খামারিরা মুরগির খামার বাদ দিয়ে গরুর খামার করছেন যেসব কারণে

502

শেয়ারে ডিমপাড়া মুরগির খামার করেছিলেন গুলবর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক। তাদের দেখাদেখি একটির পর একটি খামার গড়ে উঠতে থাকে এলাকায়। শখের বশে মুরগির খামার করেছিলেন কাজল রেখা। তবে, শেষ রক্ষা হয়নি, লোকসানে বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। খামারকে বানিয়েছেন খড়ির ঘর!

গ্রামীন ব্যাংক থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুইটি গরু কিনেছিলেন। এরপর নিজের জমানো ও ধারের টাকায় মুরগির খামার শুরু করেন নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার গৃহবধূ মোছাঃ কাজল রেখা। কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। প্রথমে মুরগি মারা গিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয় তাকে। তবে পরিশ্রম আর মনোবল দৃঢ় করে নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে সব পাল্টে দিয়ে লোকসানের টাকা তুলতে সক্ষম হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি।

কাজল রেখা বলেন, ৫ বছর আগে স্বামীর সহযোগিতায় মুরগির খামার শুরু করেছিলেন তিনি। পাঁচশ লেয়ার মুরগি কিনে খামার শুরু করতেই রাণীক্ষেত রোগে দুই’শ বিশটি মুরগি মারা যায়। দমে গেলেন না তিনি। বাঁকি মুরগি থেকে লাভের মুখ দেখায় আবারো মুরগি কিনেছিলেন তিনি। উপজেলার ১১ নংকালিকাপুর ইউনিয়নের চকরঘুনাথ গ্রামে তার বাড়ি।

রেখা জানান, স্বামী সাইদুর রহমান কৃষিকাজের পাশাপাশি মুদিখানার ব্যবসা করেন। সেখান থেকে যা আয় হয় তা দৃই ছেলের পড়াশুনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সেই টাকায় সংসার ঠিকমতো চলে না। দুই ছেলের পড়াশুনার খরচ চালাতে টানাটানিতে পড়ে নাভিশ্বাস উঠে যায়। অনেক ভেবে চিন্তে একটি মুরগির খামার করার চিন্তা করলেন। দুই লাখ টাকায় বাড়ির সামনের ফাঁকা জমিতে শুরু করেন লেয়ার মুরগির খামার।

এর মধ্যে স্বামীর সহযোগিতায় খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে। টানা পাঁচ মাস দিন-রাত পরিশ্রম করার পর শুরু হয় ডিম উৎপাদন। রেখার ৫ কাঠা আয়তনের খামারে বিনিয়োগ হয় ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকঋণ ১ লাখ টাকা। পরে এ খরচের ভারেই তার খামার আর বড় হয়ে উঠে না। পরে কিছু টাকা তুলতে সক্ষম হলেও লোকসান যায় ২ লাখ টাকা।

রেখা বলেন, ‘আমি খামার করা শুরু করি, মানুুষের দেখাদেখি। তখন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আর আমি খামারে প্রচুর সময় দিয়ে পরিচর্যা করি। পরিশ্রমের ফল হাতে পায়নি। ডিমের উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ৬ টাকার মতো আর বিক্রি সময়ে ৫ টাকা। লোকসানের টাকা আর উঠেনা। খামার বড় করতে পারিনি। পরে খামারে মুরগি তোলা বাদ দিয়ে খড়ির ঘর করেছি। আর ভবিষ্যতে মুরগির নাম মুখে নিব না। গরু পালনে কষ্ট যাই হোক লাভ বেশি, রিস্ক কম।”

আব্দুল বাকির সজীব বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি বাকি সময়ে আম্মুকে সহযোগিতা করেছি। এখন আমি রাজশাহীতে চলে যাওয়ায় সবকিছু আম্মুকে এক সামলাতে হয়। লোকসান আর পরিশ্রমের কারণে খামার বাদ দিয়েছে। আর মুরগির খামারে রিস্ক বেশি। ভালো প্রশিক্ষণ ও জনবল না থাকলে কেউ যেন মুরগির খামার না করে।’

রেখা বলেন, ‘ গ্রামীন ব্যাংক থেকে ঋণ খুব সহযেই পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণের অভাবে গ্রামের নারীরা এগিয়ে যেতে পারছেন না। প্রশিক্ষণ এবং ঋণসুবিধা পেলে গ্রামের বহু বেকার ও শিক্ষিত নারী গাভী পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। আমি এ ব্যাপারে নারীদের উৎসাহ দিচ্ছি। কিন্তু মুরগির খামার বাণিজ্যকভাবে করতে নিরুৎসাহিত করি।’

কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম বলেন,‘ কাজল রেখা’র দুই ছেলে রাজশাহীতে পড়াশুনা করে। মুরগির খামার করে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন জানা আছে। ইউনিয়নে এরকম অনেক নারী রয়েছে যারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন মুরগির খামার বাদ দিয়ে গরুর খামার করেছেন।

মান্দা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ অভিমান্য চন্দ্র বলেন,‘ উপজেলায় নিবন্ধিত ৩৯ টি এবং অনিবন্ধিত ১২১ টি গরুর খামার ; লেয়ার মুরগির নিবন্ধিত ২২ টি এবং অনিবন্ধিত ১০টি খামার; ব্রয়লার মুরগির নিবন্ধিত ৯১ টি এবং অনিবন্ধিত খামার রয়েছে ৫৪টি। এসব খামারিদের পাশে থেকে সাহস দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা এ পরিস্থিতিতে ভেঙ্গে না পড়েন। কোন খামারে সমস্যা হলে আমরা উপস্থিত হই এবং নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।’

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯মে ২০২২