চলতি মৌসুমে তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে বোরো ক্ষেত। প্রতিদিন সেচের পানি দিতে হচ্ছে ক্ষেতে। সেচ দিতে দিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের জমি। এতে চাষ খরচ বেড়ে যাচ্ছে দিগুণ থেকে তিনগুণ। অন্যদিকে ধানক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কৃষকরা অপরিপক্ব ধানক্ষেত কেটে ফেলছেন। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূরক সেচ দিয়ে বোরো ধান টিকিয়ে রাখার পরামর্শ কৃষি বিভাগের।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের হিসেব মতে, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। তবে চাষ হয়েছে ৮ হাজার ২৮০ হেক্টর ধান। বর্তমানে ধান সিঁকি ভাগ পেকেছে। আবার অনেক এলাকায় ধানক্ষেত অর্ধ পরিপক্ব। এমন এক সময় খরার কবলে পড়েছে বোরো আবাদ। তীব্র তাপদাহে ধানের জমির মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে। ধানক্ষেত পরিচর্যায় কৃষি অফিস সব সময় সেচসহ নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, জমিতে এখন প্রতিদিন সেচ দেয়া লাগছে। এদিকে অতি তাপদাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিনে পানি উঠছে কম। ফলে সময় বেশি লাগায় এক লিটার ডিজেলের পরিবর্তে কোন কোন জমিতে প্রতিদিন দুই লিটার করে ডিজেল খরচ হচ্ছে। এতে বোরো ধান চাষের উৎপাদন খরচ বেড়ে হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। ফলে এবার বোরো চাষে লোকসানের আশঙ্কা করছে চাষিরা। তাই ক্ষেতের ধান পরিপক্ব হওয়ার আগেই অনেকেই কেটে ধানক্ষেত কেটে ফেলছেন।
সহড়াবাড়িয়া গ্রামের ধানচাষি গোলাম কিবরিয়া জানান, প্রচণ্ড খরায় একদিকে যেমন ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। বালাইনাশক ব্যবহারেও কোনো কাজ হচ্ছে না। মাস খানেক আগে যে জমিতে সপ্তাহে দুদিন সেচ দিতে হতো, সেই জমিতে এখন প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে অনেক গুণ। চাষিদের দাবি লোকসান থেকে বাঁচাতে ধানের দাম যেন মণ প্রতি ১৫ থেকে ১৬শ টাকা থাকে। তা না হলে অনেক লোকসান হয়ে যাবে।
বালিয়াঘাট গ্রামের চাষি নাহারুল জানান, রোদে ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচ দিয়ে টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কাঁচা ধান কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন।
গাংনীর জুগির গোফা গ্রামের কৃষক আবুল হাসেম জানান, ধান আবাদ করে এবার লোকসান গুনতে হবে। সেচের পানিতে এবার উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরোপুরি ধান পাকতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। প্রতিদিন পানি দেয়া সম্ভব না। তাই অপরিপক্ব ধান কেটে নিচ্ছেন তিনি। একই কথা জানালেন বাথানপাড়ার আব্দুল মান্নান। তার আড়াই বিঘা জমির ধান বাধ্য হয়ে কেটে ফেলেছেন।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, এবার দীর্ঘদিন খরার ফলে জমির মাঝে মাঝে কিছু শিস মরে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জমিতে সেচ দিয়ে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি জমিয়ে রাখার এবং পোকামাকড় দমনে কীটানাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।