কৃষিকাজে ভাগ্য বদলেছে আরিফের, আয় লাখ লাখ টাকা

333

নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা আরিফ উদ্দিন। ৩০ বছর আগে পরিবারসহ এসেছিলেন এই দ্বীপে। একদিন ক্ষুধা মেটাতে বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে পড়ে যান পানিতে। ১০ ঘণ্টা ভেসেছিলেন তারা। ভেবেছিলেন আর মনে হয় বেঁচে ফিরতে পারবেন না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় বেঁচে ফিরেছেন সেই যাত্রায়। এভাবে জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাতের পর আরিফ আজ সফল কৃষক। কৃষিকাজ করে বর্তমানে তার মাসে আয় লাখ টাকা।

আরিফ উদ্দিন নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মোল্লা গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে। তার আয় দিয়ে চলে চার ভাইসহ বাবা-মায়ের সংসার। নিজের গরু, ভেড়া, চাষাবাদের আয় থেকে ভাগ্য বদল করেছেন তিনি।

জানা গেছে, আরিফ উদ্দিন বছর জুড়ে ১১ একর জমিতে কৃষিকাজ করেন। এ বছর ছয় বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করে পেয়েছেন ৫০০ মণ ধান। এছাড়া তরমুজ চাষ করেছেন তিন একর জমিতে, কুমড়া চাষ করেছেন এক একর জমিতে এবং মরিচ এক একর জমিতে চাষ করেছেন। তার রয়েছে দুইটি মাছের ঘের, ৩০টি মহিষ ও ৯টি গরু।

আরিফের ফুফাতো ভাই কামাল উদ্দিন বলেন, আরিফ অনেক পরিশ্রম করেছে। এখন সে সফল হয়েছে। আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করি।

আরিফের বাবা সিরাজ উদ্দিন বলেন, ৩০ বছর আগে আমরা এই নিঝুমদ্বীপে এসেছি। কাজ ছিল না, খাবার ছিল না। তখন অনেক কষ্ট করেছি। কাঁকড়ার গর্তের পানি খেয়ে জীবন বাঁচাইছি। এখন আমাদের লবণ ও পেঁয়াজ ছাড়া কোনো কিছুই কিনে খেতে হয় না। নদীতে নৌকা আছে, খেতে ধান আছে, মাঠে গরু আছে, ভেড়া আছে, দইয়ের দোকান আছে। আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি।

আরিফ উদ্দিন বলেন, নদীতে পড়ে ১০ ঘণ্টা বাবা আর আমরা দুই ভাই ভেসেছিলাম। সেখান থেকে আল্লাহ উদ্ধার করেছে। তারপর থেকে পরিশ্রম করে সফল হয়েছি। সেদিন যে বাঁচবো কখনো ভাবি নাই। তারপর দিন এনে দিন খেতাম। এখন আমার মাধ্যমে ২০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। মাসে আমার এক লাখ টাকার মতো আয় হয়। আমার সঙ্গে আমার চার ভাই আর বাবা-মা আছেন। এই নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নে যারা এসেছে তারা গরিব মানুষ ছিল। এখন সবার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। পর্যটকরা আসে তারাও ভালো সময় কাটান। একটা সময় নষ্ট, পোকামাকড় ধরা ধান খেয়ে জীবনযাপন করেছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিকে তাকিয়েছেন তাই কৃষিকাজ করে সফল হতে পেরেছি।

আরিফ আরও বলেন, আমার আমন ফলন এবার খুব ভালো হয়েছে। ছয় বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ৫০০ মণ। প্রতি বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ৮০-৯০ মণ। আমরা ভালো দাম পাব। সংসারের জন্য ১০০ মণ রেখে বাকি ধান বিক্রি করে দেব। আমার খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। লাভ হবে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো।

হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, যারা সংগ্রাম করে সফল হয়েছেন তাদেরকে সবাই মনে রাখবে। আরিফ উদ্দিন তাদের একজন। তরুণ প্রজন্মের বা বেকারদের পথ দেখাতে পারছেন। এটা ইতিবাচক দিক। আমরা এটিকে স্বাগত জানাচ্ছি। যারা সমন্বিত কৃষির মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন তারা সমাজে উদাহরণ হিসেবে থাকবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক বলেন, প্রত্যেক সফলতার পেছনে কঠোর পরিশ্রমের গল্প আছে। আরিফ আজ সফল হয়েছে। তার মাধ্যমে পরিবারের পাশাপাশি দেশ উপকৃত হচ্ছে। অর্থনীতির চাকা আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এমন আরিফদের দেখে সমাজের আরও অনেকে উৎসাহিত হয়ে কৃষিতে এগিয়ে আসছে। কৃষি বিভাগ আরিফকে সব বিষয়ে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে এসেছে।