ষড়যন্ত্র এর আগেও কম হয় নি তাকে নিয়ে। যেই দপ্তরের কাজ ছিলো শুয়ে বসে কাজ করা আর বিল তোলা পকেটে পুরা সেখানে জবাবদিহিতার শুরু তার হাত ধরেই। প্রাণিসম্পদকে তার পূর্বে আর কোনো সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা এতোটা আপন করে নিয়েছেন কি না তা জানা নেই কারো। মন্ত্রণালয়ের উচ্চ আসনে আসীন হলেও গ্রামের ক্ষুদ্র খামারির মুখেও যার নাম তিনি কাজী ওয়াছি উদ্দিন। দায়িত্ব পালন করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। পাশাপাশি ‘লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট (এলডিডিপি)’ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সিন্ডিকেটদের গাত্রদাহের কারন মূলত এটিই।
এইতো কয়েকমাস আগের কথা। দেশের দুগ্ধশিল্পকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লাগলো গুঁড়োদুধ আমদানিকারক চক্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে দিয়ে কয়েকটি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করিয়ে বাজারে রটিয়ে দিলো ‘তরল দুধ এন্টিবায়োটিক’ পাওয়া গেছে। সাথে সাথেই হাইকোর্টে রিট হলো। তরল দুধ বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা আসলো। জনমনে এটা এতোটাই প্রভাব বিস্তার করলো যে, বিষ খেলে হয়তো বেঁচে যাবে কিন্তু তরল দুধ খেলেই মরে যাবে, এমন অবস্থা। সারাদেশের মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে দেয়া হলো। খামারিরা যখন দিশেহারা তখন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন একজনই। তিনি কাজি ওয়াছি উদ্দিন। দেশের খামারিদের অভিভাবক হিসেবে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন এই ত্রুটিপূর্ণ গবেষণা নিয়ে। হুমকি দিয়েছিলেন আদালত পর্যন্ত যাওয়ার।
খামারিরা ভরসা পেয়েছিলো একজন ওয়াছি উদ্দিনকে দেখে। কিন্তু ওয়াছি উদ্দিন পাশে পান নি কাউকে। যেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোর জন্য দিনরাত তিনি খেটে যাচ্ছেন তারাও পাশে দাঁড়াই নি তার। উল্টো সকল দূর্ণীতিবাজরা এক হয়ে এই ইস্যুতে ওয়াছি উদ্দিনকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কারন তারা জানে তিনি থাকলে এই জায়গায় বসে পুকুর চুরি সম্ভব নয়। তখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিলো ঘরে বাইরে সবখানেই শত্রু তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক থেকে শুরু করে সাংবাদিক, সুশীল সমাজ সবার চক্ষুশূল কাজী ওয়াছি উদ্দিন। সকলেই তার অপসারণ চায়। কিন্তু কথায় আছে যার কেউ নেই, তার উপরওয়ালা আছেন। ঠিক তাই হলো, এ বিষয়টা নজরে আসলো ইংল্যান্ডে চিকিৎসারত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার।
জাতির জনকের কন্যার বুঝতে দেরি হলো না এসব ষড়যন্ত্রকারীদের কাজ। সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি জানালেন- এই গবেষণায় আমদানিকারকদের কারসাজির ব্যাপারে তদন্ত করা হোক। তাছাড়া, হুট করে একটা পরীক্ষা করেই এভাবে ফলাফল প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এরপরেই সব ঠান্ডা। আর কেউ কোনো টকশো করে নি। এরপর ঐ অধ্যাপক আর কোনো তথ্য নিয়ে আসেন নি। খামারিরা বেঁচে যায় ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে। যা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও একজন অতিরিক্ত সচিব ওয়াছি উদ্দিনের তৎপরতার জন্য। এরপর, তরল দুধ ভারতের চেন্নাই থেকে টেস্ট করিয়ে এনে দেখা যায় এতে যেসকল এন্টিবায়োটিকের উপাদান পাওয়ার দাবি করা হয়েছিলো তার অনেকটাই অনুপস্থিত আর যা আছে সেটাও সহনশীল মাত্রার অনেক নিচে।
এভাবেই খামারিদের একজন অভিভাবক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কাজী ওয়াছি উদ্দিন। যেখানেই কোনো অনিয়ম কিংবা দূর্ণীতি হয় সেখানেই শেষ ভরসা ওয়াছি উদ্দিন। প্রাণিসম্পদে একটি কথা ‘ওপেন সিক্রেট’ যে, এখানে দুইদল লোক চাকরি করে। একদল যারা ওয়াছি উদ্দিনকে আদর্শ মানে, আর আরেকদল যাদের কাছে লুটেপুটে খাওয়া ছাড়া, নীতি-নৈতিকথার কোনো বালাই নাই। মূল প্রসঙ্গে আসি, গতকালকে হঠাৎ করে চোখে পড়লো- কাজী ওয়াছি উদ্দিনকে নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে এবং বেনামী অনলাইনে অপপ্রচার। এটা কারা করছে তা এই সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট কারো অজানা নেই।
প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের জন্য প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এলডিডিপি অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন কাজী ওয়াছি উদ্দিন। এতো বড় প্রকল্প এর আগে প্রাণিসম্পদে আর আসে নি। তাই রুপপূর বালিশকান্ডের প্রাণিসম্পদীয় প্রেতাত্মাগুলো একাট্টা হয়েছে কীভাবে এটাকে চেটেপুটে খাওয়া যায়। এদেশে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কীভাবে পুকুরচুরি করা যায় তা তো ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি। এক্ষেত্রে তারা বাধা মনে করছে একজনকেই তিনি ওয়াছি উদ্দিন। তাই তাকে সরিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রকল্পের সকল কাজ তিনি নিজে তদারকি করায় সুবিধা করতে না পেরে প্রেতাত্মাগুলো অভিযোগ তুলেছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছাস্বাধীন কাজ করছেন ওয়াছি উদ্দিন।
এ দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, একজন খামারি হিসেবে সেই প্রেতাত্মাগুলোকে জানিয়ে দিতে চাই, কাজী ওয়াছি উদ্দিনকে এই সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই চিনে এবং জানে। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তার কাজ ও সততা সম্পর্কে অবগত। তাই এসব অপপ্রচার করে কোনো লাভ হবে না। দেশের খামারিরা ওয়াছি উদ্দিনের পাশে আছে। প্রয়োজন হলে এ অপপ্রচারকারী দূর্ণীতিবাজদের প্রেতাত্মাদের রুখতে মাঠে নামতেও প্রস্তুত আছে।
লেখক: যুগ্ম আহবায়ক, সিলেট ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ