‘কলা লাগিয়ে না কাট পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।’ এমনি ‘খনার বচন’ অনুসরণ করে কাঁচ কলা চাষে লাভবান প্রকাশ মজুমদার। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শ্যামপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। বাবা প্রেম চাঁদ মজুমদার সাধু প্রকৃতির মানুষ। সাধুসঙ্গ, সুর-সঙ্গীত আর কৃষি কাজ নিয়ে তাঁর সহজিয়া জীবন। বাবার কাছ থেকে ছেলে প্রকাশ কলা চাষ নিয়ে শুনেছেন আরো অনেক প্রবাদ।
খনার বচনে আরো রয়েছে, ‘ডাক ছেড়ে বলে রাবণ, কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ।’ ‘তিন শত ঝাড় কলা রুয়ে, থাক গৃহী ঘরে শুয়ে।’ এই প্রবাদ অনুযায়ী প্রকাশ তার কলা বাগান তৈরী করেন। তার কলাবাগান দেখতে আসেন অনেকেই।
প্রকাশ মজুমদার জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে কাঁচ-কলা বা আনাজি কলা গাছ রোপন করেন। এক একর জায়গায় প্রায় সাড়ে তিনশ ছোপ কলা গাছ রোপন, জায়গা প্রস্তুতে ব্যয় হয় এক লক্ষাধিক টাকা। চিতলমারীতে সপ্তাহে দুটি হাট। এখন প্রতি হাটে তিন থেকে চার পোন কলা তিনি বিক্রি করেন। ৮০টিতে এক পোন। প্রতি পোন কলা চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা দাম। অর্থাৎ, প্রতি হাটে প্রকাশ মজুমদারের আয় কমপক্ষে ১২শ টাকা। এর বাইরেও তার রান্নার মসলার ব্যবসা আছে। প্রকাশ আরো বলেন, ‘প্রচন্ড গরমের সময়ও কলা বাগান ঠান্ডা। সংসারের চেয়ে শান্তির!’ তাই হাটের দিন বাদে অন্যান্য দিনে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার সেখানে সময় কাটে।
প্রকাশের প্রতিবেশি বাবলু মন্ডল বলেন, ‘একশ এট্টা জামা গায়, ভর দুপুরে দাড়ায়ে রয়।’ এমনই কলা গাছ। ভর দুপুরের মধ্যেও কলা গাছের মধ্যে প্রকাশ এসির ডান্ডা অনুভব করে। তার কলা বাগানে বিষাক্ত সাপ আছে। তাদের সাথেও যেন প্রকাশের সখ্যতা গড়ে উঠেছে।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার কালের কন্ঠকে বলেন, ‘কৃষির উন্নতির ক্ষেত্রে খনার বচনের অন্যতম অবদান রয়েছে। আর কাঁচ কলা মানুষের জন্য ভীষণ উপকারী। এতে আয়রন, মিনারেলসহ প্রচুর পুষ্টিগুন রয়েছে। মানুষের হৃদরোগ ঝুঁকি, ওজন কমানো, ডায়বেটিস প্রতিরোধ, কিডনি সচল রাখা, পেটের খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কাঁচ কলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। কৃষি কার্যালয়ের উদ্যোগে চিতলমারীতে কাঁচ কলা চাষ হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯মে২০