খাঁচার মাধ্যমে দেশি কৈ মাছকে সংরক্ষণ ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে

360

আমাদের দেশে আবহমানকাল ধরে দেশি কৈ মাছ অভিজাত ও জনপ্রিয় হিসেবে পরিচিত। মাছটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়া সত্ত্বেও ইদানিং বাজারে দেশি কৈ পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে।

বাণিজ্যিকভাবে পোনার সহজলভ্যতা ও দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় থাই ও ভিয়েতনাম কৈ বাজার দখল করে নিয়েছে। বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে উন্নত মা মাছের অপ্রতুলতা, পুকুরে চাষ ও পোনা উৎপাদনের কৌশল না জানা, পানি দূষণ, নদীর নাব্য না থাকায়, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের ফলে প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশি কৈ। পাশাপাশি জলাশয়ে প্রাকৃতিক বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়া ইতোমধ্যে মাছটি বাজার থেকে হারাতে বসেছে।

বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার (আইইউসিএন) পক্ষ থেকে মাছটি বিপন্নপ্রায় প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুখবর হলো, দেশি প্রজাতির কৈ মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. একে শাকুর আহম্মদ ইতোমধ্যে পুকুরে খাঁচায় নিবিড় গবেষণায় মা মাছ (ব্র“ড ফিস) উৎপাদন ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গুণগতমানের পোনা উৎপাদন ও খাঁচায় মাছচাষের সফলতা লাভ করছেন। এর ফলে দেশি কৈ মাছের সহজে পোনা প্রাপ্তির পথ সুগম হয়েছে।

এ ব্যাপারে গবেষক শাকুর আহম্মদ বলেন, দেশি কৈ মাছ প্রজনন মৌসুমে যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং বৃষ্টি থাকে তখন পুকুর থেকে কানকোর সাহায্যে হামাগুড়ি দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। এমনকি পুকুরে চারদিকে জাল দিয়ে বেড়া দিলেও সেখান থেকে চলে যায়। এই সমস্যা রোধকল্পে পুকুরে খাঁচা পদ্ধতির মাধ্যমে চাষ করে গুণগত মানসম্পন্ন মা মাছ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছি। পরে সেখান থেকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির থার্মোস্ট্যাটের সাহায্যে ভ্রূণীয় অবস্থায় বিভিন্ন তাপমাত্রায় তাপ প্রয়োগ করে পোনা তৈরি এবং সেখান থেকে অধিক ডিম ফোটার হারের ওপর নির্ভর করে উন্নতমানের পোনা বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত পোনাগুলোকে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে বেসিলাস ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অ্যাকিউরিয়াম, জগ এবং পুকুরে হাপা সিস্টেমে চাষ করা হয়। এ ক্ষেত্রে পোনার মৃত্যুর হার অনেক কম এবং মাছের বৃদ্ধি লক্ষণীয়। কারণ হিসেবে বলা যায় এই ব্যাকটেরিয়াগুলো পানিতে ছেড়ে দিলে পানির গুণাগুণ বজায় রাখে, পোনা মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। তাছাড়া মাছের অন্ত্রে গিয়ে তাদের খাবার পরিপাক ও শোষণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে তারা বেশি পরিমাণ খেতে পারে এবং তাদের বৃদ্ধি বেশি হয়।

গবেষক আরও জানান, খাঁচার মাধ্যমে মা দেশি কৈ মাছ উৎপাদন কৌশল এটিই প্রথম। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দেশি কৈ মাছকে সংরক্ষণ ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। বাংলাদেশে আমিষের চাহিদা পূরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেশি কৈ মাছের পোনা উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। তাই গুণগত মানসম্পন্ন অধিক সংখ্যক দেশি কৈ মাছের পোনা উৎপাদন করে যদি বাংলাদেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে হাওর এলাকায় ছাড়া যায় তাহলে সেখানকার জেলেদের জীবিকার পথ সুগম হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮এপ্রিল২০