কেন গরু মােটাতাজাকরণ লাভজনক এবং গরু বাজারে বিক্রির উপযুক্ত সময় কতদিন

774

আজক আমরা আলোচনা করব মােটাতাজাকরণ গরু পালন প্রশিক্ষণ পর্বের গরু পালনের পদ্ধতি ও গরু পালনের নিয়ম সম্পর্কে। এ ধরণের আরো আলোচনা পেতে খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন। তো চলুন শুরু করা যাক।

কেন গরু মােটাতাজাকরণ লাভজনক?

• সুষম খাবারের প্রধান উপাদান আমিষ। আমাদের দেশে প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন একজন মানুষের ১২০ গ্রাম প্রাণীজ আমিষের প্রয়ােজন। অথচ বাংলাদেশের মানুষ মাথাপিছু প্রাণীজ আমিষ পায় মাত্র ১২.৬১ গ্রাম।

• এখানে প্রাণীজ আমিষের এ ঘাটতি মেটাতে গরু মােটাতাজা করে বিক্রি করা বাংলাদেশের জন্য একটা লাভজনক ব্যবসা হতে পারে । এ পদ্ধতিতে বাড়ন্ত বয়সের ও জীর্ণ–শীর্ণ এঁড়ে গরু বাছুরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাবার সরবরাহের মাধ্যমে মােটাতাজা করে বিক্রি করা হয়।

• মােটাতাজাকরণ প্রক্রিয়াটি মােটেও জটিল নয়। খুব সহজেই সামান্য প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজটি করা যায়। এ পদ্ধতি অনুযায়ী স্থানীয় স্বাভাবিক খাবার ব্যবহার করে গরু মােটাতাজাকরণ করলে দৈনিক ০.৫৩ কেজি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার ব্যবহার করে দৈনিক ১.১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।

গরু বাজারে বিক্রির উপযুক্ত সময় কতদিন?
গরু মােটাতাজাকরণের মেয়াদ তিন–চার মাস হওয়া উচিত।

গরু মােটাতাজাকরণের বাসস্থান কেমন হবে?
১. এ প্রক্রিয়ায় গরুর বাসস্থান খােলামেলা হতে হবে। প্রতিটি গরুর জন্য ৩০ বর্গফুট জায়গা প্রয়ােজন। তবে একসাথে ১০টি গরুর জন্য ২০ফুট ও ১৫ ফুট আয়তনের জায়গা লাগবে।

২. ঘরের উচ্চতা কমপক্ষে ৮ ফুট হতে হবে। দেয়ালের অর্ধেক পাকা বা বেড়ার করা যেতে পারে। বাকি অংশ খুপরি বেড়ার মতো হতে পারে। এতে ঘরটি খােলামেলা ও আলােকিত থাকবে।

৩. ঘরের মেঝে শক্ত তবে অমসৃণ হতে হবে। এতে গরুর পা পিছলে যাবার ভয় নেই। খামারের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘরের পাশে নর্দমার ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন সহজে পয়ঃনিষ্কাশন করা যায়।

৪. পানি ও বৃষ্টির পানি যেন গড়িয়ে চলে যায়, সেজন্য বাসস্থানের মেঝে পিছন দিকে সামান্য ঢালু প্রকৃতির এবং মেঝে পাকা না হলে পানি শােষণ করার জন্য ঘরের মেঝে দোআঁশ করা উচিত।

গরু মােটাতাজাকরণের উদ্দেশ্য কি?

১. অল্প সময়ে গরু মােটাতাজা করে বেশি দামে বিক্রি করা

২. বেশি মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহ করা

৩. প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করা

৪. কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কমানো যায়।

গরুকে কি ধরণের খাবার খাওয়াতে হয়?
গরুর ওজন, বয়স ও শারীরিক বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে দৈনিক খাবার তালিকা নির্ধারণ করা উচিত।

সাধারণত একটি গরকে তার দেহের ওজনের ৩ ভাগ খাবার দিতে হয়।

১. এক ভাগ সবুজ ঘাস।

২. এক ভাগ দানাদার খাবার।

৩. এক ভাগ শুকনো খড়।

আবার লাভজনকভাবে গরু মােটাতাজাকরণ করার জন্য দুই ধরনের খাবার ব্যবহার করা যায়।

১. ইউরিয়া দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খড় বা ইউটিএস।

২. ইউরিয়া চিটাগুড় মিশ্রিত খড় বা ইউএমএস।

এ দু ধরনের খাবারই কম দামে তৈরি করা যায় এবং এগুলো গবাদি পশুর জন্য বেশ পুষ্টিমানসম্পন্ন।

মােটাতাজাকরণের জন্য কিভাবে গরু নির্বাচন করবেন?
১. মােটাতাজাকরণের জন্য সাধারণত দেড় থেকে দুই বছরের এঁড়ে (ষড়) বাছুর নির্বাচন করা উচিত।

২. পশুগুলি দো–আঁশলা বা সংকর জাতের হলে ভালাে হয়।

৩. গরুর পাঁজরের হাড় চওড়া, বুক ও কপাল প্রশস্ত হলে ভালো হয়।

৪. পা খাটো ও মােটা, গলকম্বল বড় ও ঝুলানাে, চামড়া ঢিলেঢালা হওয়া উচিত।

৫. হাড়ের জোড়াগুলি মােটা আকারের হলে ভালাে।

৬. গরুর রঙ কালাে ও গাঢ় লাল হলে বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়।

গরু মোটাতাজা করণে ভালোফল পেতে করণীয় কি?
১. সঠিক বৈশিস্ট্য সম্পন্ন গরু নির্বাচন।

২. গরুকে কৃমিনাশক খাওয়ানো

৩. নিয়মিত সুষম খাবার সরবরাহ

৪. খোলামেলা ও পরিষ্কার বাসস্থান নির্বাচন

৫. গবাদিপশুকে কম হাটাচলা করানো।

৬. নিয়মিত সংক্রামক রোগের টিকা দেয়া।

৭. গরুকে নিয়মি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ানো।

৮. দুই সপ্তাহ পর পর ওজন পরিমাপ নেওয়া।

৯. সঠিক সময়মন গরুকে বাজারে বিক্রি করা।

ইউরিয়া দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খড় বা ইউটিএস কি?
ইউরিয়া দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খড় সবচেয়ে কম খরচে তৈরি করা যায়। ইউটিএস খাওয়ানাের মাধ্যমে গরুর দ্রুত বৃদ্ধি হয়। এবং মাংস উৎপাদন বেড়ে যায়। যেসব এলাকায় সবুজ ঘাসের অভাব কিন্তু ধানের খড় সহজে পাওয়া যায় সেসব এলাকায় খড়কে ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত করে গরুকে খাওয়াতে পারেন। এতে পুষ্টি উপাদান অধিক পরিমাণে থাকে। তাই গরু এ খাবার থেকে বেশি পুষ্টি পেয়ে থাকে। এই খাবার সহজে হজমও হয়।

ইউরিয়া দিয়ে খড় প্রক্রিয়াজাত করার উপাদানসমূহ
খড়।
ইউরিয়া।

পানি।
বাশের ডোল বা পাত্র।
নিক্তি বা পাল্লা।

পলিথিন।
কাস্তে।

মগ বা বদনা।
ভারি বা বেশি ওজনের বস্তু চাপা দেওয়ার জন্য।

ইউরিয়া দিয়ে খড় প্রক্রিয়াজাত করার ধাপসমূহ
১. ১০ কেজি শুকনা খড় মেপে কাস্তে দিয়ে ৪-৫ ইঞ্চি করে কেটে নিতে হবে

২. ১০ লিটার পানির সাথে ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া গুলাতে হবে ।

৩. এক টুকরা পলিথিন বিছিয়ে তার উপর কাটা খড় রাখতে হবে। এর পর ইউরিয়া মিশ্রিত পানি | ভালােভাবে ছিটিয়ে খড়ে মিশাতে হবে।

৪. এখন এই খড়কে পলিথিনসহ শক্ত করে বেঁধে বাঁশের ডােল অথবা মাটির গর্তে সম্পূর্ণ বায়ু, পানি, আলাে রােধ অবস্থায় ৭ থেকে ১০ দিন রেখে দিতে হবে।

৫. ৭ থেকে ১০ দিন পর বাঁশের ডােল থেকে খড়গুলাে বের করে গরুকে খাওয়ানাে যাবে।

ইউরিয়া দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খড় খাওয়ানাের নিয়ম

পুরাে দিনের চাহিদা অনুযায়ী প্রক্রিয়াজাত খড় বা ইউটিএস একেবারে তুলে নিয়ে ডােলের মুখ বন্ধ করা ভালাে। ঘাস ও দানাদার খাদ্যের যােগান ঠিক রাখলে একটি দেশি গরুকে সাধারণত ২.৫ কেজি প্রক্রিয়াজাত খড় খাওয়ানাে উচিত। গরু মােটাতাজাকরণের উদ্দেশ্যে পালন করা গরুকে সবসময় ইউটিএস খাওয়ালে দুইটি ডােলে ইউটিএস তৈরি করা উচিত। প্রথম ডােলের খড় খাওয়ানো শুরু করলে ২য় ডােলে ইউটি এস প্রস্তুত করে রাখতে হবে। মােটাতাজাকরণের উদ্দেশ্যে পালন করা।

গরুকে ইউটিএস ও অন্যান্য খাবার খাওয়ানাের আদর্শ তালিকা
গরুর ওজন ইউটিএস কাচা ঘাস দানাদার খাবার
৫০-৯৯ কেজি ২ কেজি ৪-৫ কেজি ২.৫-৩ কেজি

১০০–১৪৯কেজি ৩ কেজি ৭-০ কেজি ৩.০–৩.৫ কেজি
১৫০–২০০কেজি। ৪ কেজি ৮-১০ কেজি ৪.০-৪.৫ কেজি

* গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু শুকনা খড় খাওয়ালে গর ওজন দৈনিক প্রায় ৩৮০ গ্রাম কমে যায় আর শুধু প্রক্রিয়াজাত খড় বা ইউ টিএস খাওয়ালে গরুর ওজন দৈনিক প্রায় ২৮০ গ্রাম বৃদ্ধি পায়।

ইউরিয়া ও চিটাগুড় বা ইউরিয়া মোলাসেস প্রক্রিয়াজাতকৃত খড়

ইউরিয়া ও চিটাগুড় প্রক্রিয়াজাতকৃত খড় ইউরিয়া ও চিটাগুড় প্রক্রিয়াজাতকৃত খড় নিয়মিত খাওয়ালে গবাদি পশুর দৈহিক ওজন ও রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি একটি শক্তিশালী এবং প্রােটিনসমৃদ্ধ খাদ্য। এর মধ্যে প্রয়ােজনীয় খনিজ উপাদান, ভিটামিন ও আমিষ দেয়া আছে। এই খাবার সহজে হজম হয়। খড়ের সাথে পরিপূরক খাবার হিসেবে ইউরিয়া ও চিটাগুড় প্রক্রিয়াজাতকৃত খড় খাওয়ালে ভালাে ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া বর্ষাকালে ও অন্যান্য দুর্যোগপূর্ণ সময়ে খাবার সংকটের সময় এটি মজুদ খাবার হিসেবে কাজ করে।

ইউরিয়া ও চিটাগুড় প্রক্রিয়াজাতকৃত খড় তৈরিকরার জন্য উপকরণ
খড়।
ইউরিয়া।

চিটাগুড়।
পানি।
বাশের ডোল বা পাত্র।

নিক্তি বা পাল্লা।
পলিথিন

কাস্তে।
মগ বা বদনা।

ইউরিয়া ও চিটাগুড় প্রক্রিয়াজাতকৃত তৈরি করার ধাপসমূহ
১. ১০ কেজি শুকনা খড় মেপে কাস্তে দিয়ে ২–৩ ইঞ্চি করে কেটে নিতে হবে। * কাটা খড়গুলি পলিথিন বিছিয়ে তার উপর ছড়িয়ে দিতে হবে।

২. বালতিতে ৫ লিটার পানির সাথে ২৫০–৩০০ গ্রাম ইউরিয়া গুলাতে হবে এবং এর সাথে ৩ কেজি চিটাগুড় মেশাতে হবে।

৩. পলিথিন বিছিয়ে, কাটা খড় তার উপর রেখে মিশ্রণের অর্ধেক ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর খড়গুলি উল্টিয়ে পাল্টিয়ে বাকি

৪. অর্ধেক মিশ্রণ ছিটিয়ে দিতে হবে যাতে ইউরিয়া ও গুড়–পানি মিশ্রণ ভালােভাবে খড়ের সাথে মিশে যায়।

৫. তৈরি করা খড় গরুকে সাথে সাথে খাওয়াতে পারেন। একবার তৈরি করা খড় ৩ দিন পর্যন্ত খাওয়ানাে যাবে। তবে খড় গুলাে বেশি ভেজা হলে কিছুটা শুকিয়ে নেওয়া যায়। চিটাগুড় কমবেশি হলে ক্ষতি নেই, তবে ইউরিয়া বেশি হওয়া চলবে না।

গরুর ওজন ইউএমএস কাচা ঘাস দানাদার খাবার
৫০–১০০ কেজি ১–১.৫ কেজি ৪–৫ কেজি ২.৫–৩ কেজি
১০০–১৫০কেজি ১.৫–৩ কেজি ৭–৮ কেজি ৩.০-৩.৫ কেজি
১৫০–২০০কেজি ৩–৪ কেজি ৮–১০ কেজি ৪.০–৪.৫ কেজি
খাবার নিয়ে সাবধানতা
১. কোনােভাবেই দানাদার ইউরিয়া অথবা ইউরিয়া মিশ্রিত পানি গবাদি পশু যেন খেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে

২. অতিরিক্ত ইউরিয়া সার বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে, সেই জন্য সতর্ক থাকতে হবে ।

৩. অনেক সময় ইউরিয়া মিশ্রিত খড় গন্ধ হতে পারে, এ ধরনের খড় গরু খেতে চায় না।

রােগবালাই ও প্রতিকার

১. গরু মােটাতাজা প্রকল্প পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই গবাদি পশুর রােগবালাই সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। সেই সাথে গবাদি পশুর স্বাস্থ্য রক্ষা ও রােগমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ কয়েকটি নিয়মের প্রতি খেয়াল রাখলে ভবিষ্যতে অসুখ–বিসুখ হবার সম্ভাবনা কম থাকে। সাধারণভাবে নিয়মগুলাে হলাে –

২. স্বাস্থসম্মত বাসস্থান, পরিষ্কার সুষম খাদ্য ও পানি, সেবাযত্ন ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রাখা।

৩. উকুন, আঁটালী, মশা–মাছি, পােকা–মাকড় এসবের যেন উপদ্রব না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা।

৪. হট–বাজার থেকে কেনা পশুকে অন্তত ৭ দিন আলাদা রেখে সুস্থতা যাচাই করা

৫. সুস্থ গবাদি পশুকে কোনাে অবস্থায় রােগাক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে যেতে না দেয়া।

৬. রােগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার বা অসুস্থতা দেখা দেয়ার সাথে সাথে সেটাকে আলাদা রেখে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও পরিচর্যা করা।

৭.রােগে কোনাে পশু মারা গেলে তাকে মাটিতে পুঁতে দেয়া।

৮.পশুকে অবশ্যই প্রতিষেধক টিকা দেয়া।

কি ধরনের মহামারি রােগের জন্য কখন প্রতিষেধক টিকা দিতে হয়?
• তড়কা: গরুর বয়স ১ মাসের বেশি – বছরে ১ বার।

• গলাফুলা: গরুর বয়স ১ বছরের বেশি – বছরে ১ বার।

• বাদলা: গরুর বয়স ৪ মাস পূর্ণ হলে – বছরে ২ বার।

• ক্ষুরা রােগ: গরুর বয়স ৪ মাস পূর্ণ হলে বছরে ২–৩ বার ।

• টিটেনাস: সব বয়সে বছরে ১ বার।

• জলাতঙ্ক: সব বয়সে বছরে ১ বার (কুকুর কামড়ালে)।

উপরের মহামারি রােগবালাই ছাড়াও গবাদি পশুর কিছু অসুখ–বিসুখ হয়ে থাকে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এসব রােগের সাধারণ চিকিৎসা আপনার জানা থাকা প্রয়ােজন। তবে মনে রাখতে হবে সব ধরনের অসুখের জন্য অবশ্যই আপনি পশু চিসিকের পরামর্শ নেবেন।

গরুর কিছু সাধারণ রােগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বলা হলােঃ

গরুর ডায়রিয়া ও পাতলা: পায়খানা অনেক সময় গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। এ সময় গরু খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়রিয়া হলে সকেটিল পাউডার, স্ট্রিনসিন ট্যাবলেট খাওয়ানো যেতে পারে। এছাড়া চক পাউডার এবং খয়েরও খাওয়ানো যেতে পারে। নিউমােনিয়া ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, খাবারে ফাংগাস, ঠাণ্ডা ইত্যাদি কারণে গবাদি পশুর নিউমােনিয়া হতে পারে। এ রােগ হলে গরু ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়, শ্বাস কষ্ট হয়, শুষ্ক কাশি দেখা দেয় এবং তীব্র জ্বর হয় ও সর্দি ঝরে। বুকের মধ্যে ঘরঘর শব্দ হয়। ভেসুলং, এ্যান্টিবায়ােটিক ক্লোরােটেট্রাসন, টেরামাইসিন এবং ভেটিবেনজামিন দেয়া যেতে পারে। তবে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা উচিত।

• কৃমি রোগ: গরু মােটাতাজাকরণের জন্য প্রধান অন্তরায়। বাজার থেকে গরু কেনার সাথে সাথে কৃমি মুক্ত করতে হবে। কৃমি থাকলে গরুর স্বাস্থ্য ভালো হয় না। গরু দিন দিন রােগা হতে থাকে। এতে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে, খাওয়া কমিয়ে দেয় ও মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা করে। কৃমি হলে গরুর পায়খানা পরীক্ষা করে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। পরীক্ষা করে কৃমির জাত নির্বাচন করে ফেসিনেক্স, নেমাফেক্স ইত্যাদি খাওয়াতে হবে।

• গরুর ক্ষুরা রােগ: গরুর জন্য ক্ষুরা রােগ একটি মারাত্মক রােগ। এতে ক্ষুরের ভিতরের টিস্যুতে পচনযুক্ত ঘা হয় এবং আশপাশের টিস্যুতে রক্ত জমা হতে দেখা যায়। গরু খুঁড়িয়ে হাঁটে এবং কিছু খেতে চায় না। গবাদিপশুর মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয়। গরুর ওজন কমে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ রােগ হলে ভেসডিন, ভেসুলং ২০, ইনজেকশন, এ্যান্টিবায়ােটিক ইনজেকশন ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। ক্ষতস্থান ভালােভাবে পরিষ্কার করে দিনে ২ বার ডাস্টিং পাউডার প্রয়োগ করতে হবে।

• ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশা: ককসিডিওসিস এক ধরনের আমাশয় জাতীয় অসুখ। এ রােগে গরু রক্ত মেশানাে পাতলা পায়খানা করে এবং শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। পায়খানা খুবই দুর্গন্ধযুক্ত ও মিউকাস বা সাদা কফের মতাে পড়ে। আক্রান্ত পশু দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে, খেতে চায় না এবং শ্বাস কষ্ট হয়। এ রােগ হলে ভেসুলং ২০% ইনজেকশন, সকেটিল পাউডার ইত্যাদি দিতে হবে।।

• গরুর পেট ফাঁপা রোগ: সাধারণত বদহজমের জন্য পশুর পেট ফেঁপে যায়। এ ধরনের অসুখ হলে দানাদার খাবার বন্ধ করে দিতে হবে। এবং পশুকে শুকনা খড় খেতে দিতে হবে। নিওমেট্রল, কারমিনেটিভ মিক্সচার পরিমাণ মতাে খাওয়ানাে যেতে পারে। এছাড়া আদা, লবণ সােডিয়াম বাই কার্বনেটও খাওয়ানাে যেতে পারে।

• এলার্জি রোগ: সাধারণত খাবারের প্রতিক্রিয়ার জন্য এলার্জি হতে পারে। আবার পােকামাকড় কামড়ালেও এলার্জি হতে পারে। এলার্জি হলে চামড়ার উপরে চাকা হয়ে ফুলে উঠে। একজিমা এ রােগের প্রধান লক্ষণ। খাবারের কারণে এলার্জি হলে পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এ রােগ হলে গরুকে ডেভটিভেনজামিন (এন্টি হিস্টাসিন) ইনজেকশন দিতে হবে। তবে এ ব্যাপারে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার: একজন কৃষক নিজে পাঁচটি গরু মােটাতাজাকরণ করে মাসে ৬,১২১ টাকা আয় করতে পারেন এবং সারা বছরের আত্মকর্মসংস্থান করে আরও ২,৪০০ টাকা মাসে আয় করতে পারেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পশু সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সম্পদ উন্নয়নে আমরা অন্যান্য দেশ থেকে পিছিয়ে আছি। গবাদিপশু থেকে বর্তমানে উৎপাদিত দুধ ও মাংস দেশের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এই ঘাটতি কখনাে আমদানির মাধ্যমে পূরণ সম্ভব নয়। কিন্তু উন্নত পদ্ধতিতে ভালাে দেশি বা শংকর জাতের গরু মােটাতাজাকরণ করে দেশের মাংসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। উপরে বর্ণিত বিশ্লেষণসমূহ এটাই প্রমাণ করে যে, এ ধরনের একটি গরু মােটাতাজাকরণ প্রকল্পে বিনিয়ােগ আর্থসামাজিক দিক থেকে লাভজনক এবং ব্যক্তির মুনাফার পাশাপাশি সামাজিক মুনাফাও কম নয়।

তথ্যসূত্র

১. গরু মোটাতাজাকরণ: রিভার ইরোসন প্রজেক্ট, প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ।

২. গরু মােটাতাজাকরণ: মার্কেটস এন্ড লাইভলিহুডস্ প্রােগ্রাম, প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১২ জুলাই ২০২১