কুষ্টিয়াতে ক্যাপসিকাম চাষে বাজিমাত কৃষক সবুজ আলীর

43

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রথমবার ক্যাপসিকাম চাষ করে বাজিমাত করেছেন কৃষক সবুজ আলী। নিজ নামের সঙ্গেই মিল রেখে উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার কৃষক সবুজ আলী চাষ করেছেন সবুজ রঙের অরবিট জাতের ক্যাপসিকাম। মাত্র দুই মাসেই বিক্রি করেছেন প্রায় দুই লাখ টাকা। আশা করছেন তিন মাসের মধ্যে আরও ৭ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করবেন।

ক্যাপসিকাম চাষের শুরুর দিকে স্থানীয়দের নানা কথা শুনতে হয়েছে কৃষক সবুজকে। তবে এখন তার সাফল্য দেখে অন্য চাষিরা ঈর্ষান্বিত। এর আগে এই এলাকার মানুষ ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে জানত না। এখন প্রতিদিনই ভিড় করেন তার জমিতে ক্যাপসিকাম দেখতে এবং চাষ শিখতে।

ক্যাপসিকাম চাষি সবুজ আলী জানান, প্রথমে মোবাইলে কৃষিবিষয়ক ভিডিও দেখতে দেখতে ক্যাপসিকামের ভিডিও আসে। সেটা দেখি এবং চাষ করার চিন্তা করি। কিন্তু এটা কীভাবে চাষ করে সেটা জানতাম না। তাই উপজেলা কৃষি অফিসে যাই। সেখানে তারা আমাকে ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন। কিছুদিন পর আমি যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসে তিন দিনের নিরাপদ উপায়ে সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নিই। সেখানে কীটনাশক ছাড়া ও পানি কম লাগবে সে সম্পর্কে জানতে পারি এবং ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে জানতে পারি। তার কিছুদিন পর আমাকে ২০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম করার জন্য প্রদর্শনী দেন তারা। কিন্তু আমি তার সঙ্গে আরও ৪০ শতাংশ যোগ করে প্রথমবার ৬০ শতাংশ জমিতে এ ক্যাপসিকামের চাষ শুরু করি।

এই চাষি বলেন, ভালোভাবে জমি চাষ করে আমি অক্টোবর মাসের দিকে ক্যাপসিকামের চারা লাগায়। ৬০ শতাংশ জমিতে আমি ৬ হাজার ৫০০ মতো চারা লাগিয়েছি। লাইন করে ফাঁকা করে আমি এই চারা রোপণ করি। জমিতে যাতে পোকামাকড় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই নেট ব্যবহার করেছি। এতে পাখিরও কোনো উপদ্রব নেই। সেই সঙ্গে পানি সেচের অপচয় কমাতে আমি মালচিং ব্যবহার করেছি। এর কারণে আমার জমিতে আগাছা হয়নি এবং সার ও পানি সেচ কম লেগেছে। চাষের খরচও অনেক কমে গেছে।

সরেজমিন চাষি সবুজ আলীর ক্যাপসিকাম ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, নেটে ঘেরা ফসলের ক্ষেত, ক্ষেতের মধ্যে হলুদ-সাদা পোকা মারার ফাঁদ, মাটিতে পলিথিন বিছানো, সবুজ গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে কৃষক সবুজের ক্যাপসিকাম। এটি দেখতে স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরাও ভিড় করছেন প্রতিনিয়ত তার জমিতে।

কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, কৃষি পরামর্শের পাশাপাশি নিরাপদ উপায়ে উচ্চ মূল্যের সবজি চাষে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী দিয়ে আসছি। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প এর আওতায় নিরাপদ সবজি চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাঞ্চনপুর এলাকার কৃষক সবুজ ক্যাপসিকাম চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। তিনি পানি সাশ্রয়ী ও নিরাপদ উপায়ে এ ক্যাপসিকামের চাষ করছেন। বাজারে ভালো দামও পাচ্ছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক এখন ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মাসুম আব্দুল্লাহ জানান, আমরা আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সাশ্রয়ী পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।

সেই সঙ্গে উচ্চমূল্যের সবজি চাষে কৃষকদের বীজ-সার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উপকরণ সহায়তা দিচ্ছি। যার ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা আরও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, ক্যাপসিকাম উচ্চমূল্যের একটি সবজি। কৃষকরা এটি চাষ করে বেশ ভালো লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় অনেক বেকার যুবক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে এই ক্যাপসিকাম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। আগামীতে এ ক্যাপসিকামের আবাদ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।