গরুর আঁচিল রোগের চিকিৎসায় করণীয়

1009

Screenshot_20181104-190446
গরুর আঁচিল রোগের চিকিৎসায় করণীয় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। গরু পালনে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হল গরুর বিভিন্ন প্রকার রোগ-ব্যাধি। গরু পালন করে সফল ও লাভবান হতে চাইলে সময়মতো গরুর রোগের চিকিৎসা করা জরুরী। গরুর অনেক সময় আঁচিল হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই গরুর আঁচিল রোগের চিকিৎসায় করণীয় সম্পর্কে-

গরুর আঁচিল রোগের চিকিৎসায় করণীয়ঃ
আঁচিল গরুর ত্বকের উপড় কোষবৃদ্ধি ঘটিত একটি ভাইরাস জনিত রোগ। কমবেশি সব ধরনের গবাদি পশুতে হলেও গরুতে এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। বয়স্ক গরুর তুলনায় কম বয়সের বাড়ন্ত গরুতে এই রোগ বেশী হয়ে থাকে। নিচে এই রোগের বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

গরুর আঁচিল রোগের লক্ষণঃ

আক্রান্ত গরুর শরীরে ছোট ছোট পিন্ডের মত গোটা দেখা যাবে। প্রাথমিক অবস্থায় গরুর মাথায়, চোখের চারপাশে, ঘাড়ে ও কাঁধে এবং পায়ে আক্রমন বেশি হয়। ত্বকের উপড় কোষ বৃদ্ধি হয়ে আঁচিল সৃষ্টি হয়, ফলে আস্তে আস্তে সারা শরীর ছড়িয়ে পড়ে।

গরুর আঁচিল রোগের চিকিৎসাঃ

অটোহিমোথেরাপি(Autohemotherafy)

১ম পদ্ধতিঃ

নতুন সিরিজের মাধ্যমে আক্রান্ত গরুর জগুলার শিরা থেকে রক্ত বের করে দ্রুত মাংশ পেশীতে দিতে হবে। ছোট গরুতে ৫ মিঃ লিঃ এবং মাঝারি ও বড় গরুতে ১০-১৫ মিঃলিঃ। আক্রান্তে তীব্রতা অনুযায়ী এর মাত্রা ২০ মিলি পর্যন্ত দেওয়া যাবে। একই নিয়মে ৭ দিন পর পর আরও ২ টি ডোজ দিতে হবে।

নোটঃ উক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেক গরুতে আঁচিল রোগ ভালো হতে এক থেকে দের মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

২য় পদ্ধতিঃ

অটোজেনাস ভ্যাকসিন (Autogenous vaccine)

উপকরণসমূহঃ

গরুর ত্বক থেকে আঁচিল – ৫ গ্রাম

নরমাল স্যালাইন – ১০ মিঃলিঃ

ফরমালিন – ১-২ ফোটা

পরিশ্রুত পানি – ১০ মিঃলিঃ

অটোজেনাস ভ্যাকসিন তৈরির পদ্ধতিঃ

আঁচিল আক্রান্ত গরুর ত্বক থেকে ৫ গ্রাম আঁচিল কেটে নিন। এরপর নরমাল স্যালাইন ১০ মিঃলিঃ এর সাথে মিশিয়ে মর্টারের সাহায্যে গ্রাইন্ডিং করে তা ফিল্ডার পেপার দ্বারা ছেঁকে নিয়ে ১-২ ফোটা ফরমালিন (Formalin) মিশিয়ে নিন।

উক্ত দ্রবনের সাথে যেকোনো Antibiotic এর পরিশ্রুত পানি ১০ মিঃলিঃ মিশিয়ে দ্রুত মাঝারি ও বড় গরুতে ১০-১২ মিঃলিঃ চামড়ার নিচে দিতে হবে। এভাবে ৭ দিন পরপর ৩ ডোজ দিলে আঁচিল রোগ একেবারে ভাল হয়ে যায়।

অটোজেনাস ভ্যাকসিন প্রিপারেশনের সময় সহযোগী হিসাবে এন্টিহিস্টামিন ও অক্সিট্রেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ইন্জেকশন ব্যবহার করতে পারেন। আঁচিল কাটার পর যদি রক্ত বের হয় তাহলে পটাশের গুড়া তুলার সহিত চেপে ধরলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।

৩য় পদ্ধতিঃ

® Lithium antimony thiomalate 6% গ্রুপের inj: Anthiomat 50ml (Techno Drugs LTD)

বড় ও মাঝারি গরুর জন্য ১ম ডোজ ২০ মিলি। ২য় ডোজ ১৫ মিলি। ৩য় ডোজ ১৫ মিলি। ৪৮ ঘন্টা পরপর গভীর মাংশে তিন চার স্থানে দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় ব্যবহার সম্পুর্ন নিষিদ্ধ।

উপসর্গঃ পা খোড়ানো সহ অন্যন্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

৪র্থ পদ্ধতিঃ

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ

1.Thuja 2.Causticum 3.Antim-Crud

4.Acid-nit এখানে চার প্রকার ঔষধের নাম উল্লেখ করা হলো। আক্রান্তের ধরন ও তীব্রতার উপড় নির্ভর করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করা যেতে পারে।

ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেন এর সংযোগ স্থলে যদি আঁচিল হয় তাহলে 4 নং Acid-nit. ছোট বাছুর গরুতে ৫ ফোটা, মাঝারি ও বড় গরুতে ১০-১৫ ফোটা ঔষধ ২০ মিলি পানির সহিত মিশিয়ে ৭ দিন পরপর খাওয়াতে হবে।

মুখমন্ডলে আচিল উঠলে 2 নং Causticum উপড়ের নিয়মে।

শিং এর গোড়ায় উঠলে এবং যে আচিল নাড়লে ব্যথা পায়, তাহলে 3 নং Antim-Crud. একই নিয়মে খাওয়াতে হবে।

ত্বকের উপরি ভাগে কাঁধে পায়ের গোড়ালিতে উঠলে 1 নং Thuja উল্লেখিত নিয়মে খাওয়াতে হবে। আঁচিল রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি পদ্ধতি গর্ভাবস্থায় সম্পুর্ন নিরাপদ।

এই রোগের নির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত গরুকে সুস্থ গরু থেকে আলাদা রাখতে হয়। যাতে সুস্থ গরু অসুস্থ গরুকে চাটতে না পারে। লক্ষন প্রকাশের সাথেই চিকিৎসা দিলে দ্রুত আঁচিল রোগ ভাল হয়ে যায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫ফেব্রু২০২০