‘লাম্পি’ একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। রোগটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। এ রোগ দ্রুত সময়ের মধ্যে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় গবাদিপশুর মাঝে ব্যাপক হারে লাম্পি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশ গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা গবাদিপশু নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন সময়মতো ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে লাম্পি আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়।
জানা গেছে, গত ১০ দিনে কেন্দুয়া উপজেলার খরমুহরি, রামপুর, ছিলিমপুর, কান্দিউড়া, নোয়াদিয়া, রোয়াইলবাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশ গরু লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আগে কখনও এমন প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয়ায় স্থানীয় কৃষকরা প্রথমে রোগটি চিনতে পারেনি। পরে আক্রান্ত গরু চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রোগটি শনাক্ত করেন।
রামপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম এবং সামছু মিয়া তাদের আক্রান্ত গরুর লক্ষণ বর্ণনা করে জানান, প্রথমে গরু জ্বরে আক্রান্ত হয়। জ্বরের সঙ্গে মুখ এবং নাক দিয়ে লালা আসে। চামড়ায় গুটি বা পি আকৃতির ক্ষত ধারণ করে এবং লোম উঠতে থাকে। ক্ষতগুলো ক্রমশ মুখ এবং পাসহ শরীরের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আক্রান্ত গরু মুখে কোনো খাবার নিতে চায় না। এক পর্যায়ে গরুগুলো মারাত্মক দুর্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
ছিলিমপুর গ্রামের বিপুল মিয়া জানান, তার খামারের অন্তত ১০টি গরুর এমন লক্ষণ দেখা দিয়েছে। কেন্দুয়ার পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলাতেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
কান্দিউড়া গ্রামের আক্কাছ মিয়া ও নোয়াদিয়া গ্রামের জুলহাস মিয়া জানান, তাদের নিজের গরুসহ গ্রাম দুটির আরও অনেকের গরু বিরল এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রথমদিকে অনেকে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে গরুকে খাইয়েছেন। এতে অনেকের দুই-তিন হাজার টাকা পর্যন্ত খরচও হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। পরবর্তী সময়ে তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করেন।
কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খুরশিদ দেলোয়ার লাম্পি রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা স্বীকার করে বলেন, এটি মূলত ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এ রোগ দেখা দেয়। যা এক গরু থেকে আরেক গরুতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই কৃষকরা আক্রান্ত গরু নিয়ে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আসছেন। আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাক্সিন দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানোরও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনোরঞ্জন ধর জানান, লাম্পি রোগের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মতো আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা হলে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। আক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য কেন্দুয়া উপজেলায় তিন হাজার ‘গোটপক্স’ ভ্যাক্সিন সরবরাহ করা হয়েছে। তবে রোগটিতে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই।
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে লাম্পি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। ১৯২৯ সালে জাম্বিয়ায় প্রথম এ রোগ শনাক্ত হয়। আফ্রিকার দেশগুলোতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। সেখানে রোগটির কারণে একাধিকবার মহামারি হয়েছে। আফ্রিকায় এ রোগের গড় মৃত্যুর হার শতকরা ৪০ ভাগ। মশা-মাছি এ রোগের প্রধান বাহক বলে জানা গেছে।
সূত্র: জাগো নিউজ
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৬মে২০