কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের চরাঞ্চলে সম্প্রতি ব্যাপকহারে গরু চুরি বেড়ে গেছে। সংঘবদ্ধ চোরের দল প্রায় রাতেই কৃষকের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। চোরের হাত থেকে গরু রক্ষার জন্য গোয়ালঘরেই নির্ঘুম রাত পার করছেন প্রান্তিক কৃষক। তবে অজ্ঞাত কারণে বেশির ভাগ চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে আগ্রহী নয় ভুক্তভোগীরা।
উপজেলার বামনী ইউনিয়নের মাঝি বাড়ির মো. ফরিদ নামে এক দরিদ্র কৃষকের দুটি গরু মঙ্গলবার (১৬ মে) চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। যার আনুমানিক দাম প্রায় তিন লাখ টাকা। এর আগে বুধবার (১৭ মে) দিবাগত রাতে চরআবাবিল ইউনিয়নের আয়ুব আলী নামে এক দরিদ্র কৃষকের দুটি ষাঁড় গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। যার আনুমানিক দাম প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এতে গরু খামারি ও কৃষকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এক মাসের ব্যবধানে উপজেলা থেকে প্রায় ১৮ গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা জানান, পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসেছিল গরু চোরের একটি দল। ভ্যানটি সড়কের পাশে রেখে ত্রুটি মেরামতের ভান করে তারা। একাধিক ব্যক্তি ওই পিকআপ ভ্যান সড়কের পাশে দেখলেও কোনো সন্দেহ করেনি। এর ফাঁকে সুযোগ বুঝে গরু ভ্যানে তুলে নিয়ে চম্পট দেয় চোরেরা।
চরের ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, চরাঞ্চলে দুটি ইউনিয়নে সংঘবদ্ধ চোরের দল দিবাগত রাতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে প্রায়ই কোনো না কোনো বাড়িতে হানা দিচ্ছে। তারা গৃহস্থের গোয়াল থেকে গরু তুলে নিয়ে নৌকায় করে চম্পট দিচ্ছে। দক্ষিণ চরবংশী গ্রাম থেকে চলতি মাসে আবদুল হাইয়ের প্রায় দেড় লাখ টাকা দামের একটি ষাঁড় চুরি হয়। চরকাছিয়া গ্রামের লতিফ মিয়ার প্রায় দুই লাখ টাকা দামের একটি গাভী চুরি হয়। দক্ষিণ ঝাউটুগি গ্রামের আনোয়ারের প্রায় চার লাখ টাকা দামের দুটি গরু একইভাবে চুরি হয়।
বামনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাফাজ্জল মুন্সী বলেন, এক খামারি প্রতিদিনের মতো গোয়ালঘরে গরু দুটি রেখেছিলেন। বুধবার সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, তার গোয়ালঘরে গুরু নেই। চিত্কার ও চেঁচামেঁচিতে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরে বিষয়টি আমাকে জানালে আমি বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে কোথাও গরুগুলোর সন্ধান পাইনি। এছাড়াও আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে প্রায়ই ঘটছে গরু চুরির ঘটনা। মামলা-মোকাদ্দমায় না জড়াতে পুলিশের কাছে থানায় গিয়ে অভিযোগ করছে না অনেকেই।
আমার ইউনিয়নের কৃষকরা গোয়ালঘরে নির্ঘুম রাত পার করেও চুরির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
রায়পুর থানার এসআই কমল মালাকার বলেন, হঠাৎ রায়পুরে গরু চোরের উপদ্রব কিছুটা বেড়েছে। চুরিরোধ করতে বিট পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। চুরির ঘটনায় জড়িত চক্রটিকে ধরতে আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি।
এছাড়াও ইউনিয়ন ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে নিজ নিজ মহল্লার মানুষদেরও সতর্ক থাকতে বলে দেওয়া হয়েছে।