কৃষিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ

380

Soil-Test
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষি। কিন্তু এই কৃষি আজ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে , অন্যদিকে আবাদি জমি কমছে প্রতিনিয়ত। ১৯৭০-৭১ সালে মাথা পিছু জমি ছিল ০.১২ হেক্টর, সেখানে বর্তমানে নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.০৬ হেক্টরে। এ অবস্থায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ক্ষয়িষ্ঞ এ জমি থেকেই। বর্তমান এ চ্যালেঞ্জ থেকেই আমাদের দেশের কৃষকরা এক ফসলি জমি থেকে দুই বা ততোধিক ফসল ঘরে তুলতে জমিতে ব্যাপক হারে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে দিয়ে যাচ্ছেন অনুমান নির্ভর রাসয়নিক সার। অন্যদিকে

কতিপয় অত্যাবশ্যকীয় সার আদৌ ব্যবহার করছেন না। এতে মাটির র্উবরা শক্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি অপচয় হচেছ মূল্যবান রাসয়নিক সার। মাটির অনুজীবের কার্যকারীতা হারাচ্ছে। অতিরিক্ত রাসয়নিক সার মাটির নিচে চুয়ে, নদী-নালায় মিশে যাচ্ছে। আবার গ্যাস হয়ে বায়ুমন্ডলে মিশে পরিবেশ দূষিত করছে।মাটি হতে গাছ তার বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ১৪টি উপাদান পেয়ে থাকে। কিন্তু অসমহারে ও যথেচ্ছভাবে সার ব্যবহার ও নিবিড় চাষাবাদের কারণে মাটিতে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় ১৪ টি পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে ।

এজন্য সার প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই ফসলি জমির মাটি পরীক্ষা করে পরিমিত মাত্রায় সুষম সার দিতে হবে। এতে যেমন মাটির উর্বরতা রক্ষা করা সম্ভব হয় তেমনি সারের অপচয় রোধ করাও সম্ভব হয়। বলা বাহুল্য যে, গত ২০০৮-০৯ সালে দেশে মোট ৩০ লক্ষ ৫ হাজার মেট্রিক টন রাসয়নিক সার ব্যবহার হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র ইউরিয়া সার ব্যবহার হয় ২৪ লক্ষ মেট্রিক টন। অথচ ইউরিয়া সারের মাত্র একতৃতীয়াংশ ফসলের কাজে আসে। এই বিপুল পরিমান সারে, সরকারের ভর্তূকি গুনতে হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। অথচ মাটি পরীক্ষা করে পরিমিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তূকি বাচাঁনো সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে মাটি পরীক্ষা করে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাস পায় এবং ধানের ফলন গড়ে ২০-২৫% এবং অন্যান্য ফসলে ১০-১৫% পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি পায়।

তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বে অন্যান্য খাতের মতো কৃষি খাতকেও বেগবান করতে তথ্য প্রযুক্তির (আইসিটি) হাওয়া বাংলাদেশের কৃষিতেও লেগেছে। সরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এআইসিসি (এগ্রিকালচার ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন সেন্টার) এবং এফআইসিসি (ফিশারীজ ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন সেন্টার) কৃষকদের জন্য কৃষিতথ্যের পাশাপাশি নানান ডকুমেন্টারী, ছবি, ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদিও সংযোজন করেছে। তথ্য প্রযুক্তি যেনো কৃষকদের কাছে সহজবোধ্য হয় এজন্যই সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে এই প্রচেষ্টা। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে দেশে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ২০ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ২৪ মিলিয়ন টনে উন্নীত হবে। তথ্য প্রযুক্তির সুফল কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট হাতে নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। এর মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ কার্যক্রম অন্যতম।

গবেষণাগারের মাধ্যমে ডিজিটাল সার সুপারিশ কার্যক্রম: মাটির নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে ফসলের চাহিদা মাফিক ফসল বিন্যাস অনুযায়ী ডিজিটাল উপায়ে সার সুপারিশ প্রনয়ণ করা হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশের এ সফট ওয়্যারটি বেসরকারি সংস্থা ক্যাটালিস্ট এর সহযোগীতায় প্রনয়ণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে মাটি পরীক্ষার জন্য সরকারীভাবে ১৬(ষোল) টি স্থায়ী গবেষণাগার রয়েছে যা দেশের বৃহত্তর জেলা সমুহে অবস্থিত। কৃষক, গবেষক সহ যেকোন কৃষিজীবী বছরের যে কোন সময়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে নিকটস্থ এসব গবেষণাগার থেকে মাটি পরীক্ষা করতে পারেন। গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা মাটির নমুনা পরীক্ষা করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপারিশ কার্ড প্রনয়ণ করে থাকেন।

কৃষক সহজেই তার জমির প্রকার,কি ফসল ফলাতে চান,ইউনিয়নের নাম,উপজেলা ও জেলার নাম এসব তথ্য দিলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোবাইলের মাধ্যমে সার সুপারিশ বিষয়ক তথ্য দেওয়া হয়।