পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুরে রয়েছে ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক।
খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। তাই প্রতিদিন খেতে পারেন খেজুর।
পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের অনেকটাই খেজুর থেকে আসে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে প্রচলিত খেজুরের বদলে শুকনো খেজুরকে ডায়েটে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
সুস্বাদু আর বেশ পরিচিত একটি ফল, যা ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয় চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি, যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন খেজুর।
আয়রনে ভরপুর খেজুর খেতে পারেন প্রতিদিন। অন্তত দুটি খেজুর যদি প্রতিদিন খান তবে অনেক রোগ কাছেও ঘেঁষবে না।
পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের সবই রয়েছে খেজুরে।
আসুন জেনে নেই খেজুরের কিছু উপকারিতা:
শক্তি বর্ধনে: খেজুর শারীরিক ও মানসিক শক্তিবর্ধক। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান, যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিসহ হজম শক্তি, যৌনশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খেজুর ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যাত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে। খেজুর ও খেজুরের ফুল পরাগরেণু ডিএনএ’র গুণগতমান বৃদ্ধি করে এবং অণ্ডকোষের শক্তি বাড়ায়।
হার্টের সমস্যায়: এক্ষেত্রে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরো রাত খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থতায় কাজ করে।
দেহের দুর্বলতায়: খুব দুর্বল লাগলে ঝটপট কয়েকটি খেজুর খেয়ে নিলে তাত্ক্ষণিক দেহে শক্তি পাবেন।
হজম ও রুচি বাড়ায়: রুচি বাড়াতে খেজুরের কোনো তুলনাই হয় না। শিশুদের যারা ঠিকমতো খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে।
ক্যান্সার থেকে রক্ষায়: খেজুর বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যে: নিয়মিত খেজুর খেয়ে খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলে। তুলনামূলক শক্ত খেজুরকে পানিতে ভিজিয়ে (সারা রাত) সেই পানি খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
রক্তশূন্যতায়: খেজুর লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে রক্তশূন্যতায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন খেজুর খেলে দেহের আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়: খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম বিদ্যমান থাকে, যা মানুষের স্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহতাকে ৪০% কমিয়ে দেয়।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়: খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং খুব অল্প পরিমাণে সোডিয়াম। এতে করে প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দেহের খারাপ কলেস্টোরল কমায় এবং ভালো কলেস্টোরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে খেজুর বেশ উপকারী। খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে। নারীর শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুর বেশ কার্যকর। খেজুরে থাকা ডায়েটরই ফাইবার দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত খেজুর খেলে ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। খেজুর দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে বিশেষভাবে সহায়ক। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস রাতকানা রোগ ভালো করতে সাহায্য করে থাকে। মুখের অর্ধাঙ্গ রোগ, পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী।
যাঁদের জন্য ক্ষতিকর:
যাঁদের ডায়াবেটিস এবং শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি রয়েছে, তাঁদের বেলায় পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খাওয়া উচিত।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৪ এপ্রিল ২০২১