তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা থেকে: একদিকে বন্যায় কৃষকদের ফসলহানি। অন্যদিকে গো-খাদ্যের হাহাকার। অপরদিকে চাল ও মরিচসহ দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি। সেইসাথে যোগ হয়েছে কৃষকদের আর্থিক সংকট। এরপরই সম্প্রতি দেখা দিয়েছে বন্যার অবশিষ্ট আমন ক্ষেতে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা কোনোক্রমেই ধকল সামলাতে পারছেন না। নানান দুর্ভোগে পড়ছেন কৃষকরা। যেন শুরু হয়েছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
চলতি আমন মওসুমে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলের মাঠপর্যায়ে এবার আমন ধান ক্ষেতে নেকব্লাস্ট, শীষ ব্লাস্ট ও বিএলবি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে কৃষকদের কাঙ্ক্ষিত ফলন না হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
কৃষকরা জানান, রোপিত আমন ধানের গাছের পাতা সাদা হয়ে পচন ধরছে। তাদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের পরামর্শে সংক্রমিত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এক জায়গায় এ রোগ দেখা দিলে মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো জমিতে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ উপজেলার দুই লাখেরও বেশি কৃষক।
রোববার সরজমিনে সাদুল্যাপুর উপজেলার বুজরুক রসুলপুর গ্রামের আমন চাষি মুনছুর আলী ও মোন্নাফ মন্ডল বলেন, আমার ৫০ শতক জমিতে হঠাৎই দেখি ধানের গাছের পাতা ও শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। পরে কৃষি বিভাগের লোক এসে ওষুধ লিখে দিলে সে মোতাবেক স্প্রে করি। কিন্তু পরের দিন এসে দেখি পুরো জমির ধানের শিষ সাদা হয়ে গেছে।
একই কথা জানিয়েছেন, বিভিন্ন গ্রামের আরো বেশ কয়েকজন কৃষক। তাদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের কোনো পরামর্শেই কাজ হচ্ছে না। ক্ষেতের পর ক্ষেত সাদা হয়ে গেছে। এতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক মহল।
কৃষক জলিল উদ্দিন বলেন, “আমার কোনো আবাদি জমি না থাকায় আমি ৬০ শতক জমি বর্গা নিয়ে আমন ধান চাষ করেছি। ৪০ মণ ধান ঘরে তোলার আশাবাদে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে লোন নিয়ে ধান চাষাবাদ করি। এমতাবস্থায় ওই ক্ষেতে সাদা পাতা ও শীষ বের হয়েছে। বর্তমানে জমি থেকে ১০ মণ ধান অর্জন করাও সম্ভবনা নেই।”
বিশেষ করে বি-আর-১১ জাতের ধানে এ রোগে আক্রান্ত বলে তিনি জানান।
গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বরত মামুন এগ্রো প্রোডাকস লিমিটেডের এসএম সোলায়মান সরকার এসব রোগের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “বিঘাপ্রতি ৩০ গ্রাম ফিক্সার এর সাথে ১০০ গ্রাম পটাস মিশ্রিত স্প্রে করলে কৃষকেদের সমস্যা সমাধান হতে পারে।”
সাদুল্যাপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তাহের ও আবু নাছের জানান, এসব রোগের জন্য ফিক্রার, টল ও সালফাইটার দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আর যেসব জমি এখনো সংক্রমিত হয়নি, সেসব জমিতে প্রতিরোধক হিসেবে কাসোবিন, নাটিভো প্রভৃতি স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা সম্ভাব্য সবকিছুই করছি।
সাদুল্যাপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি আমন মওসুমে উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৫শ ৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে গেল বন্যায় প্রায় ৩শ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে।
সাদুল্যাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ফজলু এলাহী বলেন, “বৈরী আবহাওয়ার কারণেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।”
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম