‘‘ঘরের ইঁদুর, মাঠের ইঁদুর, ধ্বংস করে অন্ন, সবাই মিলে ইঁদুর মারি ফসল রক্ষার জন্য’’। গত ১১ অক্টোবর থেকে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০১৮ শুরু হয়েছে।
সারা দেশের মতো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লা অঞ্চলের আয়োজনে, অতিরিক্ত পরিচালকের সভাকক্ষে আলোচনা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের জরিপের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রায় ৫-৭ শতাংশ ধান ও ৪-১২ শতাংশ গম ইঁদুর নষ্ট করে। প্রতি বছর দেশে ইঁদুরের কারণে গড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে। তাছাড়া ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে, খাবার খেয়ে, ডিম ও বাচ্চা খেয়ে বছরে প্রায় খামার প্রতি ১৮০০০ টাকার ক্ষতি করে। ইঁদুর কেবল খাদ্যশস্যই নষ্ট করে না, মানবদেহে মারাত্মক সব রোগ যেমন-প্লেগ, জন্ডিস, আমাশয়, চর্মরোগ ও কৃমিসহ ৬০ প্রকার রোগের বাহক ও বিস্তারকারী হিসেবে কাজ করে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান কৃষি ও কৃষিবান্ধব সরকার নানা ইতিবাচক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্ত্বে সরকার কৃষিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে খাদ্য উৎপাদনে আধুনিক, উন্নত ও লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার জোরদার করেছে। মূলত ইঁদুরের সকল ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযানের উদ্দেশ্য।
এ বছর কুমিল্লা অঞ্চলের, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবিনগর উপজেলার কৃষক মো. আবু সায়েদ বেগ ৫২১৫০টি ইঁদুর নিধন করে জাতীয় পর্যায়ে ২য় স্থান অর্জন করেন। অঞ্চল পর্যায়ে সদর দক্ষিন কুমিল্লা জেলার কৃষক মো. ফয়েজ উল্লাহ ১২২৫১টি ইঁদুর নিধন করে প্রথম হয়েছেন, চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলার কৃষক আব্দুল করিম ৬১৫০টি ইঁদুর নিধন করে ২য় স্থান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মো. জাকির হোসেন ২৫২৩৭টি ইঁদুর নিধন করে ৩য় স্থান অর্জন করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে অঞ্চল পর্যায়ে, বাহেরচর প্রাথমিক বিদ্যালয় দাউদকান্দি কুমিল্লা ১০৮২০টি ইঁদুর নিধন করে প্রথম হয়েছেন।
অঞ্চল পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ২২২৭৫টি ইঁদুর নিধন করে প্রথম; কুমিল্লা সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ ১৮৪২১টি ইঁদুর নিধন করে ২য় এবং কুমিল্লা তিতাস উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ১৭৬৬৮টি ইঁদুর নিধন করে ৩য় স্থান অর্জন করেছেন।
উপজেলা পর্যায়ে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলা ১০১৪৮০টি ইঁদুর নিধন করে প্রথম হয়েছেন। ইঁদুর নিধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- মো. আবুল ফজল মীর, জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছেন। এ কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়নে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সভাপত্ত্বি করেন-কৃষিবিদ মো. জাহেদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লা অঞ্চল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন-কৃষিবিদ দিলীপ কুমার অধিকারী, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লা; কৃষিবিদ মো. আলী আহাম্মদ, উপপরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়। টেকনিক্যাল সেসন পরিচালনা করেন-কৃষিবিদ আইউব মাহামুদ, অতিরিক্ত উপপরিচালক, ডিএই, কুমিল্লা।
উপস্থাপনায় ছিলেন-কৃষিবিদ মততাজ বেগম, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, আদর্শ সদর, কুমিল্লা। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা, অঞ্চল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কৃষকরা।
সংবাদ লেখক: মো. মহসিন মিজি, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি তথ্য সার্ভিস, কুমিল্লা।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন