অল্প পরিশ্রম আর স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় বীজ উৎপাদনে ঝুঁকছেন মেহেরপুরের গাংনীর চাষিরা। সেই সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সবজি চাষ। সবজি চাষের পাশাপাশি উন্নত মানের বীজ উৎপাদনে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ।
বীজ উৎপাদনকারী কয়েকজন চাষির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সরকারি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও কয়েকটি বেসরকারি সবজি বীজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, কলমিশাক, ভুটাংশাক, অলতাপাটি, দেশি জাতীয় আরএন শাক, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউ, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির বীজ উৎপাদন করছেন কয়েক হাজার চাষি। অনেকে আবার নিজ উদ্যোগে চাষ করছেন। বীজ উৎপাদন করে সবজি অনুযায়ী একরপ্রতি ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ পান কৃষকরা। গাংনী উপজেলায় চলতি মৌসুমে অন্তত ৫৫০ হেক্টর জমিতে বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, ভাটপাড়া, নওপাড়া, মাইলমারী, ধলা, পুড়াপাড়া, গাঁড়াডোবসহ বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠে উৎপাদিত হচ্ছে বীজ। বিএডিসি, অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এসিআই), লাল তীর বীজ কোম্পানি, ব্র্যাক বীজ কোম্পানি, মেটাল, কৃষিবিদ ও ইস্পাহানি বীজ কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, জেলায় প্রায় দেড় হাজার কৃষক সরাসরি বীজ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় এ চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত বীজ কিনে নেয় কোম্পানিগুলো। তবে চাষিরা এখন কোম্পানিগুলোর বাইরে খোলাবাজারেও বিক্রি করে থাকেন তাদের বীজ।
সাহারবাটি গ্রামের বীজচাষি গোলাম কিবরিয়া, হুদা, আব্দুল কুদ্দুছ ও লাভলু হোসেন জানান, খাদ্যশস্য আবাদ করে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। তাই বিভিন্ন সবজির বীজের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। বিভিন্ন চাষের তুলনায় বীজ চাষে লাভ বেশি। এক বিঘা লালশাক করতে খরচ হয় চার হাজার টাকা। আর বীজ উৎপাদন হয় সাত-আট মণ। বিক্রি হয় দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা মণ। পুঁইশাকে খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকায় এবং বীজ বিক্রি হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকায়।
বিএডিসি আমঝুপি বীজ খামারের উপ-পরিচালক গোলক নাথ বণিক বলেন, কৃষিনির্ভর জেলা মেহেরপুরের চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের সবজিবীজের চাষ। আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে চলতি রবি মৌসুমে ছয় একর জমিতে পালংশাক, চার একর জমিতে লালশাক, ছয় একর জমিতে কলমীশাক, আড়াই একর জমিতে শিম, চার একর জমিতে বেগুন, সাড়ে চার একর জমিতে টমেটো, এক একর জমিতে মটরশুঁটি ও আধা একর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার বীজ চাষ করা হয়েছে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন চাষিদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক বীজ উৎপাদনকারী রয়েছে।