এফ এম ডি বা ক্ষুরা রোগ : করণীয়
দরজায় কড়া নাড়ছে ক্ষুরা রোগ বা জ্বরা বা এফ এম ডি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় আক্রান্ত গরুর খবর আসছে। তাই দ্রুত সাবধানতা জরুরী।
রোগের কারণ :
ক্ষুরা রোগ সাধারণত গরু, ছাগল সহ শক্ত বিভাজিত ক্ষুর বিশিষ্ট কিছু প্রাণীর জন্য একটি প্রানঘাতী সংক্রমণ রোগ। ক্ষুরা রোগ একটি ভাইরাস বাহিত রোগ। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত প্রাণী মারা যেতে পারে। আমাদের দেশে মূলত ৭ টি ভাইরাসের (এ, ও, সি, স্যাট ১, স্যাট ২ স্যাট ৩, এশিয়া ১) কারণে এই রোগটি হতে পারে।
যেভাবে সংক্রমণ হয় :
১. ক্ষুরারোগের ভাইরাস সাধারণত স্বাস প্রশ্বাস, লালা এবং মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
২. খামারে আনা নতুন প্রাণীর মাধ্যমে যে গরুর ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব রেকর্ড রয়েছে অথবা যে অথবা এখনো যে গরুর শরীরে সক্রিয় ভাইরাস বিদ্যমান রয়েছে।
৩. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত প্রাণীর কাছ থেকে আসা ব্যক্তির মাধ্যমে যার শরীরে কাপড়, জুতা বা শরীরের যেকোন অংশে ভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে।
৪. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত প্রাণীর বা খামার থেকে থেকে আনা গোখাদ্য, মাংস, দুধ বা অন্য যেকোন বস্তুর মাধ্যমে।
৫. বাতাসের মাধ্যমে।
ক্ষুরা রোগের লক্ষণ :
প্রাণীতে ক্ষুরা রোগের জীবাণু সংক্রমণের সাধারণত ৩ থেকে ৫ দিন পরে লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রধান লক্ষন গুলো হচ্ছে :
১. প্রাণীর নাক, মুখ, জিহবা, গলা, ক্ষুর, ক্ষুরের সন্ধিতে, ক্ষুরের উপরিভাগে এবং ওলানে ফুসকুড়ি বা বিচি বা গোটা দেখা যায়।
২. শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
৩. মুখে ক্ষতের কারণে খাওয়া কমে যায় অথবা খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
৪. মুখ দিয়ে লালা বের হতে থাকে।
৫. ক্ষুরে ক্ষতের কারণে খুঁড়িয়ে হাটে অথবা হাটতে চায়না।
৬. প্রাণী অবসাদ গ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং নড়াচড়া কমিয়ে দেয়।
৭. ওজন কমে যায় এবং দুধের উৎপাদন কমে যায়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা :
১. অন্য খামার থেকে আনা প্রাণী আলাদা স্থানে রেখে ১৫ দিন মনিটর করে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে খামারে প্রবেশ করানো।
২. অন্য খামার থেকে আনা খাদ্য পনি অথবা অন্য কোন ব্যবহৃত দ্রব্য পটাশের দ্রবণ দিয়ে স্প্রে করে জীবাণু মুক্ত করে খামারে প্রবেশ করানো। অন্য খামার থেকে বা বাইরে থেকে আনা মাংস বা দুধ খামার থেকে দূরে রাখা।
৩. খামারে প্রবেশের পূর্বে পটাশ মিশ্রিত পানিতে পা ধুয়ে এবং সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে গরুতে হাত দেয়া।
৪. অন্য খামার থেকে এসে পরিধানের কাপড় পরিবর্তন করে খামারে প্রবেশ করা।
৫. ভিন্ন ভিন্ন খামারে কাজ করে এমন মানুষ এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের হাত পা ধুয়ে পরিচ্ছন্ন হয়ে খামারে প্রবেশ করানো।
৬. খামারে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা।
৭. বুস্টার ডোজ সহ নিয়মিত টিকা দেয়া।
৮. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং সব সময় গরুর দিকে খেয়াল রাখা।
৯. খামার এবং খামারের পার্শ্ববর্তী পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পটাশের পানি দিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ১ দিন জীবাণুমুক্ত করা।
করনীয়:
আপনার গরুতে ক্ষুরা রোগের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত উপজিলা প্রাণিসম্পদ অফিসে অথবা নিকটস্থ রেজিস্টার্ড প্রাণী স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে যোগাযোগ করুন এবং দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করুন। ক্ষুরা রোগের লক্ষণ গরুর শরীর থেকে চলে যাওয়ার পরে ৩ থেকে ৫ দিন পরেও জীবাণু সক্রিয় থাকে, তাই সুস্থ্যতা পরবর্তী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৩আগস্ট২০