গরুর ক্ষুরা রোগ দ্রুত উপশমে কিছু টিপস

658

এমন কোনো গরুর খামারী নাই যে কোনোদিন খামারে গরুর ক্ষুরা রোগ বা এফ,এম,ডি নিয়ে ভোগেন নাই! এটা গরুর দুগ্ধ উৎপাদন বা মোটা তাজা করণ খামারের জন্য একটি অভিশাপ। আর বাজারে এফ,এম,ডি বা ক্ষুরা রোগের বিভিন্ন ধরণের ভ্যাক্সিন থাকলেও কোল্ডচেইন ঠিকমতো মেনটেইন না করার কারণে বেশীরভাগ ভ্যাক্সিন গুলিরই কার্যক্ষমতা থাকে না অথবা এফ,এম,ডি বা ক্ষুরা রোগের কারণ যে ভাইরাস সেই ভাইরাসের স্ট্রেইন বা ধরন ভিন্ন হওয়ায় ভ্যাক্সিন কার্যকরী হয় না। তার পরেও যদি কোল্ড চেইন টা ঠিকমতো বজায় রাখা যেতো হয়তো ভ্যাক্সিনেশন সফল হতো। যাক এসব কথা, এবার আসল কথায় আসি। আপনার গরুর খামারে গরুর যদি এফ,এম,ডি/ক্ষুরা রোগ হয়েই যায় তাহলে কিভাবে সেটা দ্রুত সারাবেন? এটা দ্রুত সারানোর একটাই উপাই হলো যথাযথ কিউরিং। আমি সাধারণ খামারীদের কথা চিন্তা কিছু টিপ্স দিচ্ছি নীচে যাতে এফ,এম,ডি বা ক্ষুরা রোগটা দ্রুত সেরে যায়।

★ গরুর গায়ে জ্বর আছে কিনা দেখবেন। জ্বর থাকলে তাকে কিটোভেট বা প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট বা বোলাস খাইয়ে দিবেন যাতে তার গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসে। ছোট বাছুরের ক্ষেত্রে নাপা বা এইস সাবসিটর ব্যবহার করতে পারেন পায়ু পথে প্রবেশ করিয়ে জ্বর নামানোর জন্য এবং তার গায়ে ভিজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে দিতে পারেন। একটা কথা মনে রাখবেন যদি বাছুরের গায়ের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায় যেমন ১০৬-১০৮ ডিগ্রি তাহলে বাছুর ভাস্কুলার শকে আক্রান্ত হয়ে মারা মরতে পারে। কাজেই বাছুরের গায়ের তাপমাত্রা সবসময় পর্যবেক্ষণে রাখবেন।

★ গরুর গায়ে যদি জ্বর না থাকে তাহলে সে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করবে না,তার শরীরের ইমিউনিটি ঠিক থাকবে এবং সে কাবু হবে না। তাই জ্বরের ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এখন আমরা যদি দেখি গরু খেতে চাচ্ছে বা মুখেও খাবার নিচ্ছে কিন্তু খেতে পারছে না বা তার মুখ দিয়ে লালা ঝরছে এবং কিছুটা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে তখন বুঝতে হবে তার মুখে ঘা হচ্ছে বা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা কি করবো? আমরা তখন তার মুখের ভিতরের চারি পার্শ্বে এবং জিভে মধু ও সোয়াগা বা এপথোকেয়ার পাউডার লাগিয়ে দিবো। দিনে অন্তত তিনবার এটা করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মধু ও সোহাগা পাওয়া গেলেও এপথোকেয়ার পাউডার টা পাওয়া যায়না। তাই আমরা মধু ও সোহাগার মিশ্রণ টা লাগানোর আগে ফিটকিরির পানি দিয়ে গরুর মুখ গহবর এবং জিভ পরিষ্কার করে নিতে পারি। এটাও ভালো জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে কিন্তু! আর গরুকে একটু নরম খাবার সরবরাহ করতে পারি যাতে সে সহজে খেতে পারে। যেমন কুরা কমিয়ে দিয়ে গমের ভুষি একটু বাড়াতে পারি গরুর খাদ্য তালিকায়।

★ গরুর ক্ষুরায় যদি ঘাঁ হয় সেটা দ্রুত সারাতে হবে। এই ঘাঁ চাটলেই কিন্তু মুখেও ঘাটা ছড়িয়ে পড়ে দ্রুততম সময়ে। কাজেই ঘাঁ সারানোটা খুবই জরুরী! ঘাঁ দ্রুত নিরাময়ের জন্য যা যা করবেন,

প্রথমে কুমকুম গরম পানিতে পটাশ মিশাবেন। তারপর সেই পানি দিয়ে গরুর চার পায়ের ক্ষুরা গুলি ভালো করে পরিষ্কার করবেন। এরপর একটা আইভারমেক্টিন ইঞ্জেকশণের ভিতরের ওষুধ টুকু নিয়ে ঘায়ে ছিটিয়ে দিবেন। যারা আইভারমেক্টিন ইঞ্জেকশন সংগ্রহ বা ব্যাবহার করতে অসমর্থ তারা নারিকেল তেলের সাথে নগুটক্স বা এই জাতীয় পাউডার মিশিয়ে ঘায়ে লাগিয়ে দিবেন। আর সবশেষে নারিকেল তেলের সাথে ঝাঁঝালো গন্ধ বিশিষ্ট কর্পূর মিশিয়ে ক্ষুরা থেকে ক্ষুরার চার ইঞ্চি উপর পর্যন্ত লাগিয়ে দিবেন। এতে মাছি বসবে না ঘায়ে। দিনে অন্তত দুইবার এটা করবেন ঘাঁ সেড়ে উঠা না পর্যন্ত!

একটা টোটকা দেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারীদের জন্য,আসলে আমি নিজেও এটা এপ্লাই করি! রাতে বা সন্ধ্যায় যখন ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুর ক্ষুরা যখন কিউরিং করি তখন একটা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে একটা পেস্ট তৈরী করে গরুর ক্ষুরাতে লাগাই। খুবই সাধারণ একটা পেস্ট।
একটু সরিষার তেলে হলুদ এবং মরিচের গুরা ভেজে তাতে নিমপাতার পেস্ট মিশিয়ে গরুর ক্ষুরার ঘাঁয়ে লাগিয়ে দেই। তিন/চার দিনেই ঘাঁটা কমে যায়! এটা আপনারা করে দেখতে পারেন। আমি ফল পেয়েছি, আপনারাও ইনশাআল্লাহ পাবেন। যেকোনো ঘাঁয়েই এটা আমি লাগিয়ে দেই!
★ এবার আসি ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গরুকে কিভাবে দ্রুত উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে সেই ব্যাপারে। মোটাতাজা বা দুধ উৎপাদন যেটাই হোক ক্ষুরা রোগ প্রায় শেষের দিকে তখনই গরুকে ক্যাটাফজ/ভিটাফজ এই জাতীয় ইঞ্জেকশন দিয়ে দিবেন,জিংক সাপ্লিমেন্টারী দিবেন,সুষম খাদ্য সরবরাহ করবেন।এটা যদি ঠিক ভাবে করেন তাহলে ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত কালে গরুর উৎপাদন বা বৃদ্ধি যতটুকু কমেছিলো তার বেশ খানিকটা পুষিয়ে দিবে!

আপনাদের মধ্যে অনেক অভিজ্ঞ খামারী আছেন যারা কমেন্টে অনেক তথ্য যোগ করে এই লেখাটাকে আরো তথ্যবহুল করে তুলতে পারেন এবং আমি সেটাই আশা করবো।

আমি তো গরু মোটা-তাজা করণে ক্ষুরা রোগকে আশীর্বাদ হিসাবে ধরে নেই! অনেকে মনে করবে লোকটা কি পাগল নাকি! আসলে গরু পালতে গেলে কিছুটা পাগলামিও লাগে! পাগলাটে ষাঁড়ের মতোন!!!

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯নভেম্বর২০২০