‘আমরা শুধুমাত্র ক্ষীরা নয়, একই জমিতে ভুট্টা ও আখের আবাদ করি। তবে ক্ষীরা খুব কম সময়ে ভালো ফলন হওয়ার কারণে এলাকার অনেকেই আবাদ শুরু করেছেন। এ বছর বেশ ভালো ক্ষীরা হয়েছে। দামও ভালো পেয়েছি। শুরুতে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এখন শেষ সময়ে ক্ষীরা সাইজে ছোট, তাই দামও একটু কম। এভাবেই বলছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নিজগাছতলা এলাকার কৃষক বিলস্নাল গাজী।
লক্ষ্ণীপুর গ্রামের আরেক চাষি ইউসুফ গাজী জানান, এ বছর আমি ৩০ শতাংশ জমিতে ক্ষীরা ও সবজি চাষ করেছি। সবজি ভালো হয়েছে। একটু দেরিতে আবাদ করার কারণে ফলনও দেরিতে এসেছে। গত বছর ক্ষীরা আবাদ করে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর ক্ষীরাগুলো বড় হলে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করব। তিনি আশা করছেন, এবারের ক্ষীরা বিক্রি করে লাভবান হবেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি, শাহমাহমুদপুর, বাগাদি, বালিয়া, ইব্রাহীমপুর, লক্ষ্ণীপুর, হানারচর, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে ব্যাপকভাবে ক্ষীরা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মেঘনা নদী উপকূলীয় এলাকায় কৃষকরা আগাম ক্ষীরা চাষ করে বেশ লাভজনক অবস্থায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার আশিকাটি ও শাহমামুদপুর ও বাগাদী ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের ক্ষীরা বেশ কয়েকবার বাজারে বিক্রি করেছেন।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ক্ষীরা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১৪০ হেক্টর, মতলব উত্তর উপজেলায় ১২০ হেক্টর, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৮০ হেক্টর। এ ছাড়াও অন্যান্য উপজেলায় ১০-২০ হেক্টর জমিতে ক্ষীরা চাষ করা হয়েছে।
একই এলাকার কৃষানি নূরজাহান বেগম বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে জমিতে ক্ষীরা চাষ করছি। এবারও প্রায় এক হেক্টর জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছি। পরিবারের সবাই জমিতে পরিচর্যা করেন। তাই আমাদের খরচ কম হয়েছে।
তিনি আশাবাদী, এ বছর তিনি কমপক্ষে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভবান হবেন। মৌসুমের শুরুতে তিনি প্রতি কেজি ক্ষীরা বিক্রি করেছেন ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, চাঁদপুরে গত ২০ বছর ধরে কৃষকদের কাছে ক্ষীরা আবাদ খুবই জনপ্রিয়। এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ দশমিক ৬০ টন। পুরো জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নয় হাজার ৯৮৮ টন।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ফসলের ন্যায় ক্ষীরা আবাদও ক্ষতিরমুখে পড়ে। তারপরেও যে পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে তাতে কৃষকরা লাভজনক অবস্থায় রয়েছেন। কারণ বাজারে ক্ষীরার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫জানু২০২০