গরুর পেটফাঁপা একটি সাধারণ সমস্যা। নানা কারণে গরুর পেটফাঁপা হয়ে থাকে। বিশেষ করে খাদ্যে কোনপ্রকার সমস্যা হলে গরুর পেটফাঁপা দেখা দেয়। আসুন জেনে নেয়া যাক গরুর পেটফাঁপা হলে কি উপায়ে সমাধান করা যায়-
ব্লোট বা পেট ফাঁপা কি?
যখন প্রাণী তরুণ, ঘন চারণভূমিতে উচ্চ হারে লিগিউম সমৃদ্ধ ঘাস (ক্লোভার, বা লুসার্ন) খায় ঠিক তখনি রোমন্থক পশু( গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির ব্লোট বা পেট ফাঁপা রোগ দেখা দিতে পাড়ে।
শিম জাতীয় ও দ্রুত বর্ধনশীল কিছু ঘাস বুদ বুদ বা ফেনা সৃষ্টি করে। এই ফেনা রোমিন গঠন হলে তা, রুমেনের গ্যাসকে ছোট ছোট বুদবুদের মধ্যে আটকে ফেলে যার কারণে পশু গ্যাস ঢেকুর দিয়ে বের করতে পারেনা। আর এসবের কারণেই গরুর পেট ফাঁপা দেখা দেয়।
কারণঃ
বেশী পরিমাণে দানাদার খাদ্য খেলে এ সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও লিগিউম জাতীয় অধিক পরিমাণে খেলে পেটে গ্যাস জমে যায়। অপরিপাক বা অস্বাস্থ্যসম্মত কোন খাবার খেলে অথবা খাদ্য নালীতে কোন ব্লক সৃষ্টি হলে এ সমস্যা হতে পারে।
গরুতে ব্লোট:
গরু সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণ প্রদর্শন করতে পারে:
১)বাম পেট এর পরিধি বৃদ্ধি পায়
২) ক্ষুধা মন্দা
৩)নড়াচরা করতে অপারগতা প্রকাশ
৪)কণ্ঠস্বরে বিকৃত হয়
৫)চোখ ফুলে যায়
৬)প্রস্রাব পায়খানা করার জন্য চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।
৭)দ্রুত শ্বাস কার্য চালায়
৮)মুখ খোলা রেখে জিহ্বা বের করে দেয়।
৯)মাটিতে পড়ে যায়, এবং
নাড়ী – ভুরি গ্যাসের চাপে ফুলে যাওয়ার কারণে তা ফুসফুস, হৃদপিন্ডে চাপ প্রদান করে রক্ত চলা চলে বাধা দেয় এতে প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে।
রোগ নির্ণয়ঃ
ইতিহাস ও লক্ষণ সমুহ দেখে এবং পেটে বাড়ি দিলে ডেপ ডেপ শব্দ শুনে রোগ নির্ণয় করা হয়।
গরুর চিকিৎসাঃ
প্রারম্ভিক বা সামান্য ফাঁপা হলেঃ-
এই অবস্থায় এন্টি ব্লোট প্রিপারেসন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ঔষধ খাওয়ানোর পর পশুটিকে নরাচরা করতে উৎসাহিত করতে হবে যাতে করে, এন্টিব্লোট প্রিপারেসন টি ভালভাবে রুমেনের গ্যাসের সাথে মিশে যেতে পারে।
মাঝারি ধরণের আক্রান্ত হলেঃ-
যত দ্রুত পারা যায় একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি ডাক্তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
গরু যদি বেশপরিমাণে গ্যাসের কারণে কাহিল হয়ে যায় তাহলে স্টোমাক টিউব এর মাধ্যমে রুমেন থেকে গ্যাস বের করে দিতে হবে।
গরুকে ডোজ দেওয়া হলে খেয়াল রাখতে হবে যাতে গরু এক জায়গায় স্থির না থাকে প্রয়োজনে গরুকে একটু হাটাতে হবে।
মারাত্মক ভাবে ব্লোট বা ফাঁপা পরিলক্ষিত হলেঃ-
গরুর পেট ফাঁপা শুরু হলে যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস বের করে দিতে হবে।
যদিও চিকিৎসা পদ্ধতি বা কি পরিমাণ , কিভাবে ঔষধ ব্যবহার করতে হয় তা ঔষধের গায়ে লিখা থাকে তারপরও চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়া ভাল।।
মারাত্মক অবস্থায় , সয়াবিন তেল ২৫০-৫০০ মিলি লিটার বা প্যারাফিন তেল ১০০-১৫০ মিলি লিটার খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
অনেকে সময় ট্রকার ও কেনুলা করায় যথেষ্ট হয় না। সে জন্য পরিষ্কার ও জীবাণু মুক্ত ধারালো ছুরি দিয়ে ১০ থেকে ২০ সেঃমি এর মত কাটতে হবে এবং ফ্রদি উপাদান গুলি হাত দিয়ে বের করে ফেলতে হবে।
অতি মারাত্মক অবস্থায়, একজন ভেটেরিনারিয়ানের জন্য অপেক্ষায় না থেকে মালিকে নিজ উদ্দোগ করতে হবে। এর পর ভেটেরিনারি চিকিৎসক এর সাহায্য নিয়ে পেট পরিষ্কার ও সেলাই করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭ডিসেম্বর২০২০