কুষ্টিয়া সদর উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের নাম বড়িয়া। সবুজ শ্যামল ঘেরা বড়িয়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামটির মধ্য দিয়ে চলে গেছে পাকা পিচ ঢালা রাস্তা। এ গ্রামে কৃষি বিভাগের সরকারি উদ্যোগে প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে লাল-সবুজ প্লাস্টিকের বেড়া দিয়ে ঘেরা খাঁচার মধ্যে সারিবদ্ধভাবে দুই হাজার তেজপাতা ও দারুচিনি গাছ রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত জায়গায় ও পতিত জমিতে ব্যাগে চাষ করা হচ্ছে হলুদ ও আদা। এছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, ক্যাপসিকাম, গোলমরিচ, জিরা, চুইঝালসহ প্রায় ১৩ পদের মসলা চাষ হচ্ছে। বড়িয়া গ্রামটি এখন মসলার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমদানিনির্ভরতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রণোদনায় কুষ্টিয়ায় এ মসলা গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে।
স্থানীয় ভ্যানচালক হালিম শেখ বলেন, মসলার আমদানি বাড়াতে সরকার আমাদের গ্রামের রাস্তার দুই পাশে প্রায় এক মাস আগে এক হাজার গরম মসলা ও এক হাজার তেজপাতার গাছ লাগিয়েছে। এই মসলার গাছ যখন বড় হবে, মসলা উৎপাদন হবে, তখন মশলার অভাব দূর হবে। আমরাও মশলা খেতে পারব।
এ গ্রামের গৃহিণী জহুরা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের রাস্তার দুই পাশে ও বাড়ির আশপাশে পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মসলার গাছ লাগিয়েছে। সেসব গাছ দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। মসলার দাম অনেক বেশি, এসব মসলা গাছ থেকে যখন মসলা উৎপাদন হবে তখন আমরা খুব উপকৃত হব। আমাদের গ্রামে মসলা চাষের উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
স্থানীয় রাশিদুল ইসলাম জানান, সদর কৃষি অফিসের তদারকিতে রাস্তার দুই পাশে তেজপাতা ও দারুচিনি গাছ লাগানো হয়েছে। মাঝে মধ্যে পানি দেয়ার দায়িত্বও আমার। এ গ্রামের অনেক বাসিন্দাদের বাড়ির আশপাশের পড়ে থাকা জমিতে আদা, হলুদসহ বিভিন্ন ধরনের মশলার চাষ শুরু হয়েছে। এসব চাষবাস সরকারি খরচে হচ্ছে।
স্থানীয় আজিমুদ্দিন বলেন, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা কৃষি অফিসে ট্রেনিং করেছি। আমার মতো এই গ্রামের ১২০ জন ওই ট্রেনিং করেছে। সবাইকে দুইবেলা খাবার ও এক হাজার ৩০০ টাকা করে দিয়েছে কৃষি অফিস। প্রায় এক মাস আগে মশলার গাছ লাগানো হয়েছে।
সাইদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমার বাড়ির পাশের পতিত জমি পরিষ্কার করে জিও ব্যাগের মধ্যে আদা ও হলুদের চাষ করেছি। এখান থেকে আমরা লাভবান হতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের কোনো খরচ নেই সবকিছু সরকার থেকে দেয়া হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এগুলো তদারকি করা হয়। আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গ্রামের রাস্তার পাশে মশলার গাছ লাগানো হয়েছে। মশলা উৎপাদিত হলে আমাদের এলাকার চাহিদা মিটবে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, সরকারি প্রণোদনায় বড়িয়া ভাদালিয়া পাড়া গ্রামে বিভিন্ন ধরনের মসলার চাষ হচ্ছে। মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে এ একটি গ্রামকে বেছে নেয়া হয়েছে। পাঁচ বছরের প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন ১০০ কৃষক পরিবার। মসলা বীজের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে এই গ্রামকে গড়ে তোলার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানোই এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল আরও জানান, আগামী তিন বছর পর এই গ্রামের কৃষকরা এখান থেকে পুরোপরি লাভ পেতে শুরু করবেন। মসলা উৎপাদনের পাশাপাশি চারা বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি জানান, এসব মসলা বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করা হয়। সেই খরচ সাশ্রয় করাই মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশ মসলার উৎপাদনে পিছিয়ে আছে। এই চাষ বাড়ানো নির্ভর করছে এ গ্রামের সফলতার ওপর। গ্রামের সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে পারবে সেই চিন্তা থেকে সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে।