গবাদিপশুর রক্তশূন্যতা জন্ডিস ও জ্বর হলে করণীয়

345

বাংলাদেশের আবহাওয়া পশু পালনের অত্যন্ত উপযোগী। গৃহপালিত এসব পশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের হলেও প্রতি বছর রক্তশূন্যতা জন্ডিস ও জ্বর রোগে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ টাকা মূল্যের গরুর মৃত্যু হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেয়া যাক গবাদিপশুর রক্তশূন্যতা জন্ডিস ও জ্বর হলে করণীয় দিকগুলো।

এনাপ্লাজমোসিস গরুর একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। যার কারণে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এটি মূলত রক্তবাহিত রোগ। এ রোগে রক্তশূন্যতা জন্ডিস ও জ্বরের লক্ষণ দেখা যায়।

রোগতত্ত্ব : এ রোগ Anaplasma marginale নামক এক প্রকার রিকেটশিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। এই জীবাণু আকারে খুবই ছোট, Spherical আকৃতির কিন্তু সাইটোপ্লাজম নেই। এই জীবাণু লোহিত কণিকার (RBC) স্ট্রোমা অবস্থান করে। লোহিত কণিকায় প্রবেশের সময় জীবাণুর ডায়ামিটার থাকে ০.২-০.৫/বাইওনারি ফিসনের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে Inclusions body- এর ডায়ামিটার ১/২ পর্যন্ত হয়ে থাকে। Anaplasma Centrale লোহিত কণিকার কেন্দ্রে অবস্থান করে।

রোগ পরিবহণ: এনাপ্লাজমা রোগের জীবাণু সাধারণত ২০ প্রজাতির আঠালি (Ticks) দ্বারা অসুস্থ গরু থেকে সুস্থ গরুতে পরিবাহিত হয়ে থাকে। তবে বিশেষ করে Boophilus Spp এবং Dermacentor Spp খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরিবাহক।
এনাপ্লাজমা জীবাণু জৈবিকভাবে আঠালির দ্বারা পরিবাহিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে পুরুষ আঠালি এনাপ্লাজমা জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। স্ত্রী আঠালি খুব কম পরিমাণে পরিবহন করে থাকে।

Horse flies (Tabanus spp) এবং Stable flies (stomoxys spp) সমভাবে এনাপ্লাজমা রোগের জীবাণু যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ছড়ায়। এই মাছিগুলো যান্ত্রিক বাহক। এ রোগে সংক্রামিত গরুর রক্ত দ্বারা সহজেই যান্ত্রিকভাবে সুস্থ গরুকে বিভিন্ন প্রকার অপারেশন, কাটাছেঁড়া, রক্তপাত, শিংকাটা, খাসি করানো, কানে ট্যাগ করানো এবং টিকা প্রদানের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গরমকালে (মার্চ-নভেম্বর) এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে থাকে।

লক্ষণ : এ রোগের তীব্রতা/ মারাত্মকতা গরুর বয়সের ওপর নির্ভর করে। বাছুর গরু খুব মৃদুভাবে আক্রান্ত হয় এবং খুব একটা মারা যায় না। এমনকি ১ বছর বয়সের গরু আক্রান্ত হলে বা লক্ষণ তীব্র হলেও চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক গরুতে এনাপ্লাজমা খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে। তীব্র রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং মৃত্যুর হার ২০-৫০%। সব প্রজাতির গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়।

আক্রান্ত গরু ঝিমাবে, মনমরা হয়ে থাকবে, ক্ষুধামন্দা, গায়ে জ্বর সাধারণত ১০৪-১০৬ ফারেন হাইট, দুধ উৎপাদন দ্রুত কমে যাবে। রোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তশূন্যতা দেখা দেবে, উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন কমে যাবে, শরীর একদম ভেঙে যাবে, পানিশূন্যতা তীব্রভাবে লক্ষণীয়, জন্ডিস দেখা দিতে পারে, আক্রান্ত গরুকে হাঁটাহাঁটি করালে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা যাবে, যদি চিকিৎসার পর গরু বেঁচে যায় তবে ধীরে ধীরে সবল হয়ে থাকে। বেঁচে যাওয়া গরু কখনও এ রোগের সারা জীবন বাহক হিসেবে কাজ করে।

রোগ নির্ণয় : আক্রান্ত এলাকায় এ রোগে আক্রান্ত সন্দেহজনক গরুর রক্ত প্রস্রাব ছাড়াই রক্তশূন্যতা দেখা যাবে। কখনও জন্ডিসে লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

রক্ত কাঁচ Giemsa Stained করলে জীবাণু শনাক্ত করা যাবে, ৫০-৬০% লোহিত কণিকা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। Complement fixation এবং Indirect FA এবং DNA Probe test করেও রোগ নির্ণয় করা যায়।
আক্রান্ত গরুর লোহিত কণিকা ভেঙে ধ্বংস হয়ে যায়, রক্ত পাতলা পানির মতো দেখায়। প্লিহা ও কলিজা আকারে বড় হয়ে যায়। পিত্তথলি ফুলে যায়। রক্তশূন্যতা ও জন্ডিস ছাড়াই যদি গরু দ্রুত মারা যায়, সে ক্ষেত্রে তড়কার মতো মৃত গরুর প্লিহা ফোলা/বড় দেখা যাবে।

চিকিৎসা : খুব ফলপ্রসূ চিকিৎসা হলো- টেট্রাসাইক্লিন ব্যবহার করা। এছাড়া গবাদি পশু সংক্রান্ত যে কোন পরামর্শের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। শীতকালে মাছের রোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতিতে যা করতে হবে সংবাদটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭জানুয়ারি২০২১