গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে গ্রোথ প্রোমোটার বা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল আশির দশকে। বর্তমানে বাংলাদেশে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের জন্য স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। কিন্তু এসব কৃত্রিম অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রমোটার প্রাণিদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। পশুখাদ্যে ‘প্লানটেইন ঘাস’ ব্যবহার করে অ্যান্টিবায়োটিকের এ ক্ষতিকর প্রভাবের হাত থেকে গবাদি পশুকে রক্ষা ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিতে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল–মামুন।
পশুখাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে উৎপাদিত পশুপণ্য অর্থাৎ ডিম, দুধ ও মাংসের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ে। আর এসব খাবার গ্রহণের ফলে মানুষের শরীরেও ব্যবহার পরবর্তী (রেসিডিউয়াল) ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস, হৃদরোগ জনিত সমস্যা, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, অটিজমসহ বিভিন্ন ভয়াবহ রোগ দেখা দেয়। গ্রোথ প্রোমোটার ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক অনুধাবন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নত বিশ্বে ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পশুখাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকেই বিজ্ঞানীরা গ্রোথ প্রোমোটারের বিকল্প পশুখাদ্য খুঁজতে থাকেন।
গবেষণায় দেখা যায়, ঔষধি উদ্ভিদ বা প্রাকৃতিক ভেষজ হতে পারে বিকল্প পশুখাদ্য। এ রকমই বহুবর্ষজীবী ঘাস জাতীয় ঔষধি উদ্ভিদ হলো প্লানটেইন (Plantago lanceolata L)। যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই পশুর শরীর অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রমোটার কিংবা তার চেয়ে বেশি হারে বর্ধিত করবে।
ঘাস চাষের বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুন বলেন, নভেম্বরের শুরুতে বীজ ছিটিয়ে দিলে তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। এটি যেকোনো ধরনের মাটিতে জন্মায়। বীজ বপনের ৪৫-৫৫ দিন পর প্রথম কাটিং দেয়া যায়। এর একমাস পর দ্বিতীয় কাটিং এবং দ্বিতীয় কাটিংয়ের একমাস পর তৃতীয় কাটিং দেয়া যায়।
এর উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, রোমন্থক প্রাণি যেমন গরু, ছাগল ও ভেড়া ইত্যাদিকে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে খুব সামান্য পরিমাণে (পোলট্রিতে ১%, ভেড়ায় ৪%, গরুতে ৫-১০%) ফ্রেশ প্লান্টেইন এবং এর পাউডার মিশিয়ে খাওয়ালে প্রাণির উচ্চ তাপমাত্রার পীড়ন (হিট স্ট্রেস) কমিয়ে প্রোটিন সংশ্লেষণ বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় মাংসের উৎপাদন, স্বাদ ও রং বৃদ্ধি পায় এবং পচনরোধ করে। টি হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী প্রাণীর দুধের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ–সবল বাচ্চা জন্ম দেয়। একইসঙ্গে ফ্যাটি এসিডের (ওমেগা–৬ এবং ওমেগা–৩) অনুপাত কমাতে সহায়তা করে। এতে মানুষের হার্ট ভালো থাকে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও আয়ুষ্কাল বাড়ায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ক্যান্সার ও অটিজম প্রতিরোধ করে।
‘প্লানটেইন ঘাস ও নিরাপদ প্রাণি খাদ্য’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপুষ্টি বিভাগ ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ঘাসের চাষাবাদ শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খান বলেন, দীর্ঘ দিন গবেষণা করে গবেষক এ ঘাসটিকে গবাদিপশুর জন্য উপকারী প্রমাণ করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে এদেশের আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী করে তুলেছেন। যারা গবাদিপশু পালন করেন, নিঃসন্দেহে আপনারা এ ঘাস চাষের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন। আর এটা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের এ প্রযুক্তি গ্রহণ বরতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০১সেপ্টেম্বর২০