খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ

311

যন্ত্র

সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, পলস্নী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিস্তার এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পটি বর্তমানে বাংলাদেশের ৭টি বিভাগের ৩১টি জেলার অন্তর্গত ১১৫টি সাইটে (উপ-প্রকল্প এলাকা) এবং ০৭টি মাদার ট্রায়েল এলাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

যা ক্রমান্বয়ে ৪০টি জেলার অন্তর্গত ২০০টি সাইটে উপ-প্রকল্প এলাকায় বাস্তবায়িত হবে। তার মধ্যে পরীক্ষামূলক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে শেরপুর, বগুড়া অঞ্চলের চক পাঠারিয়া গ্রামে। এখানে ছোট ছোট আইল ভেঙে বড় আকারের মাঠ তৈরি করে যন্ত্রের মাধ্যমে চাষ যোগ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে আরডিএ বগুড়া (পলস্নী উন্নয়ন একাডেমি) এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

আধুনিক পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও পানি ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি আধুনিক পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি যেমন- এডবিস্নউডি (অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং) অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে ভিজানো এবং শুকানো পদ্ধতিতে জমিতে সেচ প্রদান, রেইজড বেড পদ্ধতিতে চাষাবাদ, এসআরআই (সিস্টেম অব রাইচ ইন্টেনসিফিকেশন) পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপন এবং ট্রাইকো-কম্পোস্ট উৎপাদন এবং ব্যবহার প্রযুক্তিসমুহ উপ-প্রকল্প এলাকা ও মাদার ট্রায়েলগুলোতে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে তথা ভূগর্ভস্থ পানি সাশ্রয়ে কৃষকরা পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি এসআরআই (সিস্টেম অব রাইচ ইন্টেনসিফিকেশন) পদ্ধতিতে ধানের চারারোপণ করে কৃষকরা অধিক ফসল উৎপাদন করছেন।

গত বোরো মৌসুমে কৃষকরা বিশেষ পদ্ধতিতে (ট্রে-পদ্ধতি) ১৪-২০ দিন বয়সের চারা তৈরি করে তা যান্ত্রিকভাবে রোপণ করেছেন। অল্পবয়সী চারা রোপণে দেখা গেছে, প্রতি গোছায় কুশির সংখ্যা প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এবং সেই অনুপাতে শিষের সংখ্যাও অধিক হয়েছে এবং পানির পরিমাণও প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অনেক কম লেগেছে।

তাছাড়াও এডবিস্নউডি (অল্টারনেট ওয়েট অ্যান্ড ড্রায়িং) অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে ভিজানো এবং শুকানো পদ্ধতিতে জমিতে সেচ প্রদান করায় প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে সেচ সংখ্যা ও পানির পরিমাণ অনেক কম লেগেছে পক্ষান্তরে ধানের ফলন অনেক ভালো দেখা গেছে। বেড-নালা পদ্ধতিতে সরিষা, গম, ধান চাষে দেখা গেছে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ফলন ২০-৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

আধুনিক এই পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তিসমুহ এবং যান্ত্রিকীকরণ বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়নে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে; তা ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন যারা নিজেরা যান্ত্রিকভাবে রোপণ উপযোগী চারা তৈরি করছে।

কৃষকের জমিতে রাইস ট্রান্সপস্নান্টার যন্ত্রের সাহায্যে চারা রোপণ করে দিচ্ছেন এতে করে কৃষকরা সাশ্রয়ী মূল্যে জমিতে চারা রোপণ করে অধিক ফসল উৎপাদন করছেন পক্ষান্তরে উদ্যোক্তারাও নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, প্রযুক্তিগুলো লাগসই এবং যুগোপোযোগী যা ব্যবহার করে শুধু অধিক ফলনই নয়, উৎপাদন খরচও অনেক কমেছে।

এছাড়াও পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উদ্বুদ্ধকরণে কৃষকের জমিতে প্রদর্শনী স্থাপনের পাশাপাশি ফার্মারস ফিল্ড স্কুল (প্রশিক্ষণ), মাঠ দিবস, উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬২টি ব্যাচ কৃষক (প্রতি ব্যাচে ৪০ জন) ফিল্ড স্কুল (২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ), ১২০টি মাঠ দিবস, অবহিত ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ১৮ ব্যাচ (প্রতি ব্যাচে ২৫ জন), আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি অপারেশন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ৪ ব্যাচ (প্রতি ব্যাচে ১৬ জন) সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে সারাদেশে কম পানিতে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভম হবে এবং খামার যান্ত্রিকীকরণের ফলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হতে পারবেন।

প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত বোরো মৌসুমে প্রকল্প এলাকায় পানি সাশ্রয়ী এই আধুনিক প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করাই প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ফলন বৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ২০% এবং পানি সাশ্রয় হয়েছে গড়ে ৩০ ভাগ। পানি সাশ্রয়ী এই আধুনিক প্রযুক্তগুলো সমস্ত বাংলাদেশের আবাদি জমিতে বাস্তবায়িত হলে দেশ ও জাতি আর্থিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে। বিগত কয়েক বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছেন। পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিস্তার এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্প সহকারী পরিচালক প্রোগ্রাম কৃষিবিদ মো. মোজাহারুল হক বলেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণে কৃষকরা আগ্রহী হলে অনেক বেশি উৎপাদন সম্ভব।

মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে পারলে কৃষি উৎপাদনে শতভাগ সফলতা বয়ে আনবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ