কৃষি খাতে কমছে ঋণ খেলাপি

91

বড় গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার একটি সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে। তবে এর উল্টো পরিস্থিতি দেখা যায় ছোট ঋণগ্রহীতার দিক থেকে। তারা ঋণ নিয়ে যথাসময়েই পরিশোধ করছেন। আবার খেলাপি হয়ে যাওয়া গ্রাহকরাও অর্থ ফেরত দিচ্ছেন। দেশের কৃষি খাতের জন্য নেয়া ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কৃষকদের থেকে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার ঋণের অর্থ ফেরত পেয়েছে ব্যাংক; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষকরা ফেরত দিয়েছে ৭ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতের খেলাপি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা; যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ কমেছে ৩৬ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা ছিল কৃষি খাতে। সে হিসাবে ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে কৃষকরা পেয়েছেন মাত্র ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। কৃষি খাতে বিতরণকৃত ঋণের ৭ শতাংশ এখন খেলাপি। যদিও দেশের ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের খাতভিত্তিক গড় খেলাপির হার ৯ শতাংশ। আর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট খেলাপি ঋণের ৫৫ শতাংশই উৎপাদনশীল শিল্প খাতের। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ খাত। এ খাতে বিতরণকৃত ঋণের ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশই এখন খেলাপি। এছাড়া তৈরি পোশাক খাতে খেলাপি ঋণের হার ১১ দশমিক ১২ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ১১ দশমিক ৫৪ ও চামড়াশিল্পের ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণখেলাপি। দেশের মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে কৃষি খাতের অংশ মাত্র আড়াই শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকরা কখনও ঋণ জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মধ্যে সমস্যায় পড়েন তারা। কিন্তু দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপের মতো ঋণখেলাপির প্রবণতা তাদের মধ্যে একেবারেই নেই।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৫ দশমিক ২১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বা ৩৪ শতাংশের বেশি।

তিন মাসে কৃষি খাতে বিতরণকৃত ঋণের ৪৪.২৬ শতাংশ গেছে শস্য উৎপাদনে। প্রাণিসম্পদ ও পোলট্রিতে ২৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ মৎস্য খাতে বিতরণ হয়েছে। বাকি ঋণ গেছে কৃষির অন্যান্য খাতে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২২ শতাংশ। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক এ সময় ৬ হাজার ১৮৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৭ শতাংশ।

এই প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। এ সময়ে মোট ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। দ্বিতীয় অবস্থানে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক ৬৮১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। আলোচ্য সময়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৪৮৮ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৪৪৬ কোটি এবং আইএফআইসি ব্যাংক ৪৩৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পল্লি ও কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৩৯৭ কোটি টাকা।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরে কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষি ঋণের কত অংশ কোনো খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংক। কিন্তু এ বছর পুরো ব্যাংক খাতের জন্য কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি। অর্থাৎ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।