খরা, বন্যা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের কিছু জাত

3435

41135939_303

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো বেশ কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। আজ জানাবো সেসব ধানের কথা।

মধ্যম খরা, ঠান্ডা ও লবণাক্ততা সহনীয় ধান
ব্রি ৫৫ হচ্ছে আউশ ও বোরো মৌসুমের ধান। এটি মাঝারি খরা, ঠান্ডা ও লবণাক্ত পরিবেশ সহ্য করতে পারে। আউশ মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫ টন ফলন হলেও বোরো মৌসুমে এই জাত ফলন দেয় প্রতি হেক্টরে সাত টন। ব্রি ৫৫ ধান ১০-১২ দিন সেচহীন অবস্থায় এবং ১৫-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৮ ডিএস/মিটার (প্রতি মিটারে ৮ ডেসিসিমেন্স) লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। ১৪৫ দিনের মধ্যে এ ধান কাটার উপযোগী হয়।

অধিক খরা সহিষ্ণু জাত
ব্রি ৫৭ জাতের এই ধানটিও আমন মৌসুমের। এটিও খরা সহনীয় ধান। পানির স্তর ২০ সেমি নীচে নেমে গেলেও এ জাতটি টিকে থাকতে পারে। এর ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ থেকে চার টন। ১০৫ দিনে এ ধান কাটার উপযোগী হয়।

খরা সহনীয় জাত
খরা সহনীয় আগাম আমন মৌসুমের ধান হলো ব্রি ৫৬। ১৫ থেকে ১৬ দিন সেচহীন অবস্থায় টিকে থাকতে পারে। ব্রি ৫৬ প্রতি হেক্টরে চার থেকে সাড়ে চার টন ফলন দেয়। বীজতলা থেকে শুরু করে ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযোগী হয়।

খরাপ্রবণ এলাকার ধান
ব্রি ৪৩ বোনা আউশের আগাম জাত ও কিছুটা খরাসহিষ্ণু। ছিটিয়ে, সারি করে এবং ডিবলিং- এই তিন পদ্ধতিতেই এর বীজ বোনা যায়। জাতটির জীবনকাল মাত্র ১০০ দিন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এই ধান হেক্টর প্রতি সাড়ে তিন টন ফলন দিয়ে থাকে।

অতি খরা সহনশীল
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে ব্রি ৭১ ধানের জাত। খরা সহনশীল জাতটি প্রজনন পর্যায়ে ২১ থেকে ২৮ দিন বৃষ্টি না হলেও টিকে থাকতে পারে। দেখতে মাঝারি মোটা আকৃতির। জীবনকাল ১১৪ থেকে ১১৭ দিন। অতি খরা বা মাটির আর্দ্রতা ২০ শতাংশের নীচে থাকলেও প্রতি হেক্টরে ৩.৫ টন, মধ্যম মানের খরায় চার টন ও খরা না থাকলে পাঁচ থেকে ছয় টন পর্যন্ত ফলন হয়।

ঝড়, বৃষ্টি সহিষ্ণু ধান
ব্রি ২৯ জাতের ধান চাষে সেচ, সার ও সময় কম লাগে। ঝড়, বৃষ্টিতেও হেলে পড়ে না। ১৬০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায়। বিঘা প্রতি ফলন ২৪-২৮ মণ।

বন্যা সহিষ্ণু ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ফসলি জমি প্রায়ই আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়। এ ধরনের বন্যা সহ্য করতে পারে এমন কিছু জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীর। এর মধ্যে একটি ব্রি ৫১। এটি টানা ১৫ থেকে ১৭ দিন পানির নীচে ডুবে থাকলেও নষ্ট হয় না। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। হেক্টরে ৪ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। দক্ষিণাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় ধানের জাত এটি।

অধিক বন্যা সহনশীল
ব্রি ৭৯ জাতের ধানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ১৮ থেকে ২১ দিন বন্যার পানিতে ডুবে থাকলেও ফলনের তেমন ক্ষতি হয় না। আর এত দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে না পড়লে স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হেক্টর প্রতি ৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

লবণ সহিষ্ণু, অধিক ফলনশীল
আমন জাতের ব্রি-৭৩ ধান লবণসহিষ্ণু ও অধিক ফলনশীল। চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাতও হয় অন্য চালের চেয়ে ঝরঝরে। প্রতি হেক্টরে স্বাভাবিক ফলন হয় সাড়ে চার টন। কম লবণাক্ত জমিতে এ ধান ৬ দশমিক ১ টন ফলন দিতে পারে। এ জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রবও অনেক কম।

একাধারে বন্যা ও লবণসহিষ্ণু
ব্রি ৭৮ জাতের আমন ধানটি একাধারে বন্যা ও লবণসহিষ্ণু। বাংলাদেশে এই জাতের ধান এটিই প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছে। এর আগে আলাদাভাবে লবণাক্ততা ও বন্যা সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছিল। সে রকম দুই জাতের ধানের জিন একীভূত করে ব্রি-৭৮ উদ্ভাবন করা হয়েছে।

জোয়ার-ভাটায় চাষের উপযোগী
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জোয়ার-ভাটা এলাকায় চাষের উপযোগী জাত ব্রি ৭৬। এ জাতের ধানগাছের উচ্চতা ১৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এ জাতের ধান অন্য যে-কোনো আমনের চেয়ে হেক্টরপ্রতি এক টন বেশি ফলন দেয়।

উচ্চমাত্রার আমিষযুক্ত ধান
১৯৯৭ সালে ইরান থেকে নিয়ে আসা ‘আমল ৩’-এর সঙ্গে বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় মেগাজাত ব্রি ২৮-এর সংকরায়ণ ঘটিয়ে ব্রি’র বিজ্ঞানীরা নতুন জাতের একটি ধানের উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম ব্রি ৮১। বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন জাতের ধানের ফলন হবে প্রচুর, মানের দিক থেকে হবে রপ্তানিযোগ্য। এছাড়া এতে আমিষও থাকবে বেশি।

উচ্চ ফলনশীল সরু চালের ধান
জাতের নাম ব্রি ৬৩। এই জাতের ধান থেকে বোরো মৌসুমে উচ্চমানের চাল পাওয়া যায়। এর চাল সরু ও গুণাগুণ বালাম চালের মতো বলে জাতটি সরু বালাম নামে পরিচিত। এ ধানের চাল বাসমতির মতো লম্বা ও চিকন। ১৪৮ থেকে ১৫০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায় এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টরে সাড়ে ছয় থেকে সাত টন ফলন হয়। ব্রি ৬৩-র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত ধানের জাতের চেয়ে অনেক কম। সূত্র: ডিডব্লিউ।

বিপিআইসিসি-বাকৃবি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম