বাড়িতে বিভিন্ন সবজির বীজ লাগানোর সময় এটা, লাউ, কুমড়ো, শশা, চিচিঙ্গা, বিভিন্ন শাক-সবজী বীজ বাড়ির উঠানে টবে, বস্তায় , জমিতে পুঁতে দিন, অনেক ভালো গাছ বের হবে
জ্যৈষ্ঠ মাসের তেরো- কুঁড়ি তারিখে বীজ পুহ্না বা বীজ বপন উপলক্ষে রহিন উৎসব উদযাপন করা হয়। কৃষকদের বিশ্বাস, রোহিনী নক্ষত্র সেই দিন পৃথিবীর নিকটবর্তী এসে পড়ায় ঐ দিন বীজ বপন করলে শস্য উৎপাদনে কোন বাঁধা থাকে না।
রোহিনী পরব
জঙ্গলমহলের কৃষিজীবি মানুষজনেরা রোহিনের মধ্যে দিয়ে জমিতে বীচ তলা বপন করে। এই সময় বৃষ্টি দেবতার পূজো অর্চনা করা হয়। যাতে আগামী দিনে বর্ষার মুরসুমে বৃষ্টির কোনও খামতি থাকে না সেই লক্ষে এই পূজো করা হয়। তাই বলা যায় জঙ্গলমহলের অত্যন্ত জনপ্রিয় লোক উত্সব রোহিনকে ঘিরে উত্সবের মেজাজ তৈরি হয়। প্রত্যেক বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখে কৃষিজীবি মানুষেরা নানা ধরনের আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জমিতে বীজতলা লাগানোর সুচনা করলেন। স্থান হিসেবে এই লোক উত্সবটি হল রহিন, রোহিনী, রহনি বা রহইন। এটি স্থানীয় ভাষা তাই স্থান হিসেবে উচ্চারনের তারতাম্য হলেও এর মূল কথাটি হল রোহিনী যা একটি নক্ষত্রের নাম । কৃষি কাজে নক্ষত্র, তিথির প্রভাব রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
পয়লা মাঘ থেকে এই অঞ্চলের কৃষি বর্ষের সুচনা হয়। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন হয় “বীচ-পূন্যাহ” বা বীজ ছড়ানোর অনুষ্ঠানিক সুচনা হয়। আর রোহিনের দিন থেকে পুরোপুরি ভাবে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়। এই দিনটিকে অত্যন্ত শুভ, পবিত্র দিন বলে মনে করা হয়। এর আগে যারা বীজ ছড়াতে পারেননি তারা এই শুভ দিনে এই কাজটি সেরে ফেলেন। এই দিনটিতে বিশষ আচার অনুষ্ঠান পালন করেন কৃষিজীবি মানুষেরা।
লোক গবেষকদের মতো রোহিন দিনটি মূলত পালন করেন মাহাতো সম্প্রদায়ের মানুষজন। এই দিন সকালে এক জাতীয় লতা যা আষাড়ি ফল নামে পরিচিত তা খালি পেটে খান গৃহস্থ বাড়ির মানুষেরা। এটিকে রোহিন ফল বলা হয়। সকাল থেকে বাড়ি, ঘর দুয়ার গোবর দিয়ে লেপন করা হয়। গোবর গোলা জল দিয়ে ঘরের সামনে গন্ডি কাটা হয়। বিশ্বাস করা হয় এর ফলে শাপ খোপ, অপ দেবতা বড়িতে প্রবেশ করতে পারবেনা। বাড়ির মেয়েরা স্নান করে ভিজে কাপড়ে বাঁশের তৈরি একটি পাত্রে জমি থেকে মাটি তুলে নিয়ে আসে। একে বলা হয় রোহিন মাটি।
এই মাটি আনার সময় কথা বলা যাবেনা। খুবই পবিত্র মনে করা হয় এই মাটিকে। এই মাটি এনে বাড়ির তুলসি মঞ্চ, বাড়ির প্রত্যেকটি দরজায় দেওয়া হয়। বীজতলা বোনার জন্য ধানেও এই মাটি দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয় বীজতলায় পোকা মাকড়ের উপদ্রপ কম হবে। এই দিনটিতে গ্রামীন দেব, দেবীর পুজা করা হয়। পায়রা, মোড়গ, ভেড়া বলি দেওয়া হয়। দুপুর বেলা বেশির ভাগ বাড়িতে মাংস ভাত হয়। রাতে রাতে মহুয়া ফল, ফুল আর চাল গুড়ি দিয়ে তৈরি পিঠে সকলে আনন্দের সাথে খান।
রোহিন উত্সবের আর একটি উল্লেখ্য যোগ্য অত্যন্ত আনন্দপূর্ন দিক হল ছোটদের নানা ধরনের মজাদার খেলা। যেমন “ছোলা বাঁদরির” বা রোহিন নাচ। ছোট ছোট ছেলেরা মুখে কালি ঝুলি মেখে, গায়ে ন্যাকড়া জড়িয়ে নকল দাড় গোফ লাগিয়ে অদ্ভুদভাবে সেজে ভাঙা টিন বাজিয়ে বাজিয়ে বিভিন্ন ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ায়া এবং আলু কলা চাল টাকা আদায় করে। রোহিন মাটি আনার সময় নানা মজাদার অঙ্গভঙ্গি করে হাসায় তারা। ছেলেদের রহিন নাচের মধ্যে মানভূমের বিখ্যাত ছোনাচের আদি রূপ রয়েছে। নাচের সময় ছেলেরা যে ছড়া বলে সেই ছড়া গুলিতে পৌরানিক, সামাজিক, কৃষিকাজ সহ বিভিন্ন বিষয় গুলি ধরা দেয়।