গবাদি পশুর মারাত্মক বাদলা রোগের কারন, লক্ষণ ও প্রতিকার

86

বাংলাদেশ কৃষি নির্ভরশীল দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষি (গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ) কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। গবাদি পশুরও রোগ বালাই হয়, যা কৃষকদের অনেক দুর্ভাবনার বিষয়।

গবাদি পশুর মারাত্মক রোগগুলোর মধ্যে বাদলা বা ব্লাক কোয়াটার একটি অন্যতম। এ রোগে পশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ মৃত্যুর হার ১০০ ভাগই। প্রতি বছর বিশেষত বর্ষার পরে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় অনেকাংশে। বাংলাদেশের অনেক গরুই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ।। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক গবাদি পশুর বাদলা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে:

লক্ষণ:
বাদলা রোগের লক্ষণ কয়েকটি অংশে ভাগ করা যায়। যথা
১. অতি তীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পশু মারা যায়। এমনকি ১-২ ঘণ্টার মধ্যে পশু কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই মারা যায়।
২. তীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে–

প্রথমত পশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। পশুর আক্রান্ত পায়ের ফলে সে খোঁড়াতে থাকে এবং মারাত্মকভাবে বিষণ্ন দেখায়; আক্রান্ত স্থান ফুলে উঠে, মাংস পেশিতে গরম অনুভূতি হয়;
ফুলে উঠা যায়গায় হাত দিয়ে চাপ দিলে পুরপুর শব্দ করে। প্রথমে অল্প জায়গা ফুলে উঠে কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত তা ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিছু সময় চামড়ার ওপর ঠাণ্ডা অনুভূত হয় রক্ত চলাচল বন্ধ থাকার জন্য।

আক্রান্ত স্থানে ফুটা করলে প্রচ- দুর্ঘন্ধযুক্ত কালো রক্ত দেখা যায়; শরীরের যে কোনো অংশের মাংসপেশিতে আক্রান্ত হতে পারে, তবে ঘাড় ও চোয়ালের পেশিতে বেশি দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায় আক্রান্ত জায়গার পেশিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে কালো রঙের রক্ত ঝরতে থাকে।

বাদলা রোগের জীবাণু চামড়ার নিচে গ্যাস উৎপন্ন করে থাকে; গলার কাছে ফুলা অধিক হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়; পেটে গ্যাস জমা হয় এবং মাজেল শুকিয়ে যেতে থাকে; পশুর খাওয়া দাওয়া ও জাবর কাটতে বেশ সমস্যা হয়।

প্রতিকার:
১.আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাণীর খাবার পাত্র ও খাবার উপাদান ঠিকমতো পরিষ্কার করে এবং দেখে শুনে খাওয়াতে হবে।ময়লা স্থানের ঘাস না খাওয়ানো ভালো।প্রতি বছর নিয়মিতভাবে প্রাণীকে ঠিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২.গরুর ক্ষেত্রে তিন মাসের বেশি বয়সের বাচ্চাকে ৫ মিলি বাদলা ভ্যাকসিন চামড়ার নিচে দিতে হবে ছয় মাস পরপর। ছাগল ভেড়ার ক্ষেত্রে ২ মিলি চামড়ার নিচে ৬ মাস পরপর (প্রথম ডোজ দেয়ার ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিলে তার কার্যকারিতা এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।)

৩.সদা পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে খামারের ভেতরে এবং বাইরে। এগুলো সঠিকভাবে খেয়াল করলে বাদলার প্রভাব থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থেকে দেশের প্রাণিসম্পদের উন্নতি সম্ভব হবে।