ক্ষেতে শস্য দেখভাল করবে মোবাইল অ্যাপ!

388

অ্যাপস

ফসল আবাদের ক্ষেত্রে ক্ষেতে তদারকি খুব গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদন পর্যায়ে সেচের প্রয়োজন আছে কিনা, ফসলে ক্ষতিকারক পতঙ্গের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে কিনা, সার ও কীটনাশক উপযুক্ত সময় নির্বাচনসহ আরো নানা বিষয়ে তদারক করার প্রয়োজন হয়। এমনকি চুরির হাত থেকে ফসল রক্ষায়ও তদারকির মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করতে হয়। এসব কাজে প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত শ্রমিক। তাদের মজুরি দিতে গিয়ে বেড়ে যায় উৎপাদন ব্যয়। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প খরচ ও পরিশ্রমে ক্ষেতে তদারকি ব্যবস্থা প্রণয়নে অনেকেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ঝুঁকেছেন। এতে উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ফলে ভোক্তারা কম খরচে কৃষিপণ্য কিনতে পারেন।

ক্ষেতে তদারকির জন্য এমনই একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ নিয়ে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষি প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান অ্যারোবোটিকস। এ অ্যাপে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ব্যবহার হচ্ছে বিশেষ সফটওয়্যার অ্যারোভিউ ও স্কাউটিং অ্যাপ অ্যারোভিউ স্কাউট। এর মাধ্যমে ক্ষেতে তদারকির কাজে মানুষের বদলে নিয়োজিত হবে মনুষ্যবিহীন উড়োজাহাজ বা ড্রোন। এসব ড্রোন ক্ষেতে ফসলের একদম কাছ থেকে ছবি তুলতে পারবে। ফলে তদারকি কাজ অনেক বেশি সহজ ও কার্যকর হয়ে আসবে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় আলুক্ষেত ও লেবুজাতীয় ফলের বাগানে পরীক্ষামূলকভাবে এ অ্যাপ ব্যবহার করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ফসলের রোগ ও ক্ষতিকারক পতঙ্গের প্রকোপের বিষয়ে তদারক করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, একজন মানুষ যেভাবে তদারকি করেন, এ অ্যাপও একই রকমের ফলাফল জানাতে সক্ষম। বরং অ্যাপ ব্যবহার করে তদারকির ক্ষেত্রে সময় ও শ্রম বেশ কম লাগে।

এ বিষয়ে অ্যারোবোটিকসের ব্যবস্থাপক মাইকেল মালাহি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে ক্ষেতে তদারক করার ক্ষেত্রে এরই মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ সফলতা অর্জিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকরা যেমন ফলাফল দেন, অ্যাপের কার্যক্ষমতা তার প্রায় কাছাকাছি। এখন এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা এবং অ্যাপটিকে আরো সময়োপযোগী ও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করতে সক্ষম করার কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, তদারক করার ক্ষেত্রে ড্রোনগুলো ফসলের এক মিটারের মধ্যে গিয়ে ছবি তুলতে কিংবা তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। এতে ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং এত কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হওয়ায় প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এসব তথ্য ব্যবহার করে সহজেই ফসলের সম্ভাব্য উৎপাদন প্রাক্কলন নির্ধারণ করা যায়।

অ্যারোবোটিকসের সিইও জেমস পিটারসন বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ক্ষেতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন সূচিত হবে। এক্ষেত্রে আমরা যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারব, সিস্টেমের অ্যালগরিদম তত শক্তিশালী হবে। ক্ষেতে তথ্য সংগ্রহের কাছে শ্রমিকের ব্যবহার কমে আসবে। বিপরীতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে নির্ভুল তথ্যপ্রাপ্তির পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয়ও তুলনামূলক কমে আসবে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কেনিয়া, মোজাম্বিক, স্পেনসহ ১১টি দেশের পাঁচ শতাধিক কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। আগামীতে এর ব্যবহার বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে অ্যারোবোটিকস।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন