কৃষিতে নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়লেও মজুরি বাড়ছে না

382

নারী-শ্রমিকরুহুল সরকার, রাজীবপুর(কুড়িগ্রাম) থেকে: মনোযোগের সঙ্গে কাজ করা, কাজে ফাঁকি না দেয়াসহ নানা কারণে কৃষিতে নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। এতে করে গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থানও বাড়ছে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পাঁচ মাস সাধারণত সবজি চাষ হয়। এই সবজি চাষে নারী শ্রমিকদের চাহিদা থাকে বেশি। তবে চাহিদা বাড়লেও মজুরি বাড়ছে না নারীদের।

নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি শ্রমের মূল্যে। পুরুষদের সঙ্গে মাঠে একই সময় কাজ করলেও পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম পাচ্ছে নারীরা।

রাজীবপুর উপজেলার নারী অধিকার ও ভূমিহীন সংগঠন নিয়ে কাজ করেন হাফিজা বেগম। তার মতে, কম পারিশ্রমিকের কারণেই সবজি চাষে নারী শ্রমিকদের চাহিদা বেশি।

গত পাঁচ মাসে সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ফসলের মাঠে এখন আলু, ফুলকপি, বাঁধা কপি, লাউ, টমেটো, শিম, করলা, বরবটি, বেগুন, ধনে পাতাসহ আরও বিভিন্ন সবজি চাষ করেছে কৃষক। এসব সবজির জমিতে নারী শ্রমিকরা পুরুষদের সঙ্গে নিড়ানির কাজ করছেন।

শুধু সবজি চাষে নয়, বোরো ধানের জমিতে নিড়ানি দেয়ার কাজও করছে নারীরা। মিয়া পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা ধানের জমি নিড়ানি দিচ্ছে। সেখানে কথা হয় আবেদা বেগমের(৩০) সাথে। তার কাছে জনতে চাইলে তিনি বলেন, “১৫০ টাকা মজুরিতে তিনি নিড়ানির কাজ করছেন। তাদের সঙ্গেই কাজ করা পুরুষ শ্রমিক আহাদের (৩৫) কাছে মজুরি কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে ২০০ টাকা দেবে’।”

নিজের জমিতে কাজ করছিলেন আকলিমা খাতুন (৩০)। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “বাড়ির কাম কইরা ক্ষেত নিড়াইতিছি কামলা নিলি টেহা(টাকা) দেয়া নাগে, তাই আমি নিড়াই।”

মরিচাকান্দি গ্রামের সবজি চাষি রফিকুল ইসলামের(৫০) সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “কম দামের জন্যই আমরা মেয়ে মানুষ কামলা নেই। কাজ কম করলেও তারা ফাঁকি দেয় না।”

একই রকম অভিমত ব্যক্ত করেন নয়াপাড়া গ্রামের বেগুন চাষী আওয়াল মিয়া (৪৫)।

কৃষি কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও বিভিন্ন জেলায় আছে মজুরি বৈষম্য। এখনও অঞ্চল ভেদে নারী শ্রমিকদের মজুরি পুরুষদের থেকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম। গ্রামীণ নারীর প্রায় ৭১ ভাগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছামসুজ্জামান বলেন, “কৃষিতে নারী শ্রমিকদের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মজুরি বৈষ্যম থাকলেও ঘরের কাজের পাশাপাশি জমিতে কাজ করে পরিবারে বাড়তি একটা অর্থের যোগান দিচ্ছে নারীরা।”