দিনে দিনে আধুনিক হতে শুরু করেছে কৃষি ব্যবস্থা। সেই আধুনিকতার হাত ধরে ক্যাপসিকাম, নাগামরিচসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন দেশের তরুনরা। সিলেটের বিশ্বনাথের চার তরুণ মিলে শুরু করে সবজি চাষ। এদের একজন আবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত। লন্ডনের প্রবাসী জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে দেশেই কিছু করার স্বপ্ন থেকে ওরা পরিণত হয়েছেন সফল সবজি চাষিতে।
স্বপ্নবাজ এই তরুণরা হলেন বেলাল আহমদ, জাবের হোসেন, কয়ছর আহমদ ও নিজাম উদ্দিন বললেন, ‘ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল দেশের জন্য কিছু করি, সেই স্বপ্ন থেকেই আজ আমরা কৃষির মাধ্যমে দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি।’
বিশ্বনাথের রামধানা গ্রামের যুবক বেলাল। এর আগে বাড়ির পাশের জমিতে অনেকগুলো পুকুর করে সেখানে শিং-মাগুরের চাষ করে সফল হন। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এ জন্য ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক’ প্রদান করেন। এরপর ধান চাষের পাশাপাশি বিকল্প কিছু করার চিন্তা করেন বেলাল। ওই বছরই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলামের কাছে প্রশিক্ষণ ও প্রেরণা পেয়ে লেগে যান ক্যাপসিকাম চাষে। সঙ্গে নাগামরিচও।
বেলাল জানালেন, প্রথমদিকে তাকে এই সংবেদনশীল ফসলটি করার জন্য কৃষি বিভাগের কেউ কেউ তেমন উৎসাহ দেননি। কারণ এখানকার মাটি এর উপযোগী নয়। তারপরও তিনি ক্যাপসিকাম চাষ করে যাচ্ছেন। সাথে নাগামরিচ ও মাছ। এরই মধ্যে বেলালকে নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠান করেছে।
এবার তিনি ক্যাপসিকাম করেছেন আধা বিঘা জমিতে। সেখানে ২ হাজার ৩শ চারা আছে। গেল কার্তিকে রোপণ করে ৬৫ দিনের মাথায় ফলন আসে। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি হয়েছে। আশা আরো ৪০ হাজার টাকার বিক্রি হবে। এ ছাড়া ৯ হাজার নাগা মরিচের চারা রয়েছে বেলালের খেতে। রোপণ করা হয় গত অগ্রহায়ণে। প্রতিটি গাছে ২-৩শ মরিচ ধরবে। ৮০ হাজার টাকা খরচ বাদে তার বাগান থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় হবে।
বেলাল বলেন, ক্যাপসিকামের ফলন যদি ভালো না হয়, তা হলে বেগুন। বেগুন ভালো না হলে নাগামরিচ এভাবেই একটি আরেকটির পরিপূরক হিসাবে চাষ করা হয়েছে। যাতে নিরাশ ও লোকসানে না পড়ি। তবে এবার সব ফলনই ভালো হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১শ ভালো কৃষক বের করে আনা; যারা কৃষি করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ছায়াভরা গ্রামে জাবেদের ৮ বিঘা জমি ভরে আছে ক্যাপসিকাম, নাগামরিচ, ব্রকলি, বেগুন, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন সবজি গাছে। একই গ্রামের বাসিন্দা কয়ছর তার ২১ শতাংশ জমিতে করেছেন ক্যাপসিকাম চাষ।
তারা বললেন, আমাদের পথ দেখিয়েছেন বেলাল ভাই। তার পরামর্শে আমরাও শুরু করি বিদেশি সবজি চাষ। তবে গত বছর অতিবৃষ্টির জন্য আমরা লাভবান হতে পারিনি। কিন্তু এবার লাভ হচ্ছে। ক্যাপসিকাম ও বেগুন বিক্রি চলছে। কিছুদিনের মধ্যে নাগামরিচ বিক্রিও শুরু হবে। এ পর্যন্ত তাদের খরচ উঠে অনেকটা লাভেই রয়েছেন বলে জানালেন।
এই তরুণরা জানান, ক্যাপসিকাম সংবেদনশীল কৃষি পণ্য। এর বীজ সংগ্রহ করতে হয়েছে সুদূর ফ্রান্স থেকে। এ ফসলটি আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া শিয়াল, বানর, পাখি ও পোকামাকড়ের উত্পাত রয়েছে। এগুলো দমন করতে হয়। একইভাবে নিজাম উদ্দিন নাগামরিচের ৪২৫টি চারা রোপণ করেছেন তার বিশ্বনাথের গ্রামে। তিনি মনে করেন নাগামরিচ চাষে পরিচর্যা এত লাগে না। খরচ কম লাভ বেশি।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ