ভারতীয় গরু পাচার ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে বিএসএফ!

1201

ভঅরতীয়-গরু
বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর, পশ্চিমবঙ্গ থেকে গরুপাচারের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে-এই অভিযোগ এনে গবাদি পশু পাচার রুখতে এবার পদক্ষেপ করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচার রুখতে সীমান্ত বেশি জওয়ান মোতায়েন করার পাশাপাশি নৌপথে অতিরিক্ত বোট নামানোসহ নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এনডিটিভি পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএসএফের এক পদস্থ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভি জানায়, “সীমান্ত বরাবর নৌপথে কয়েক শ’ গরু পাচার হচ্ছে। আমরা অনেক গরু আটকেছি, যেগুলোর গলায় কলা গাছ বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশ সীমান্তের পাচারাকীররা সহজেই সেগুলো নিয়ে নিতে পারে”।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১,২০০ গরু ও মহিষ আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফ কর্মকর্তারা। কোরবানি ঈদের কারণে, প্রতিটি গরু ও মহিষের দাম ৮০,০০০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৪ হাজার রুপিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএসএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে পরিমাণ গরু পাচার হয়, তার এক তৃতীয়াংশ গবাদি পশু আটক করা গেছে। সেই কারণেই সীমান্ত অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন, মোটর বোটের সংখ্যা বাড়ানো এবং গরু পাচার রুখতে এবং নজরদারিতে জোর দেয়া হয়েছে বাহিনীর তরফে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গরু পাচারের এই বাড়াবাড়ন্তে সীমান্তে পাচারকারীদের সঙ্গে বিএসএফ জওয়ানদের প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। যদিও এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতি নয়, এমনই হাতিয়ারই ব্যবহার করছন জওয়ানরা।

গত কয়েক সপ্তাহে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ জন বিএসএফ জওয়ান পাচারকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার আঙ্গরাইল ফাঁড়িতে, মধ্যরাতে পাচারকারীদের ছোড়া বোমায় হাত খোয়া গেছে এক জওয়ানের।

প্রতিবেদেন বলা হয়েছে, বাহিনীর দক্ষিণবঙ্গের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জওয়ানদের আগ্রাসীভাবে থাকতে বলা হয়েছে, এবং যাতে গরু পাচারের সংখ্যা কমানো যায়, সেদিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাচারের ওপর নজরদারির জন্য বাহিনীর জওয়ানদের অ্যাডিশনাল থার্মাল ইমেজার পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

পশ্চিমবঙ্গের ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারে বিভক্ত। সর্বমোট ৪,০৯৬ কিলোমিটারের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের রয়েছে ৯১৫ কিলোমিটার।

ভারতীয় মিডিয়াটিতেব বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিদিন রাতে পাহাঘাটি, ফুলতলা, লালপুর, ধানগ্রা, ধুলিয়ান, ছোটোশিবপুর, বড়শিবপুর, ডিস্কোমোকর, দৌলতপুরের মতো গঙ্গার তীরবর্তী গ্রাম থেকে অনেকগুলিতে গরুকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।

পুলিশ ও বিএসএফের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই নৌপথে গরু পাচার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, সীমান্তের অন্যান্য অপরাধ থেকে বিএসএফের এখন প্রধান নজরদারি পৌঁছেছে গরু পাচারে।

সীমান্তে নজরদারিতে সহায়তার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে দেখা করেছেন বিএসএফের কম্যান্ডার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তার কথায়, “এই অপরাধ রোখার একমাত্র রাস্তা, বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর গরু বোঝাই ট্রাকগুলিকে আটকানো। এইগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশকেও”। তিনি আরো বলেন, “বহু বছর ধরে যে সমস্ত পাচারকারী গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধেও ভারতের তরফে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে, তারা বাংলাদেশী পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই ধরণের অপরাধ করে চলে”। সূত্র: এনডিটিভি