কৃষিজাত ফসল উৎপাদনে অধিক ফলন পেতে ব্যবহার করুন ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ যন্ত্র

557

দেশে বেশির ভাগ কৃষক মাটিতে সারের চাহিদা না জেনেই অনুমান করে জমিতে সার প্রয়োগ করে থাকেন। এতে ধানের ফলন আশানুরূপ হয় না উল্টো কমে যায় মাটির উর্বরতা। মাটিতে সারের চাহিদা বোঝার জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের উদ্ভাবিত মাটি পরীক্ষার বিশেষ যন্ত্র ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ ব্যবহার করে কৃষিজাত ফসল উৎপাদনে অধিক লাভবান হচ্ছে কৃষক।

মাটি পরীক্ষার এ যন্ত্র ব্যবহার করে ইতোমধ্যে অধিক ফলন পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক। ফসলের চাহিদা অনুযায়ী সার সুপারিশ করতে বাউ সয়েল টেস্টিং কিট ভূমিকা রাখছে। এ কিটের মাধ্যমে মাটির অম্লাতা-ক্ষার, নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম নির্ণয় করে ফসলের জন্য সঠিক মাত্রার সার প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। যার ফলে পরিমিত সার ব্যবহার করে কৃষকরা আগের তুলনায় একই জমিতে একর প্রতি দেড়গুণ ফসল পাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার দাতা সংস্থা এসিআইএআর এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ধানসহ অন্যান্য ফসলের পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবস্থাপনার ওপর একটি প্রকল্প (নিউম্যান) পরিচালনা করা হয়। প্রকল্পের একটি অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ সদরের সুতিয়াখালী গ্রামের কৃষকরা এ সয়েল টেস্টিং কিট ব্যবহার করে আমন ধান ও অন্যান্য শস্যজাত ফসল চাষবাদ করেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কৃষকদের নিজস্ব চাষ পদ্ধতির চেয়ে ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ ব্যবহার করে কম খরচে ও কম সময়ে মাটি পরীক্ষা করে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করে অধিক লাভবান হয়েছেন।

প্রকল্পের আওতায় থাকা ময়মনসিংহের সুতিয়াখালি গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি আগে অনুমান সাপেক্ষে জমিতে সার দিতাম। এতে বেশি সার পরিমাণ প্রয়োগ করেও ভালো ফলন পেতাম না। পরে আমি এ যন্ত্রের মাধ্যমে আমার জমিতে সারের পরিমাণ জানতে পারি ও সে অনুযায়ী প্রয়োগ করি। আমার দুই একর জমিতে আগের মৌসুমে ১২০ মণ ধান পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার এ পদ্ধতি মেনে ওই একই জমিতে ১৮০ মণ ধান পেয়েছি।’

ময়মনসিংহের কুষ্টিয়া ইউনিয়নের আরেক কৃষক মো. দুলাল উদ্দিন বলেন, আমার ২৪ বিঘা জমির অর্ধেকে আমি অনুমান নির্ভর সার প্রয়োগ এবং বাকি অর্ধেকে এ যন্ত্রের মাধ্যমে জানা পরিমাণ সার প্রয়োগ করি। পরিমিত সার প্রয়োগের জমিগুলোতেই আমি অধিক ফলন পেয়েছি। যারা একবার এ যন্ত্র ব্যবহার করবে, তারা বারবার এটা ব্যবহারে আগ্রহ দেখাবে।

এ বিষয়ে বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, মাটি পরীক্ষার এ বিশেষ কীটটি ব্যবহারে একই সঙ্গে পরিবেশ বান্ধব, স্বল্প মূল্য, সহজ উপায়ে ব্যবহারযোগ্য, পরিমিত স্যার নির্দেশক এবং মাটির গুণাগুণ রক্ষা হয়। এটি বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চলের কৃষক ওই অঞ্চলের মাটি পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করতে পারবে। তবে এটি শুধু আমাদের বিভাগীয় ল্যাব থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৪জুলাই২০