গরুর খামার করে কোটিপতি হয়েছেন কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ধামৈচা গ্রামের মোঃ মনিরুজ্জামান। একই সঙ্গে তার খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশ কয়েকজন যুবকের। বর্তমানে তার খামার থেকে প্রতি মাসে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় হয়।
খামারের আয় দিয়ে তৈরি করেছেন বিশাল বাড়ি। দিয়েছেন পুকুর। মেটাচ্ছেন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসারের যাবতীয় খরচ। গরুর খামার বদলে দিয়েছে মনিরুজ্জামানের জীবনচিত্র। তার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই যুবক ওই এলাকার উত্তরকুলে ও সাতবাড়ীয়া আরও দুইটি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন।
মনিরুজ্জামান জানান, ২০০৬ সালে একটি এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মাত্র চারটি গাভী কিনে গড়ে তোলেন খামার। বর্তমানে তার খামারে হলেটেল ফ্রিজিয়াম, অস্ট্রেলিয়ান জার্সি, ইন্ডিয়ান হরিয়ানা, সাইওয়াল জাতের ১২টি বাছুরসহ মোট ৩০টি গরু রয়েছে। এর মাঝে ১২টি গাভী থেকে দৈনিক ১৭০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
এ দুধ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করা হয়। বছরে ষাঁড় ও বাছুর বিক্রি করেও কয়েক লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় হয়। খামারের আয় দিয়ে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করেছেন, যা দিয়ে বাড়ি ও খামারের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করা হয়।
এছাড়া গরুর গোবর থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন। তাছাড়া তার খামার থেকে প্রতি বছর বেশ কয়েকটি ষাঁড় গরু কোরবানির হাটে বিক্রি করা হয়। এবারও কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য একটি ষাঁড় গরু রয়েছে। এটির দাম হাঁকা হয়েছে ৪ লাখ টাকা। এরই মধ্যে ওই ষাঁড়টির দাম উঠেছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, তার খামারে ৩০টি গরুর আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা।
নাঙ্গলকোট কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর বিভিন্ন ব্যবসা করতে গিয়ে লোকসানের ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০০৬ সালে চারটি গাভী দিয়ে বড় মেয়ে প্রীতির নামে প্রীতি ডেইরি ফার্মস নামের একটি গরুর খামার গড়ে তোলেন।
এ খামারের আয় থেকে তিনি ১০৫ শতক সম্পত্তি কেনেন, যার বর্তমান বাজার মূল্য ২ কোটি টাকারও বেশি। মেয়ে লাকসাম নওয়াব ফয়েজুন্নেছা সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীতে ও ছেলে একটি হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করছে।
লাকসাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হারুন রশিদ চৌধুরী জানান, উপজেলার বেশ কয়েকটি খামারের মধ্যে মনিরুজ্জামানের খামারটি প্রথম সারিতে অবস্থান করছে।
মনিরুজ্জামান উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রামের (এনএটিপি) অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তার মতো অবশিষ্ট খামারগুলো উন্নতি করতে পারলে এলাকায় দুধ ও আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা যাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে বড় সহায়ক হতে পারে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ