কোরবানির সোয়া লাখ পশু নিয়ে বিপাকে রাজশাহীর খামারিরা

300

কোরবানির সোয়া লাখ পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর খামারিরা। এবার কোরবানিকে সামনে রেখে রাজশাহীর ৬ হাজার খামারি ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি গবাদি পশু উৎপাদন করেছেন। এসব পশু বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। অনলাইনেও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন হরদম। খামারিরা বলছেন, মহামারিকালে উৎপাদন খরচ তুলতে পারলেই তারা খুশি।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে দফায় দফায় লকডাউনের কারণে কোরবানির এসব পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় তারা। গতবার ঈদে লোকসানের পর ঘুরে দাঁড়াতে চাইলেও সেই আশায় গুঁড়েবালি বলেই ধরে নিয়েছেন এখানকার খামারিরা। অবশ্য এ বিষয়ে সতত্যা নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, “আগামী ৭ তারিখ পর্যন্ত কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশুর হাট খোলার কোন সম্ভাবনা নেই। যদি ৭ তারিখের পর নির্দেশ আসে তাহলে সেটা দেখা যাবে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে স্পেশাল কোন তথ্য পাইনি এখোনো।”

রাজশাহী নগরীর সপুরা আবাসিক এলাকার “সপুরা এগ্রো ফার্ম”। খামারে কোরবানিতে বিক্রয় উপযোগী ষাঁড় রয়েছে শতাধিক। প্রায় দুই কোটি টাকার গরু বিক্রি নিয়ে দিনরাত দুশ্চিন্তায় ভুগছেন খামারের মালিক সুমন হোসেন। গত কোরবানিতে এই খামারির লোকসান হয়েছিল প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

সুমন বলেন, “রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কোরবানির পশু বিক্রির হাট সিটি হাট। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এখন সবকিছু বন্ধ। খামারের গরুগুলো কিভাবে বিক্রি করব সেটা নিয়ে ঘুম ধরে না। গতবার অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম; কোন কাজ হয়নি। এবার গতবারের চেয়ে লোকসান বেশি হবে বলে ধারনা করছি। বিক্রি করতেই হবে; রেখে দিলে প্রতিটি গরু দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খায়। তখন লোকসানের পরিমাণ আরো বাড়বে।”

আরেক খামারি আরাফাত রুবেল। খামারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন ১৬টি গরু। ঈদুল ফিতরের পরপরই বিক্রি করেছেন ৬টি। এখন ১০টি গরু নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। অনলাইনে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। গরুসহ খামারের ছবি তুলে পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

আরাফাত রুবেল বলেন, “হাটে গরু বিক্রি করলে একটা সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। খামারে বিক্রি করলে ক্রেতা ভাবে যে তারা ঠকেছে; আমার ভাবি যে, আরো একটু দাম হতো। তবে, খামারে কিছু কিছু ব্যাপারি আসছেন গরু দেখার জন্য। তেমন দাম বলছেন না। কোরবানিতে বিক্রির জন্য গরুর মাংসের দামের চেয়ে গরুর আকার, আকৃতির উপর দাম হয়। আমার গরুগুলো বেশ ভালো।”

জানা গেছে, রাজশাহীতেও কোরবানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০৭ টি গবাদি পশু। এইসব পশু প্রস্তুত করার জন্য খামারিরা ইতোমধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সারাদেশে দায়িত্বরত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায় থেকে এসব পশুর তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সাধারণত ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাধারণত দু’ভাবে পশু প্রস্তুত হয়ে থাকে। হৃষ্টপুষ্টকরণ পদ্ধতিতে ও বাসা-বাড়িতে।

দশ জনের বেশি খামারির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজশাহীতে কোরবানির পশুর শতভাগ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। সীমিত আকারে অন্তত রাজশাহীর সিটি হাটে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করলে তারা হাফ ছেড়ে বাঁচবেন। আবার কিছু খামারি বলছেন, হাট খুলে দিলেও ক্রেতা আসতে না পারলে কোন লাভ হবেনা। আমের মৌসুমে যেভাবে আম বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিক সেভাবে খামারিদের জন্য পখ খুলে দেওয়া যৌক্তিক। সেইসাথে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ রাখার আবেদন জানান খামারিরা।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, ৯ টি উপজেলা ও মেট্রা অঞ্চল মিলিয়ে মোট কোরবানির জন্য প্রস্তত হচ্ছে সোয়া লাখের বেশি গরু। এরমধ্যে পবা উপজেলায় ৭০১ জন খামারির ২৯ হাজার ৪৩২টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ষাঁড় আছে ৫ হাজার ৫’শ ২১টি, বলদ ৬৭০, গাভী ২৮৮, মহিষ ৬৬, ছাগল ২৮ হাজার ৩ ’শ ২৫ ভেড়া ৮০৬ ও অন্যান্য ৩০১টি।মোহনপুরে ৬৩৬ জন খামারীর ১ হাজার ২ ’শ ৯৫ টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ষাঁড় আছে ৪ ’শ ৯৭টি , বলদ ৬১টি, গাভী ৫০৫টি, মহিষ ৫৮টি, ছাগল ১ হাজার ৭ ’শ ২১টি, ভেড়া ১৯৭ ও অন্যান্য ৬৯ টি।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: ইসমাইল হক জানান, পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধের বিষয়ে একটা সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। করোনার কারণে যেহেতু হাট বন্ধ সেহেতু খামারিদের সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিবে। তবে, সরকারিভাবে একটা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি আমরা।

উল্লেখ্য, কোরবানির জন্য দেশে এবার পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। এ বছরও নিজেদের পশু দিয়েই দেশে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটবে। আর সেজন্য এ বছর কোরবানিযোগ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু।

সূত্র : এগ্রিকেয়ার।