খামারী ভাইদের নিজেদের ভুল বা অসচেতনতার জন্য খামারে যে সব সমস্যা দেখা দেয় “অ্যমোনিয়া বার্ন”এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
অ্যামোনিয়া গ্যাস কিভাবে সৃষ্টি হয়
মুরগীর পায়খানায় ইউরিক এসিড থাকে যা ব্যাকটেরিয়াল ডিকম্পোজিশনের ফলে অ্যমোনিয়া গ্যাস তৈরী হয়। তাছাড়া ভেঁজা বা স্যাঁতসেঁতে লিটার থেকেও অ্যমোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। এটি একটি ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত গ্যাস। যদি খামারে যথেষ্ট ফ্রেশ বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকে অথবা খামারে সবসময় পর্দা লাগানো থাকে তবে এই অ্যমোনিয়া গ্যাস খামার থেকে বের হতে পারেনা। যার ফলে খামারে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়।
খামারে অ্যমোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধির কারণ
১। মুরগীর পায়খানার ব্যাকটেরিয়াল ডিকম্পোজিশন।
২। ভেঁজা বা স্যাঁতসেঁতে লিটার (কাঠের গুড়াতে বেশী হয়)।
৩। পায়খানায় অতিরিক্ত পানি বের হলে।
৪। বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমান বেশী হলে।
৫। অপর্যাপ্ত বায়ুপ্রবাহ।
৬। ত্রুটিযুক্ত পর্দা ব্যবস্থাপনা।
অ্যামোনিয়া গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব
প্লোট্রি খামারের জন্য বায়ুতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের স্বাভাবিক মাত্রা ২০-২৫ পিপিএম। এর বেশী মাত্রায় অ্যমোনিয়া গ্যাস খামারে থাকলে তখন নানা রকম সমস্যা হতে পারে। যেমনঃ
১। খামারে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশী মাত্রায় অ্যামোনিয়া গ্যাস থাকলে মুরগীর খাদ্য গ্রহনের পরিমান কমে যায়। ফলে ওজন বৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। দেখা গেছে যে এক্ষেত্রে মুরগীর ওজন ১৭%-২০% কমে যেতে পারে।
২। FCR বেড়ে যায়। ফলে মুরগী বেশী খাবার খেয়ে কম ওজন দেবে।
৩। মুরগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৪।মুরগীর জীবনীশক্তি কমে যায়।
৫। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে এ গ্যাস শ্বাসনালীতে গেলে শ্বাসনালীতে ইনজুরি হয়। পরবর্তিতে সেখানে ই. কোলাই ইনফেকশন হতে পারে। যার ফলে এয়ারস্যাকুলাইটিস, নিউমোনিয়া, সেপটিসেমিয়া হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মুরগীর পেটে পানি জমতে পারে।
৬। অ্যামোনিয়া গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশী দেখা যায় মুরগীর চোখে। মাত্রাতিরিক্ত গ্যাসের কারনে মুরগীর কনজাংটিভাইটিস, চোখ ফুলে যাওয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিতে পানি পড়া, চোখের মনি ঘোলা হয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন চোখের সমস্যা হতে পারে।
৭। অ্যামোনিয়া গ্যাস ইনফেকশিয়াস কোরাইজা সহ বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রীয় ভাইরাল রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৮। মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারনে মুরগীর ডিম উৎপাদনের পরিমান কমে যেতে পারে।
করনীয়
১। নিয়মিত লিটার পরিষ্কার করা।
২। লিটার শুকনো রাখা।
৩। খামারে ফ্রেশ বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা।
৪। পর্দা ব্যবস্থাপনা ঠিক করা।
৫। আক্রান্ত মুরগী গুলোকে সরিয়ে রাখা।
৬। প্রাণী চিকিৎসক বা ভেটেনারিয়ানের পরামর্শ মত পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া।
সতর্কীকরণ
শীতকালীন সময়ে প্রথম দশ দিনে পর্দা উঠিয়ে রাখতে চাইলেও সতর্ক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ঘরের ভিতরে ঘর যদি প্লাষ্টিক বা ফিডের ব্যাগ দিয়ে তৈরী করা থাকে তাহলে বাইরের দিকের পর্দা উঠানো হলে ভিতরের ঘরের পর্দা ফেলা থাকবে।এবং ভিতরের ঘরের পর্দা তোলা হলে বাইরের পর্দা নামানো থাকবে।প্রথম দশদিনে বাচ্চাদের শীতকালীন সময়ে ঠাণ্ডা যাতে না লাগতে পারে এইজন্য সতর্ক থাকা উচিত।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১২ অক্টোবর ২০২১