ক্যাম্পাস বন্ধ, এই সুযোগে গড়েছি ছাগলের খামার

319

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। ক্যাম্পাসে ফেরা হয় না অনেকদিন হলো। কীভাবে কাটছে শিক্ষার্থীদের সময়? সেটাই ছাত্রছাত্রীরা লিখে জানাচ্ছেন ‘এ সময়ের দিনলিপি বিভাগে’। আপনিও লেখা পাঠাতে পারেন এই ইমেইলে: [email protected]। অথবা যোগাযোগ করুন স্বপ্ন নিয়ের ফেসবুক পেজে।

দৃশ্যটা এখনো মনে পড়ে। মাস্ক পরে, হাতে ব্যাগ নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছিলেন সবাই। গত বছর মার্চের মাঝামাঝি সময়ের কথা। কেউ ভাবিনি, এক বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের আর ক্যাম্পাসে ফেরা হবে না।

তিন মাস ঘরে বসে কাটিয়ে দেওয়ার পর মনে হলো, একটা কিছু করা দরকার। পড়ালেখার বিষয় যেহেতু কৃষি, মাথায় এল ছাগল পালনের ভাবনা। মা-বাবা এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল অনুষদের বর্তমান ডিন মোহাম্মদ রাশেদ আল মামুন স্যারের সঙ্গে আমরা এই ভাবনা নিয়ে কথা বললাম। সবাই উৎসাহ দিলেন। ব্যাস! পুরো উদ্যম নিয়ে নেমে পড়লাম কাজে। আমার মা-বাবা দুজনই শিক্ষক। আর্থিক অবস্থা খুব যে ভালো, তা-ও নয়। সরকারি বৃত্তির টাকা, নিজের সঞ্চয়, মা-বাবার দেওয়া কিছু টাকা আর সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের ঋণ, সব মিলিয়ে ৩২ হাজার টাকা হলো। তা নিয়েই শুরু হলো আমার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা।

আব্বু আর আমি বাজারে গিয়ে কিনে ফেললাম দুটি খাসি ও সাতটি বকরি।এই ছাগলগুলো দিয়েই শুরু হলো আমার খামারের ব্যবসা।

সাধারণভাবে মনে হতে পারে, ছাগলপালন খুব সহজ। শুরু করার পর বুঝলাম, অত সহজ নয়। আবার অসাধ্যও নয়। ছাগলপালনের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। প্রথম এক মাস বেশ পরিশ্রম করতে হলো। পরিশ্রম করতে করতেই শিখলাম অনেক কিছু। সাহস পেলাম আরও। তত দিনে বুঝে ফেলেছি, ঠিকমতো করতে পারলে এই ব্যবসায় ভালো লাভ আছে।

খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনা করতে থাকলাম। খোঁজ নিয়ে জানলাম, অনেক ব্যাংকই খামার সম্প্রসারণের জন্য ঋণ দেয়। শুরু হলো পরবর্তী মিশন। ঋণের জন্য নানা ব্যাংকে ঘুরলাম, কিন্তু কেউই খুব একটা সাড়া দিল না। হয়তো আমি তাঁদের বোঝাতে পারছিলাম না।

অবশেষে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পীরগাছা, রংপুর শাখার ব্যবস্থাপক পুলিন চন্দ্র রায় আমার কথা মন দিয়ে শুনলেন, বুঝলেন এবং বেশ উৎসাহ দিলেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে একদিন আমাদের তাঁর অফিসে ডেকে ঋণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা হাতে তুলে দিলেন। সেদিনের আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না।

এক ক্ষুদ্র খামারি হিসেবে পাঁচ লাখ টাকার ঋণ আমার কাছে অনেক বড়। সেই টাকার বেশির ভাগই সরাসরি বিনিয়োগ করি খামারে। এখন আমাদের খামারে ছাউনি তৈরি করেছি। সেখানে ১২টি গরুর রাখার ব্যবস্থা আছে। যদিও এখনো খামারে ৪টি গরু ও ২৭টি ছাগল আছে। আমার লক্ষ্য খামারটিকে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

সূত্র: প্রথম আলো

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৬জুন ২০২১