আমাদের দেশের কৃষি খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন ও কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানোন্নয়নে আধুনিক সম্প্রসারণ বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। চীনের ইউনিয়ন রাজত্বকাল থেকে শুরু করলে কৃষির সম্প্রসারণ বিজ্ঞানের ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো। আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণ বিজ্ঞান শুরু হয়েছিল ইউনিভার্সিটি ট্রিনিটি কলেজের এক্সটেনশন হিসেবে।
১৮৬৭ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি ট্রিনিটি কলেজের ফেলো জেমস স্টুয়ার্ট প্রথমে বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত জ্ঞান ও আবিষ্কৃত প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা। ক্রমে ইউনিভার্সিটি এক্সটেনশন এক আন্দোলনে পরিণত হলো। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি ১৮৭৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এক্সটেনশন এডুকেশন কথাটি গ্রহণ করে।
আমেরিকায় এই কৃষি সম্প্রসারণ শুরু হয় ‘ল্যান্ড গ্রান্ড কলেজ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ক্রমে এটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ‘মানুষকে সাহায্য কর- যাতে তারা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করতে পারে এবং তাদের ব্যবহারে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন বলতে মূলত জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতা বোঝায়।’ নিজে করে শেখা এবং নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করা- এ নীতিই হলো কৃষি সম্প্রসারণের মূলভিত্তি।
দেশের কৃষি খাতের অভাবনীয় সাফল্য সম্ভব হয়েছে কৃষিতে গবেষণালব্ধ আধুনিক জ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে হস্তান্তরের মাধ্যমে। স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধস্ত আমাদের দেশের কৃষি খাতের সামগ্রিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রম্নয়ারি বাকৃবির সবুজ চত্বরে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত করেন। যুগোপযোগী কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা কৃষি খাতের সাফল্যের পেছনে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে। এক সময় প্রতিটি ইউনিয়নে একজন সম্প্রসারণ কর্মী নিয়োগ দেয়া হতো।
কৃষিতে সবুজ বিপস্নব এবং প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কলাকৌশল আবিষ্কারের ফলে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ফসলের নিবিড়তা, সেচকৃত এলাকা, পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় এনে প্রতিটি ইউনিয়নকে ২-৩টি বস্নকে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি বস্নকে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োজিত করা হয়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সাব-বস্নকে ঘুরে ঘুরে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান, প্রদর্শনী পস্নট স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ করে থাকেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কাজ করেন। সম্প্রসারণ সেবাপ্রদানে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রম্নপ অ্যাপ্রোচ বা দলীয় আলোচনার ওপরে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্টের (এনএনটিপি) আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ফার্মার’স ইনফরমেশন অ্যান্ড এডভাইজরি সেন্টার (এফআইএসি) স্থাপন করা হয়েছে। এখানে কৃষকরা চাষাবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া এনএটিপি প্রকল্পের আয়তায় কৃষকদের কমন ইন্টারেস্ট গ্রম্নপে (সিআইজি) প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া কৃষি কল সেন্টারে ১৬১২৩ নম্বরে যে কোনো অপারেটর থেকে ফোন করেও কৃষকরা কৃষিবিষয়ক যে কোনো সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেতে পারেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ