ফিডের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে ছোট ও মাঝারি খামারিদের বিকল্প খাদ্য অনুসন্ধান করা জরুরি হয়ে উঠেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মসুরের স্ট্র (ডাল সংগ্রহের পর শুকনো গাছ) একটি উচ্চমানের পশুখাদ্য। এতে অপরিশোধিত প্রোটিনের মাত্রা ৯.২%। তবে উচ্চ ক্রুড ফাইবার (সিএফ- ৩৯.৬%) এবং ক্যালসিয়াম-ফসফরাস অনুপাত ১০:১।
তবে ইউরিয়া অ্যামোনিয়েশনের মাধ্যমে মসুরের স্ট্রর হজমঅযোগ্য ফাইবারের পরিমাণ কমানো যায়। সেই সঙ্গে হজমযোগ্য ক্রুড প্রোটিন (ডিসিপি), নাইট্রোজেন মুক্ত এক্সট্র্যাক্ট (এনএফই) এবং মোট হজমযোগ্য পুষ্টি (টিডিএন) বাড়ানো যায়। এছাড়া ইউরিয়া অ্যামোনিয়েশন মুসর স্ট্রয়ের নিউট্রাল এবং অ্যাসিড ডিটারজেন্ট ফাইবারের হজমযোগ্যতাও বাড়িয়ে দেয়।
পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছেই। সেই সঙ্গে মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমানও। আজও রুমিন্যান্ট প্রাণীগুলোকে নির্দিষ্ট কিছু খাবারই দেওয়া হয়। আধুনিক কৃষিতে উল্লেখযোগ্য অংশ শুধু গবাদিপশুর খাদ্য উৎপাদন দখল করে আছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে, বর্ধিত জনসংখ্যা শস্যের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করবে, তাতে খামারের পশুদের জন্য নতুন নতুন খাদ্য উৎস অনুসন্ধান ছাড়া উপায় থাকবে না।
পাশাপাশি বিশ্বের উচ্চমানের প্রাণিজ প্রোটিনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বিশেষ করে ভেড়া ও ছাগল পালন ব্যাপকভাবে বাড়বে। কিন্তু এর বিপরীতে চারণভূমি কমছে এবং খাদ্যশস্যের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফিড এবং চারণভূমির চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে মারাত্মক ব্যবধান তৈরি হয়েছে। ফিড কোম্পানির ওপর খামারিরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। সেক্ষেত্রে বিকল্প হয়ে উঠতে পারে খাদ্যশস্য ও ডাল জাতীয় ফসলের স্ট্র।
মসুর ডাল বিশ্বের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ডালের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলে এবং ভারতের খাদ্য তালিকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ এই ডাল। এই মসুর ডাল ফসলের একটি উপজাত হচ্ছে এর শুকনো গাছ, বা মসুরের স্ট্র। এটি কিন্তু প্রচলিত পশুখাদ্য। গ্রামের মানুষ এটি প্রাচীনকাল থেকেই গরুকে খাওয়ান। গরুও খুব মজা করে খায়।
মসুরের স্ট্র একটি পুষ্টিকর ফিড। নিয়মিত ব্যবহৃত শস্যের স্ট্রয়ের (ধান, গম, সরিষা, ভুট্টার খড়) তুলনায় এটি পুষ্টিমানে এবং হজমযোগ্যতায় এগিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, মসুর ডাল লিগিউম জাতীয় ফসল হওয়ার কারণে এমনিতেই এতে প্রোটিনের পরিমান বেশি। তাছাড়া এই স্ট্রর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানা যায় না।
তবে পশুখাদ্য হিসেবে অন্যান্য শস্যের খড়ের মতো মসুরের স্ট্র ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা হলো, এতে রয়েছে উচ্চ পরিমানে লিগনিফায়েড ফাইবার। এই ফাইবার, নাইট্রোজেন (N) উৎসের সঙ্গে সেলুলোজ ও হেমিসেলুলোজের সংযোগকে বাধা দিয়ে সর্বোচ্চ মাইক্রোবিয়াল প্রোটিন সংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত করে।
কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে লিগনিনের এই জটিল বন্ধন ফিজিক্যাল বা রাসায়নিক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ভেঙে দেওয়া যেতে পারে। এই কাজের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ, কার্যকর এবং ব্যবহারিক পদ্ধতি হলো- ইউরিয়া অ্যামোনিয়েশন, পরিপূরক জরুরি পুষ্টি উপাদান ব্যবহার করা, বা এই দুই পদ্ধতির সংমিশ্রণ।
ইউরিয়া অ্যামোনিয়েশনের পদ্ধতি
ইউরিয়া অ্যামোনিয়েটেড মসুর স্ট্র (এএলএস) তৈরির জন্য স্ট্রর সঙ্গে ৫০% আর্দ্রতা (এক কেজি স্ট্র-এর সঙ্গে আধা লিটার পানি) এবং ৪% ইউরিয়া মেশাতে হবে। এরপর মিশ্রণটি এয়ারটাইট (বাতাস যেন না ঢুকতে পারে) পাত্রে (পলিথিনের ব্যাগ, ড্রাম) ৪ সপ্তাহ রাখতে হবে। এভাবে ট্রিট করা মসুর স্ট্র খাওয়ানোর আগে অবশ্যই কিছুক্ষণের জন্য খোলা পাত্রে রাখতে হবে। এতে অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। এরপর গরুর সামনে দিতে হবে। এটি বাছুর, মহিষ, ছাগল এবং ভেড়াকেও দেওয়া যাবে।
মিশ্র রেশন তৈরি
ইউরিয়া দিয়ে ট্রিট করা মসুর স্ট্র দিয়ে রেশন তৈরি করতে চাইলে ভুট্টা ভাঙ্গা মেশানো যেতে পারে।এই ফিড খাওয়ানো সেভাবে কোনো নিয়ম নেই। মসুর স্ট্র ট্রিট করার সময় ইউরিয়ার সঙ্গে অন্যান্য জরুরি পুষ্টি উপাদান মিশিয়ে ফিড তৈরি করলে গরুকে ইচ্ছেমতো খেতে দেওয়া যাবে। আর শুধু ইউরিয়া দিয়ে ট্রিট করলে ইউএমএস যেভাবে খাওয়ায় এটিও সেভাবে খাওয়াতে হবে
তথ্যসূত্রঃ কর্ষণ
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৬জুন ২০২১