এটাকে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কুমিরের খামার বলা হয়।
উদ্যোক্তারা জানান, কুমিরের এই খামারটিকে একটি ব্যতিক্রমী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা তাদের। উখিয়া সদর থেকে কুমিরের খামারটি খুবই কাছে হওয়ায় অনেক দর্শনার্থী এখানে আসেন।
কুমির দেখতে আসা কিশোর মাইনুদ্দিন বললো, একসঙ্গে এগুলো কুমির দেখার মজাই আলাদা। কুমিরের খামারের কথা জেনেই এখানে এসেছি। এমন আরও অনেক পর্যটকের দেখা মেলে কুমির খামারে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৮জুলাই২০