গবেষকদের মতে, ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া যাবে

346

গরু
গরুর নতুন একটি রোগ ল্যাম্পি স্কিন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত হলে অনেকেই পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন। এই মাংস খাওয়া যাবে কি না, এ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

একাধিক গবেষক বলছেন, ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে কোনো সমস্যা নেই। সাধারণত এ রোগের জীবাণু মানবদেহে কোনো ক্ষতি করে না। আর সঠিক তাপমাত্রায় মাংস সেদ্ধ হলে জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে যেকোনো রোগে আক্রান্ত পশুর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই গবেষকেরা।

মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম বলেন, ল্যাম্পি স্কিন নতুন একটি রোগ, যা আগে বাংলাদেশে ছিল না। দু-এক বছর ধরে অন্য দেশ থেকে আসা গরুর মাধ্যমে এই জীবাণু দেশে প্রবেশ করেছে। তা ছাড়া সংকর জাতের গরুতে এর প্রাদুর্ভাব কিছুটা বেশি। আক্রান্ত পশুর গায়ে গুটি দেখা যায়। তবে এটি ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় পশুর মাংস সেদ্ধ করার সময় জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, ব্যাকটেরিয়া উচ্চ তাপে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) সৃষ্টি করলেও ভাইরাস তা করে না। তাই আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে কোনো সমস্যা নেই। তবে না খাওয়াই ভালো।’

জানা গেছে, ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে প্রথমে বসন্তের মতো গুটি দেখা যায়। দু-এক দিনের মধ্যেই গরুর পুরো শরীরে থাকা গুটিগুলো ঘায়ে পরিণত হয়। এ সময় গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয়। আক্রান্ত গরু খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থান পচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে পড়তে পারে।

মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ল্যাম্পি স্কিন ব্যাকটেরিয়াজনিত অ্যানথ্রাক্স রোগের মতো ছোঁয়াচে জুনোটিক রোগ নয়। জীবাণু পশু থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে পশুতে ছড়ালে তাকে জুনোটিক রোগ বলা হয়। তাই ল্যাম্পি স্কিন রোগে মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভাইরাসজনিত হওয়ায় এর তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে বাজারে পাওয়া যায়, এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন (সংক্রমণ) থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ মো. বাহানুর রহমান বলেন, ‘ভাইরাসজনিত রোগের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে ভ্যাকসিন (টিকা) প্রদান। ভ্যাকসিন না থাকায় রোগটির প্রকোপ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তেমন কিছু করার থাকে না। যেহেতু এটি নতুন রোগ, এর ভ্যাকসিন আমাদের কাছে নেই। যে প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে, তাতে এ রোগ নিয়ে গবেষণা করার সময় এসে গেছে।’

ল্যাম্পি স্কিন নিয়ে এই গবেষকদের সারকথা হচ্ছে, এই রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে কোনো সমস্যা নেই। আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়া অনেকটা রুচির ব্যাপার। রোগাক্রান্ত কোনো পশুর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ সব সময়ই দিয়ে থাকেন তাঁরা। ল্যাম্পি স্কিন রোগের ক্ষেত্রেও তাঁদের একই পরামর্শ। কারণ, রোগাক্রান্ত পশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ল্যাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গরু অন্য কোনো জীবাণু দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে। তাই যেকোনো রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস বা দুধ না খাওয়াই ভালো।

মালিকেরা জানান, ল্যাম্পি স্কিন রোগের লক্ষন হিসেবে প্রথমে গরুর গায়ে ছোট ছোট ফুসকুরি দেখা দেয়। খুব দ্রুতই এগুলো গরুর পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরে। দু-এক দিনের মধ্যেই গরুর পুরো শরীরে থাকা গুটিগুলো ঘায়ে পরিণত হয়। এ সময় গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয় এবং গরু খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থান পচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে খসে পড়ে। সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা বা রোগের লক্ষন বুঝতে না পারায় বেশ কিছু গরু ইতিমধ্যে মারা গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ল্যাম্পি স্কিন রোগে এ পর্যন্ত ১০৫টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগে কোথাও গরু মারা যাওয়ার খবর তাঁদের জানা নেই।

এলাকার মানুষকে সচেতন করতে ইতিমধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ ও সভা-সেমিনারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় রোগটির প্রকোপ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ